• Youtube
  • English Version
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৪৬ পূর্বাহ্ন

করাঙ্গী নিউজ
স্বাগতম করাঙ্গী নিউজ নিউজপোর্টালে। ১৫ বছর ধরে সফলতার সাথে নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন করে আসছে করাঙ্গী নিউজ। দেশ বিদেশের সব খবর পেতে সাথে থাকুন আমাদের। বিজ্ঞাপন দেয়ার জন‌্য যোগাযোগ করুন ০১৮৫৫৫০৭২৩৪ নাম্বারে।

নেতা একটি ভিশনের নাম

  • সংবাদ প্রকাশের সময়: রবিবার, ১ আগস্ট, ২০২১

নুরুল আমিন শাহজাহান: নেতা মানে – নিজেকে অপরের তরে বিলিয়ে দেওয়ার অপর নাম। নেতা মানে – সত্য ও আদর্শের উপর অটল দাড়িয়ে থাকা এক দৈত্যকার জীবন্ত মুর্তি।

একটা সময়ে নেতা নামক শব্দটি সবার কাছে সমান ভাবে শ্রদ্ধা ও সম্মানে সমাদৃত ছিল। কালের বিবর্তনের সাথে সাথে শ্রদ্ধা ও সম্মানের জায়গাটি বিলীন হতে চলছে। কারণ, আমাদের দেশের সিংহভাগ নেতারা তাদের ঐ আদর্শের জায়গায় দাঁড়িয়ে নেই। কেন নেই? এমন প্রশ্নের শতশত জবাব বের হয়ে আসবে। লোভ-লালসা, ক্ষমতা, স্বার্থপরতা, তৈল-মর্দন, পদ-পদবী লোভ ইত্যাদি-ইত্যাদি। এসব মোহ গ্রাস করে রেখেছে নেতা বা নেতৃত্বের ঐতিহ্যকে। আগে লোকমুখে শুনতাম-
“জমিদার নেতা হয়ে – ভিখারি হয়ে যেত”। আর
এখন ভিখারি নেতা হয়ে – জমিদার বণে যায়।
তবে এ কথা সত্য-
“যতদিন তুমি নেবে – ততদিন তুমি লোভী
আর যতদিন তুমি দিবে – ততদিন তুমি নেতা”।
অপর দিকে – নেতা কোনো বিশেষ ব্যক্তির নাম নয়, নেতা হচ্ছে অনেকগুলো মানুষের যোগফল। নেতা কোনো সাফল্যের নাম নয়, নেতা হচ্ছে স্বার্থকতার নাম। নেতা হওয়ার অন্যতম গুন হচ্ছে- “তুমি কাউকে মানবে না, মানবে শুধু নিজেকে, নিজের বিবেককে, নিজের বিচার বুদ্ধিকে”। এমন প্রতিবাদী মনোভাবই নেতৃত্বের বীজ বপন করতে পারে।

হযরত (সঃ) এর সময়ে কা’বা ঘরে ৩৬০টি ঈশ্বর (মুর্তি) ছিল, তিনি একটিকেও মানেননি। নেতা সেই, যে অন্যায়, অবিচার, অনিয়ম ও অযৌক্তিকের বিরুদ্ধে রূখে দাঁড়ায়।

ভারতে হিন্দুদের মাঝে জাতিভেদ প্রথা যখন ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছিল- গৌতম বৌদ্ধ এর বিরূদ্ধে দাড়িয়েছিলেন।

পাশবিক শক্তি যখন সত্য, সুন্দর ও পবিত্রতাকে গ্রাস করতে উদ্ধৃত হয়েছিল – শ্রীকৃষ্ণ তাহা দমন করতে আদিষ্ট হয়েছিলেন।

আফ্রিকায় যখন বর্ণবাদ প্রথা প্রখট রূপ ধারণ করল – লেনসন মেন্ডেলা তখন প্রচন্ডভাবে রূখে দাঁড়ালেন। পাকিস্তানিরা যখন বাঙ্গালী জাতির উপর জুলুম ও অত্যাচার শুরু করল- বঙ্গবন্ধু তখন ওদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ গড়ে তুললেন। আবার স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়ে সেনা বাহিনীতে কর্মরত থেকেও বিদ্রোহ করে স্বাধীনতা ঘোষনা করেন- মেজর জিয়া। এরাই তো নেতা! নেতা – ‘অসাধরণ’, ‘অনন্য’। -তিনি একা এবং আলাদা।
লক্ষ্য করলে দেখা যাবে-
কলম্বাসের মত – আব্রাহাম লিংকন নন,
আব্রাহাম লিংকনও – মাও সে তুং এর মত নন,
আবার মাও সে তুং – মহাত্মা গান্ধীর মত নন,
মহাত্মা গন্ধীর মতও – মাহাথির মোহাম্মদের নন,
মাহাথির মোহাম্মদও – এ কে ফজলুল হকের নন।
তারা একে অপর থেকে ভিন্ন এবং আলাদা।
নেতা একটা ভিশনের নাম। সহকর্মীদের উদ্ভুদ্ধ করে স্ফুলিঙ্গের মত চুড়ান্ত গন্তব্যে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই প্রকৃত নেতার কাজ। ভাল কাজের প্রশংসা ও মন্দ কাজের সমালোচনা সহ্য করাও নেতার বৈশিষ্ট্য। কিন্তু আজকাল আমাদের দেশে ঠিক উল্টোটা ঘটছে। ‘নেতা’ কোন ভাবেই তার কৃত কর্মের সমালোচনা সহ্য করতে রাজি নন। স্বার্থন্বেশী, অসভ্য ও তথাকথিত নেতারা তাদের স্বার্থ সিদ্ধ করার নিমিত্তে এবং লেজুর ভিত্তিক অপরাজনীতির জাতাকলে পিষ্ট হচ্ছে অধঃস্তনরা। এ রাহুগ্রাস থেকে বাদ পরেনি এক সময়ের গৌরবময় ছাত্র সংগঠনের মেধাবী কর্মীরাও। পদ-পদবীর লোভে ‘সত্য ও ন্যায়’ বলার সাহসিকতা হারিয়ে ফেলছে কর্মীরা। ফলে নেতার অন্ধ অনুকরণ করছে প্রতিনিয়ত। আর এই দুর্বলতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজের ভিত মজবুত সহ বিত্ত-বৈবিত্তের মালিক হচ্ছে অসাধু নেতারা। তাই ভবিষ্যৎ জাতিকে টেলে দিচ্ছে নেতৃত্বশূণ্য অন্ধকার গন্তব্যে। তা ঘঠছে দেশের অপরাজনীতির ইউনিয়ন থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত। ওটা যেকোন রাজনৈতিক দলের মাতৃ সংগঠন কিংবা যুব সংগঠন, এমনকি ছাত্র সংগঠন পর্যন্ত। এই ঘুর্ণিচক্রে পড়ে কর্মীরা ভুলেই গেছে তাদের অস্তিত্ব ও ভিতরে থাকা সুপ্ত প্রতিভাকে।

মনে পড়ল আরব্য রজনীর ড্রামা সিরিজ – ‘আলিফ লায়লায়’ কথা। এক জেলে প্রতিদিন নদীতে জাল ফেলে মাছ ধরতো। হঠাৎ একদিন তার জালে মুখ বন্ধ একটা কলসি উঠল। সেই কলসীর মুখ খুলতেই এক বিরাট দৈত্য হু হু করে বাহির হয়ে আসল। পা মাটিতে, মাথা আকাশে। জেলেকে উদ্দেশ্য করে দৈত্য বলল – তুমি যা চাও বলো, আমি সব দিবো, আমার অনেক শক্তি আছে।

জেলে বলল – তোমার এত শক্তি থাকতে, কলসির ভিতরে বন্দী কেন?
দৈত্য জবাব দিলো – নবী সোলায়মান (আঃ) মন্ত্র দিয়ে আমাকে বন্দী করে রেখেছিলেন।
অমনি ভাবে আমাদের সবার ভিতরে একটা বিশালকার দৈত্য ন্যায় প্রতিভা লুকিয়ে আছে। আমরা তার সঠিক ব্যরহার করতে পারিনি। কারণ এখানে রয়েছে ভয়, লোভ, হিংসা ও স্বার্থপরতা নামক মন্ত্র। যদি আমরা এসবের উর্ধ্বে যেতে পারি তাহলেই অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌচাতে পারবো। তবেই স্বার্থক জনম, সোনার মানুষ ও স্বনির্ভর দেশ প্রতিষ্টিত হবে।

লেখক
সহকারী শিক্ষক (আইসিটি)
মিরপুর দাখিল মাদ্রাসা,হবিগঞ্জ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো সংবাদ