রফিকুল হাসান চৌধুরী তুহিন, মিশিগান (মিশিগান)আমেরিকা থেকে:
বাংলাদেশী ও অন্যান্য মুসলিম জনপ্রতিনিধি, কমিউনিটি এক্টিভিটিজ আর বৃহৎ মুসলিম জনগোষ্টির সংখ্যা নিয়ে আমেরিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যে বসবাসরত প্রবাসী নারীদের দীর্ঘ চেষ্টা ও প্রত্যাশার ফসল ‘বিশ্ব হিজাব দিবস’ এবার মিশিগান অঙ্গরাজ্যেও পালিত হবে.এদিকে এই স্বীকৃতি পাওয়ায় মিশিগানের ঘরে ঘরে নারীরা আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠেছেন | চলছে মিষ্টি বিতরণ ও হাতে তৈরী নানা স্বুসাদু খাবার খাওয়ার হিড়িক.
আমেরিকার কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে বিশ্ব হিজাব দিবস ২০১৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রতিবছর পালিত হচ্ছে | তবে মিশিগান অঙ্গরাজ্যে সরকারিভাবে এই দিবসটি পালন হচ্ছিল না.
গত মঙ্গলবার এই দিবসটি ‘বিশ্ব হিজাব দিবস হিসেবে পালিত হয় | এদিকে ঐদিন দিবসটি পালনের আগে গত বৃহস্পতিবার সরকারিভাবে মিশিগান অঙ্গরাজ্যের রাজ্য সভায় (পার্লামেন্ট) সিনেটের স্টেফানি চ্যাং এর (ডেমোক্র্যাট-ডেট্রয়েট) উপস্থাপিত এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব কণ্ঠ ভোটে পাশ হয় | সেই সাথে প্রতিবছর পূর্বের মাসের সাথে মিল রেখে মঙ্গলবারের সাথে সমন্বয় সাপেক্ষে তারিখ করে সে অনুযায়ী মিশিগান অঙ্গরাজ্যেও এখন থেকে বিশ্ব হিজাব দিবস’কে স্বীকৃতি দিয়ে তা পালনের সিদ্ধান্ত হয়। এতে করে এই রাজ্যের নারীদের দীর্ঘ দিনের দাবির বাস্তবায়ন ঘটলো.
বলাবাহুল্য,মিশিগান অঙ্গরাজ্যে ওই দাবি নিয়ে দীর্ঘ দিন যাবৎ নানাভাবে প্রচারণা, লবিং, দেন-দরবার ও চিঠি চালাচালি করে আসছিলেন বাংলাদেশি বংশোভূত জননন্দিত ব্যক্তিত্ব আমেরিকার নাগরিক কমিউনিটি এক্টিভিটিজ রেবেকা ইসলাম | রেবেকা ইসলাম জনকণ্ঠকে জানান, হিজাব পড়া নারীদের পছন্দ ও ধর্মীয় আবেগের বিষয় | এছাড়া এটি ব্যক্তি স্বাধীনতার প্রতীকও বটে | তিনি এও বলেন, এটি এমন একটি বার্তা, যা আমেরিকান মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ ও আমেরিকা বাংলাদেশ পাকিস্তানি ইয়েমেনি সাধারণ নারীরা এই হিজাব দিবস মিশিগানেও পালনের জন্য সরকারের নিকট তুলে ধরা এবং সেই সাথে দ্রুত এই দিবস পালনের স্বীকৃতি দিতে তাকে সমর্থন দিয়ে এগিয়ে এসেছেন | এই লড়াইয়ে থেকেছেন পাশে | এপিআইএ ভোট-এমআই-এর (ঐতিহ্যবাহী পর্দা) নির্বাহী পরিচালক রেবেকা ইসলাম বলেন, শুধু ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নয় ব্যক্তিগত আবেগ অনুভূতি পছন্দের দিক থেকেও একজন নারীর চুল, দেহ ঢেকে এবং নিরাপদ রাখতে সক্ষম এই হিজাব। এতে করে এই হিজাব একজন নারীর ধর্মীয় বিধিনিষেধ ও আত্মমর্যাদার পাশাপাশি সমাজে সম্মান বাড়ায় | সেই সাথে এই হিজাব দ্বারা অশ্লীলতা ও অপরাধমূলক কর্মকান্ডকে নিরুৎসাহিত করাও সম্ভব. মিশিগান কমিউনিটি এক্টিভিটিজ এর অন্যতম নেতা নাজেল হুদা এই হিজাব দিবস পালনের স্বীকৃতি রাজ্যসভায় পাশ হওয়ায় সকল সিনেটর,রেবেকা ইসলামকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান.
রেবেকা ইসলাম মিশিগানের স্টার্লিং হাইটসের বাসিন্দা. তবে তিনি এই অঙ্গরাজ্যের হেমট্রামিক সিটিতেই শৈশব থেকে বেড়ে উঠেছেন.আর এই হেমট্রামিক, ডেট্রয়েট এলাকাতেই আমেরিকানদের পাশাপাশি মুসলিমদের একটি বৃহৎ অংশ দীর্ঘদন যাবৎ বসবাস করছেন | এখানে রয়েছে আনাচে কানাচে অসংখ্য মসজিদ | প্রকাশ্যে মধুর আজানের ধ্বনি শুনতে পান মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত বাংলাদেশী সহ অন্যন্য দেশীয় মুসলিমরা | এমন অবস্থান থেকেই রেবেকা ইসলামের মাধ্যমে মূলত বাংলাদেশীরাই প্রথম এই হিজাব দিবস পালনের জন্য দাবি তোলেন | ফলে রেবেকা ইসলাম বিষয়টি নিয়ে সিনেটর চ্যাংয়ের সাথে কথা বলেন ৷ সেই থেকে হাজারো মুসলিম নারী হিজাব পরে এতদিন বেসিরকারীভাবে দিবসটি পালন করেন। এ ক্ষেত্রে অনেক অমুসলিমরাও তাতে সমর্থন দেন.
ডেমোক্রেট লিডার সিনেটর চ্যাং বলেছেন, হিজাব পরিধান এবং মুসলিম মহিলাদের সাথে সংহতি প্রকাশ করার জন্য ওই সিদ্ধান্ত সর্বস্তরের নারীদের জন্য এটা একটা উন্মুক্ত আমন্ত্রণ। “সংস্কৃতি ও বিশ্বাস ভাগ করে নিয়ে একে অপরকে জানা, একে অপরকে বোঝার জন্যই মূলত এই দিবসকে সরকারিভাবে স্বীকৃতি দেয়ার এটি একটি মহৎ উদ্দ্যেগ | তিনি বিশ্ব হিজাব দিবস পালনের মাধ্যমে ইসলামিক বিশ্বাস এবং অনুশীলনের সার্বজনীন বোঝা পড়া এবং আমাদের সমাজে একটি শক্তিশালী সাম্প্রদায়িক
বন্ধন গড়ে তোলারও আহ্বান জানান ।
নিউইয়র্ক সিটি বিগত ১০ বছর ধরে এই দিবসটি পালন করে বর্তমানে বিশ্বব্যাপী এই দিবসটি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল নারীরা উদযাপন করছে।
এদিকে মুসলিম শুধু নয়,বরং অন্যান্য সম্প্রদায়ের নারীদের হিজাব পরিধানের বিষয়টি অমুসলিম নারীদেরকেও এখন বেশি বেশি আকৃষ্ট করেছে।
এদিকে ওই প্রস্তাব পাশ হওয়াকালে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সভার মেম্বার পদ্মা কুপ্পা (ডেমোক্র্যাট-ট্রয়) সকল প্রতিনিধির পক্ষ থেকে “এপিআইএ ভোট-এমআই ডিরেক্টর রেবেকা ইসলাম, তার পরিবার সদস্য এবং আমার সহ-সভাপতি (এশিয়ান প্যাসিফিক আমেরিকান লেজিসলেটিভ ককাস) সিনেটর চ্যাংয়ের দ্বারা প্রবর্তিত বিশ্ব হিজাব দিবস পালনের স্বীকৃতি প্রদানের প্রস্তাব পাশ হওয়ায় তাদের সাথে আসা দর্শকদেরকেও করতালি ও হাত নেড়ে সম্মান প্রদর্শন করেন ।
২০১৩ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বসবাসরত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নাজমা খানের হাত ধরেই মূলত ওই হিজাব দিবসের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছিল। বর্তমানে প্রায় ১৫০ দেশে দিবসটি পালিত হয়।