করাঙ্গী নিউজ
স্বাগতম করাঙ্গী নিউজ নিউজপোর্টালে। ১৫ বছর ধরে সফলতার সাথে নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন করে আসছে করাঙ্গী নিউজ। দেশ বিদেশের সব খবর পেতে সাথে থাকুন আমাদের। বিজ্ঞাপন দেয়ার জন‌্য যোগাযোগ করুন ০১৮৫৫৫০৭২৩৪ নাম্বারে।

শিক্ষার্থীর মাঝে আলো জ্বালিয়েছিলেন আব্দুর নুর স্যার

  • সংবাদ প্রকাশের সময়: বুধবার, ২৩ মার্চ, ২০২২

মানুষ হওয়ার মন্ত্র একমাত্র শিক্ষকের ভেতরেই থাকে। শিক্ষক বেঁচে থাকেন শিক্ষার্থীর মধ্যে। এই গর্বটুকু নিয়েই প্রায় ৩৩ বছর শিক্ষকতা করে যান শ্রদ্ধেয় শিক্ষক আলহাজ্ব মো. আব্দুন নূর। তিনি মাধবপুর উপজেলার গোবিন্দপুর সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক।

 

জন্ম : আলহাজ্ব মো. আব্দুন নূর ১৯৪৯ সালের ১৩ জানুয়ারী তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তানের জেলা সিলেট এর অধিন বর্তমানে হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর থানার বানিয়াপাড়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা-মায়ের পরিবারে ভাই-বোন ৪ জন । ভাই বোনদের মধ্যে মো. আব্দুন নূর সবার বড়।

শিক্ষাজীবন :  মো. আব্দুন নূর ১৯৫৭ সালে কাশিমপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেণী পাশ করেন। তারপর চৌমুহনী খুর্শেদ হাইস্কুল থেকে ১৯৬৩ সালে এসএসসি ( ২য় বিভাগে ) পাশ করেন । ১৯৬৫ সালে হবিগঞ্জ বৃন্দাবন কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। ১৯৬৮ সালে একই কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন।  ১৯৭৩-৭৪ সালে কুমিল্লা শিক্ষক মহাবিদ্যালয় থেকে বিএড উচ্চতর ২য়  বিভাগে পাশ করেন।

 

কর্মজীবন : শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মো. আব্দুন নূর ১৯৬৮ সালে বি.এ পরীক্ষা দেওয়ার পর চৌমুহনী খুর্শেদ উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। তারপর ১৯৬৮ সালে আওলিয়াবাদ রাম কেশব উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসাবে যোগদান। তিনি যোগদানের পূর্বে বিদ্যালয়টি ছিল নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে বিদ্যালয়টি উচ্চ বিদ্যালয়ে পরিণত করেন এই শিক্ষক। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধ চলাকালীন তিন মাস তারা ইন্ডিয়াতে চলে যান। সেখানে বাদলঘাট ক্যাম্পের ইন্ডিয়ান রেডকোর্স সোসাইটির সভাপতি ও সুপার ভাইজার ছিলেন আব্দুন নূর। সেখানে বাদলঘাট ইভাকুই স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসাবে শিক্ষকতাও করেন। যা শরণার্থীদের জন্য তৈরী করা হয়েছিল।

১৯৭৩-৭৪ সালে কুমিল্লা শিক্ষক মহাবিদ্যালয় থেকে বি,এড উচ্চতর ও ২য়  বিভাগে পাশ করেন।  ১৯৭৮ সালের ১২ জুলাই পি,এস,সি পেইচ করে হবিগঞ্জ জেলার গোবিন্দপুর সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে ইংরেজী সহকারী শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। সেখানে সহকারী প্রধান শিক্ষক ও পরবর্তীতে প্রধান শিক্ষক হিসাবে উন্নীত হন। সেই সময়ে বেসরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের (ডিজি) এর প্রতিনিধি হিসাবে নিয়োগ বিভাগে কাজ করেন এই গুণী শিক্ষক।

পারিবারিক জীবন : ১৯৭২ সালের ২২ নভেম্বর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হাজী লুৎফুর রহমান সাহেবের ২য় মেয়ে মোছা. জাহানারা বেগমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন আব্দুন নূর। এই শিক্ষক এক ছেলে ও  তিন মেয়ের জনক। ছেলে মো. শামসুল আলম ‘স্টার ফরসোলিন’ কোম্পানীতে চাকরী করেন। ১ম মেয়ে মোছা. নাজনীন আক্তার, ২য় মেয়ে ইয়াসমিন আক্তার, ৩য় মেয়ে শারমিন আক্তার। তাদের সবাইরই ছেলে-মেয়ে আছে।

২৮ বছর একই বিদ্যালয়ে চাকরী করে ২০০৬ সালে এলপিআর এ চলে যান শ্রদ্ধেয় শিক্ষক আব্দুন নূর। তারপর ২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসে প্রধান শিক্ষক পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। একই বছর তিনি সস্ত্রীক হজ্বে চলে যান। ২০০৮ সালের ১৩ জানুয়ারি হজ্ব থেকে দেশে ফিরেন।

হজ্ব থেকে আসার পর দীর্ঘ ৫ বছর বাড়িতে বসা ছিলেন আব্দুন নূর। তারপর নিকটবর্তী একটা স্কুল তালিবপুর আহছানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের অনুরোধক্রমে সেখানে অবৈতনিক (Honorary) শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। সেখানে ৫ বছর শিক্ষকতা করেন। পরবর্তীতে এই শিক্ষকের পিত্তে পাথর হয়ে যায়। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তালিবপুর স্কুলে যাওয়া-আসা বন্ধ করে দেন।

গুনী এই শিক্ষক ২০২২ সালে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের নিয়ে কাজ করা হবিগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের স্বনামধন্য শিক্ষক সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার কৃতি সন্তন জনাব টি, আলী স্যারের নামে প্রতিষ্ঠিত যুক্তরাজ্য ভিত্তিক চ্যারেটি সংস্থা টি,আলী স্যার ফাউন্ডেশনের জরিপে মাধবপুর উপজেলার আদর্শ শিক্ষকের সম্মাননার স্বীকৃতি হিসেবে টি, আলী স্যার পদকে ভুষিত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, ফাউন্ডেশন হবিগঞ্জ জেলার নয় উপজেলার ১৮ জন আদর্শ অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষককে পদক দেয়ার পাশাপাশি তাদের জীবনী ধারাবাহিকভাবে লিখছেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি টি, আলী স্যারের পুত্র বৃটেনের জনপ্রিয় চ্যানেল এস টেলিভিশনের সাংবাদিক ফয়সল আহমদ (রুহেল)। পদকপ্রাপ্ত শিক্ষকদের মধ্যে থেকে আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে থাকা ৫ জন শিক্ষককে আর্থিক সহযোগিতাও দেবে সংস্থাটি।

জীবন ঘড়ি :  এই গুণী শিক্ষক আলহাজ্ব আব্দুন নূর মহৎ কর্ম দিয়ে অসংখ্য শিক্ষার্থীর মাঝে আলো জ্বালিয়েছিলেন। পেশায় ও কর্তব্য পালনে আব্দুন নূর ছিলেন আদর্শবান, সত্যপ্রিয়। তাঁর শিক্ষার্থীদের কাছে ছিলেন জ্ঞানের উৎস, আনন্দের ভান্ডার। পিত্তে পাথর হয়ে যাওয়ায় এই শিক্ষক ২০১৭ সালের ৪টা এপ্রিল থেকে বাসায় অসুস্থ অবস্থায় বিশ্রামরত আছেন। এই শিক্ষকের পেছনে ফেলে আসা সোনালী দিনগুলোর অনেক স্মৃতিই যেন বিস্মৃতির অতল গহ্বরে হারিয়ে গেছে। আসলে এরই নাম জীবন ঘড়ি। স্যার সুস্থ হয়ে উঠেন এ দোয়া করি । আমরা তার দীর্ঘায়ু
কামনা করছি ।

লেখক:

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো সংবাদ