• Youtube
  • English Version
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৬:৪৩ অপরাহ্ন

করাঙ্গী নিউজ
স্বাগতম করাঙ্গী নিউজ নিউজপোর্টালে। ১৫ বছর ধরে সফলতার সাথে নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন করে আসছে করাঙ্গী নিউজ। দেশ বিদেশের সব খবর পেতে সাথে থাকুন আমাদের। বিজ্ঞাপন দেয়ার জন‌্য যোগাযোগ করুন ০১৮৫৫৫০৭২৩৪ নাম্বারে।

জীবন কাটুক মা-বাবার ছায়ায়-মায়ায়

  • সংবাদ প্রকাশের সময়: শনিবার, ৩১ জুলাই, ২০২১

উম্মে হাবিবা নুসরাত : গুরুজন হলেন আমাদের অমূল্য ধন এবং পরম শ্রদ্ধার পাত্র। তাদের জ্ঞান পরিধি আমাদের থেকে অনেক বেশি। তাই আমাদের উচিত তাদের যথাযথ সম্মান দেয়া। গুরুজনের মধ্যে রয়েছেন পিতা-মাতা ও পাড়ার বৃদ্ধরা। এর মধ্যে পিতা-মাতার গুরুত্ব অনন্য। তারা আমাদের অস্তিত্বে নিয়ে আসার মাধ্যম। সন্তানের জন্য পিতা-মাতা হলেন চোখের মণি, হৃদয়ের স্পন্দন। একজন মা গর্ভে ধারণ করার পর প্রতিটি পদে পদে সন্তানকে সযত্নে আগলে রাখেন বুকে। শত কষ্ট সহ্য করে সন্তানকে তা বুঝতে দেন না। সন্তানের গায়ে বিন্দু পরিমাণ আঁচড়ও লাগতে দেন না। বাবাও নেমে পড়েন আয় উপার্জনের কাজে। হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে পূরণ করেন সন্তানের আবদার।

মা-বাবাকে যে কারণে সম্মান করব

পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও ইবাদত কর না এবং মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার কর।’ (বনি ইসরাইল : ২৩)।

এ আয়াতে আল্লাহর ইবাদতের সঙ্গে মা-বাবার প্রতি সদ্ব্যবহারের কথা উল্লেখ করে এর গুরুত্ব বুঝানো হয়েছে। সন্তান লালন-পালনে মায়ের কষ্টের কথা উল্লেখ করে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘মা তাকে কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে, অনেক কষ্টে তাকে প্রসব করেছে আর তাকে গর্ভে ধারণ করা ও দুধ ছাড়ানোর সময় ত্রিশ মাস।’ (লোকমান : ১৪)।

অন্য আয়াতে এসেছে, ‘উপাসনা কর আল্লাহর, শরিক কর না তাঁর সঙ্গে অন্য কাউকে, পিতা-মাতার সঙ্গে ভালো ব্যবহার কর এবং নিকটাত্মীয়, ইয়াতিম-মিসকিন, নিকট প্রতিবেশী, দূর প্রতিবেশী সঙ্গী-সাথী, মুসাফির ও দাস-দাসীর প্রতিও। নিশ্চয়ই আল্লাহ পছন্দ করেন না দাম্ভিক-অহঙ্কারীকে।’ (সূরা নিসা : ৩৬)।

অন্যত্র এসেছে, ‘আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের মায়ের গর্ভ থেকে বের করেছেন। তোমরা কিছুই জানতে না। তিনি তোমাদের কর্ণ, চক্ষু ও অন্তর দিয়েছেন, যাতে তোমরা অনুগ্রহ স্বীকার কর। ’ (সূরা নাহল : ৭৮)।

মা-বাবাকে নিয়ে হাসিদ কী বলেছে

হাদিসে আছে, এক সাহাবি রাসূলুল্লাহ (সা.)কে প্রশ্ন করলেন, ‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় কাজ কোনটি?’ রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘সময় মতো নামাজ পড়া।’ তিনি আবার প্রশ্ন করলেন, ‘এরপর কোনটি?’ রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা।’ তিনি আবার প্রশ্ন করলেন, ‘এরপর কোনটি?’ রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা।’ (বুখারি : ১/৭৬)।

একদিন এক লোক রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর দরবারে হাজির হয়ে আরজ করল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার কাছে সবচেয়ে উত্তম ব্যবহার পাওয়ার অধিকারী কে? তিনি বললেন, ‘তোমার মা।’ লোকটি জিজ্ঞেস করল, তারপর কে? তিনি বললেন, ‘তোমার মা।’ সে লোকটি আবারও প্রশ্ন করল, তারপর কে? তিনি বললেন, ‘তোমার মা।’ লোকটি আবারও জিজ্ঞেস করল, তারপর কে? তিনি বললেন, তারপর তোমার ‘পিতা’ (বুখারি : ৫৯৭১)।

মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহারে রয়েছে অফুরন্ত কল্যাণ। ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘পিতা-মাতার সন্তুষ্টিতেই আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং পিতা-মাতার অসন্তুষ্টিতে আল্লাহর অসন্তুষ্টি লুকানো।’ (তিরমিজি : ২/১২)। অন্য হাদিসে আছে, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা.)কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘সন্তানের ওপর পিতা-মাতার দায়িত্ব কী?’ রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘তারা উভয়ে তোমার জান্নাত অথবা জাহান্নাম।’ (ইবনে মাজাহ : ২৬০)।

অন্য হাদিসে এসেছে, ‘ওই লোক হতভাগ্য! ওই লোক হতভাগ্য! ওই লোক হতভাগ্য! জিজ্ঞেস করা হল, হে আল্লাহর রাসূল! কার ব্যাপারে এ কথা বললেন? নবী করিম (সা.) বললেন, ‘যে লোক পিতা-মাতার একজন বা দুজনকে তাদের বৃদ্ধ বয়সে পেল অথচ জান্নাত কামাতে পারল না, সে হতভাগ্য।’ (মুসলিম : ২৫৫১)।

কখনও মা-বাবাকে বকাবকি কর না

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কবিরা গুনাহ হচ্ছে কোনো ব্যক্তি তার পিতা-মাতাকে গালাগাল করে। বলা হল, হে আল্লাহর রাসূল! মানুষ তার পিতা-মাতাকে কীভাবে বকাবকি করে? তিনি বললেন, ‘কোনো ব্যক্তি অন্যের পিতা-মাতাকে গালি দেয়, ফলে সেও তার পিতা-মাতাকে গালি দেয়।’ (বুখারি : ৫৯৭৩)।

মা-বাবার আদেশ মানতে হবে

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর যদি পিতা-মাতা তোমাকে চাপ দেয় আমার সঙ্গে কাউকে শরিক করার জন্য, যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, তাহলে তুমি তাদের কথা মানবে না। তবে পার্থিব জীবনে তাদের সঙ্গে সদ্ভাব রেখে চলবে।’ (সূরা লোকমান : ৩১-১৫)।

হজরত আসমা বিনতে আবু বকর (রা.) বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমার মুশরিক মা আমার কাছে এসেছে। আমি কি তার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করব? তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, সদ্ব্যবহার কর।’ (বুখারি : ৩১৮৩)।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমার মা ছিলেন মুশরিক। একদিন আমি তার কাছে ইসলামের দাওয়াত দিলে তিনি আমাকে রাসূলুল্লাহ (সা.) সম্পর্কে এমন কিছু কথা বলেন, যা আমার কাছে খুবই অপছন্দনীয় ছিল। তখন আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে গিয়ে কাঁদতে লাগলাম এবং তার হেদায়াতের জন্য দোয়া করতে বললাম। তিনি দোয়া করলেন। আমি বাড়িতে ফিরে দরজা নাড়লে ভেতর থেকে মা বলেন, তুমি কিছুক্ষণ অপেক্ষা কর। তারপর তিনি গোসল সেরে পোশাক পরে দরজা খুলে দেন এবং কালেমায়ে শাহাদত পাঠ করে ইসলাম গ্রহণ করার ঘোষণা দিলেন।’ (মুসলিম : ২৪৯১)।

কবুল হয় মা-বাবার দোয়া

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তিনটি দোয়া নিঃসন্দেহে কবুল হয়। ১. মাতা-পিতার দোয়া ২. মুসাফিরের দোয়া ৩. মজলুমের দোয়া।’ (আবু দাউদ : ১৫৩৬)। সুতরাং সন্তানের পক্ষে বা সন্তানের বিরুদ্ধে পিতা-মাতার যে কোনো দোয়া নিঃসন্দেহে আল্লাহর কাছে কবুল হয়ে যায়। অতএব, এ ব্যাপারে পিতা-মাতা ও সন্তানদের সর্বদা সাবধান থাকতে হবে, যেন সন্তানের কোনো আচরণে পিতা-মাতার অন্তর থেকে ‘উহ্’ শব্দ বেরিয়ে না আসে। অথবা সন্তানের প্রতি রুষ্ট হয়ে পিতা-মাতা যেন মনে বা মুখে কোনো বদদোয়া না করে বসেন।

মা-বাবা বুড়ো হলে

মা-বাবার সেবাযত্ন করা সন্তানের অবশ্যই কর্তব্য। তবে মা-বাবা যখন বার্ধক্যে পৌঁছবে, তখন তারা সন্তান থেকে সেবাযত্নের আশা করে থাকেন। কেননা, বার্ধক্য হল, মানবজীবনের এক অনিবার্য বাস্তবতা। বেঁচে থাকলে প্রত্যেকেই বুড়ো হতে হয়, এটা আল্লাহর অমোঘ বিধান। এ সময় তারা সেবাযত্নের মুখাপেক্ষী হোন। তাই প্রত্যেক সন্তানের জন্য মা-বাবার সেবা করা উচিত। আল্লাহতায়ালা কোরআনে পিতা-মাতা বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদের সঙ্গে সুন্দর আচরণের নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘তাদের একজন বা দুজনে বুড়ো হলে তাদেরকে ‘উহ্’ শব্দটিও বল না, তাদেরকে ধমক দিও না, তাদেরকে সম্মান দিয়ে কথা বল। তাদের সামনে ভালোবাসার সঙ্গে মাথা নত করে দাও এবং বল, হে প্রতিপালক! তাদের দুজনকে দয়া কর; যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।’ (বনি ইসরাইল : ২৩/২৪)।

মা-বাবা ইন্তেকাল করলে

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, এক সাহাবি বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! বাবা-মার মৃত্যুর পর তাদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করার এমন কোনো উপায় আছে কি, যা আমি অনুসরণ করতে পারি?’ রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘হ্যাঁ, চারটি উপায় আছে। তা হল- ১. তাদের জন্য দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা করা ২. তাদের কৃত ওয়াদা পূরণ করা ৩. তাদের বন্ধু ও অন্তরঙ্গ ব্যক্তিদের সম্মান করা এবং ৪. তাদের মাধ্যমে তোমার সঙ্গে আত্মীয়তার যে সম্পর্ক গড়ে উঠেছে তা অক্ষুণ্ণ রাখা।’ (আবু দাউদ : ৫১৪২)।

আবদুল্লাহ ইবনু ওমর (রা.) বলেন, ‘সবচেয়ে ভালো ব্যবহার হল পিতার অবর্তমানে তার বন্ধুদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা।’ (মুসলিম : ২৫৫।

মা-বাবার আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের জন্য দোয়া। হে আল্লাহ কাল হাশরের মাঠে আমরা যেন তাদের ছায়ায় মায়ায় থাকতে পারি।

লেখক : প্রাবন্ধিক

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো সংবাদ