শনিবার, ১০ মে ২০২৫, ০১:৪১ অপরাহ্ন
বাহুবল (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি: হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা দিন দিন নাজুক হয়ে পড়েছে। গত পিএসসি পরীক্ষায় জেলার নিচে ছিল এ উপজেলায় পাশের হার। এজন্য অভিভাবকরা শিক্ষকদের অবহেলা ও নিয়মিত স্কুলে না আসাকে দায়ী করেছেন। ঠেলায় ধাক্কায় চলছে বাহুবলের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা। স্যার আপনি আজ আমার ক্লাসটা নিয়ে নিয়েন, কাল আপনার ক্লাসটা আমি নিয়ে নিব। স্বাক্ষর দিয়েছি আমি এখন যাই। কাল কিন্তু আমার ক্লাসটা নিতে হবে। স্যার যদি কাল না আসি পিওন ছেলেটা ক্লাসটা নিবে টেনশন কইরেন না, হেডস্যারতো আমাদেরই। হেড স্যার আমাদের নেতা।
অভিযোগ রয়েছে কিছু শিক্ষক উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ও অফিস ম্যানেজ করে রীতিমতো স্কুল ফাঁকি দিচ্ছেন। তাদের মধ্যে অনেক শিক্ষককেই মাসের পর মাস স্কুল চলাকালীন দল বেঁধে উপজেলা সদরে শিক্ষা অফিস সংলগ্ন বিভিন্ন চায়ের স্টলে আড্ডা দিতে দেখা যায়। অভিযুক্ত শিক্ষকদের জিজ্ঞাসা করলে উত্তর একটাই-স্কুলের কাজে সদরে এসেছেন। প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কোন বিদ্যালয় পরিদর্শনে যান না, গেলেও আগেরদিন তাদের বলে যান। এ পর্যন্ত তিনি কোন বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের শোকজও করেননি। যা হয়েছে সব উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিজে করেছেন।
স্কুল সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে চলবে সোয়া চারটা পর্যন্ত এ বিষয়টা জানেন না খোদ কমিটির লোকজনও। শিক্ষার্থীরা বলে সকাল ১০টা থেকে ৩টা পর্যন্ত আমাদের স্কুল খোলা থাকে। স্যারেরা আসেন মন মত করে। আমরা শিক্ষার্থীরা এসেই স্কুলের তালা খুলি।
বাহুবলে চলছে শিক্ষক রাজনীতি , ক্লাস বাদ দিয়ে তারা মেতে উঠেছেন শিক্ষক সমিতির রাজনীতি নিয়ে। কে হবেন কমিটির নেতা। চলছে কমিটি নিয়ে গ্রুপিং, ক্লাসে যাওয়ার সময় নেই তাদের হাতে। সম্প্রতি একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কমিটিতে না নিয়ে আসায় তারা কোর্টে মামলা করে দিলে বন্ধ হয়ে যায় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির নির্বাচন। এ নিয়ে নাওয়া খাওয়া ভুলে গেছেন শিক্ষকরা।
সড়কের পাশের সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলিতে শিক্ষকরা থাকলেও গ্রামের ভিতরের বিদ্যালয়গুলিতে কখন বিদ্যালয় খোলা হয় কখন বন্ধ হয় জানে না এলাকাবাসী।
জানা যায়, উপজেলার অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্কুলে আসেন না। অজুহাত নিয়মিত উপজেলা সদরে দাপ্তরিক কাজে যেতে হয়। এমনও প্রধান শিক্ষক আছেন যারা দীর্ঘদিন বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন। আবার কোনো কোনো শিক্ষক সপ্তাহে একদিন বিদ্যালয়ে গিয়ে পুরো সপ্তাহের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে আসেন। বদলি শিক্ষক রেখে বিদ্যালয়ে পাঠদানের ঘটনাও আছে। ছাত্র-ছাত্রীরা জানায়, সপ্তাহে দুই তিন দিন আইন, আইয়া খালি খাতায় কিতা লেখইন, হারা দিন থাইক্কা বিকালে আবার যাইনগ্যা, মাঝে মাঝে হেড স্যার আইন। তারা আরো জানায়, একটা-দুইটা ক্লাসের পর ছুটি। দুপুরের পর খুব একটা ক্লাস হয় না। অবশ্য উপজেলা শিক্ষা বিভাগও এমনটিই স্বীকার করেছেন যে কিছু শিক্ষকের কারণে পুরো শিক্ষা ব্যবস্থা দুর্নামের স্বীকার হচ্ছে।
বুধবার (১০ জুলাই) সকাল ৯টা ৪৪ মিনিটে বাহুবল উপজেলা নির্বাহী অফিসার আয়েশা হক রামপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে আকস্মিক পরিদর্শনে যান। সকাল ১০টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও দেখেন কোন শিক্ষক স্কুলে আসেননি।
সকাল সাড়ে ১০টায় ভুলকোট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেন, এসময় তিনটা ক্লাসের (শিশু শ্রেণী, প্রথম শ্রেণী ও দ্বিতীয় শ্রেণীর) শিক্ষার্থীদের একসাথে করে ক্লাস নিচ্ছেন এক শিক্ষিকা। তিন ক্লাসে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৪ জন। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি একেবারেই কম। সেখানেও শিক্ষক ছিলনা দুজন।
উপজেলার সব কটি বিদ্যালয়ের পরিবেশও নাজুক, অপরিষ্কার, নোংরা, ময়লা-আবর্জনায় ভর্তি। বিদ্যালয়ের প্রতি খেলায় থাকেনা খোদ কমিটিসহ শিক্ষকদের। কোন বিদ্যালয়ের শিক্ষক যদি শিক্ষক কমটির নেতা হয়ে যান তাহলে তো কথাই নেই। কপাল পুড়বে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের।
বাহুবল উপজেলা নির্বাহী অফিসার আয়েশা হক জানান, এই উপজেলায় আমি নতুন এসেছি, আসার পর থেকেই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করছি। আমি দেখেছি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান অত্যান্ত নাজুক, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ২০ পার্সেনের বেশি হবে না। শিক্ষার প্রতি সরকারও নজর দিয়েছেন আমিও নজর রাখছি। একরম চলতে থাকলে প্রাথমিক শিক্ষা ভেঙ্গে পড়বে বলেও আশংকা করছেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, বিদ্যালয় প্রতিদিন পরিদর্শন করে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।
বাহুবল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল মজিদ বলেন, রামপুর স্কুলের প্রধান শিক্ষক মেডিক্যাল ছুটিতে আছেন, বাকী শিক্ষকরা কেন আসেননি জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা না আসলে আমার কি করার আছে। আমার কিছু করারও নেই প্রাথমিক শিক্ষার বিষয় নিয়ে কিছু বলার নেই।