সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ০৪:৫০ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিনিধি, হবিগঞ্জ: হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার হাওর থেকে একজন পাখি শিকারীকে আটকের পর মোবাইল কোর্টের ভয় দেখিয়ে তার নিকট ঘুষ দাবির অভিযোগ ওঠেছে বন বিভাগের কর্মচারীর বিরুদ্ধে।
রোববার (২২ নভেম্বর) ভোর ৬টায় উপজেলার রত্না বাজার সংলগ্ন ভবানীপুর হাওর থেকে শ্রীনন্দ সরকার নামে এক পাখি শিকারীকে আটক করে ফরেষ্টের লোকজন।
তাকে আটক করার পরপরই পুলিশ পরিচয় দিয়ে তার কাছে ১০ হাজার টাকা উৎকোচ দাবী করা হয়। এ টাকা পরিশোধ করা হলে তাকে ছেড়ে দেয়া হবে বলেও জানায় তারা।
এ সময় আটক শ্রীনন্দ সরকার এর মোবাইলেই তার নিকট আত্মীয় মোহনবাসী দাসকে বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর কথা বলা হয়। টাকা দিতে বিলম্ভ হওয়ায় আটক শ্রীনন্দ সরকারকে নিয়ে বানিয়াচং হাওর থেকে আজমিরীগগঞ্জ এর হাওরসহ বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়।
এরই মধ্যে এ বিষয়টি বানিয়াচং থানা পুলিশকে অবগত করা হলে, ওসি মোহাম্মদ এমরান হোসেন টাকা পাঠানোর জন্য যে বিকাশ নাম্বারটি দেয়া হয়েছে সেই নাম্বারটি সংগ্রহ করে থানার এসআই আব্দুস ছাত্তারকে দায়িত্ব দেয়া হয় এ বিষয়ে তদন্ত করে মূল ঘটনাটি উদঘাটন করার জন্য।
ইতিমধ্যে ঘটনাটি জানাজানি হলে বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনার বিভাগ হবিগঞ্জের ফরেষ্টার তোফায়ের আহমেদ চৌধুরী, হিসাব রক্ষক রূপক দেবনাথ, কম্পিউটার অপারেটর তাপস বর, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন কর্মী রাশেন্দ্র অধিকারী এবং গাড়ী চালক টিপলু দেবসহ সকাল ১০ টায় আটক পাখি শিকারী শ্রীনন্দ সরকারকে বানিয়াচং সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর কার্যালয়ে নিয়ে আসেন।
এসময় সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর কার্যালয়ে ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে পাখি শিকারী শ্রীনন্দ সরকারকে বন্যপ্রাণী (ব্যবস্থাপনা) আইন এর ৩৮এর ১ ধারায় ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড প্রদান করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ইফফাত আরা জামান উর্মি।
এ বিষয়ে পাখি শিকারী শ্রীনন্দন সরকার এর সাথে আলাপকালে তিনি জানান, তারা আমাকে আটক করার পরপরই পুলিশ পরিচয় দিয়ে আমার কাছে ১০ হাজার টাকা দাবী করে। এ টাকা তাদের হাতে দেয়া হলে আমাকে ছেড়ে দেয়া হবে। টাকা না দেয়ায় আমাকে বানিয়াচং এবং আজমিরীগঞ্জ এর হাওর ঘুরিয়ে বেলা ১০টায় উপজেলায় নিয়ে আসা হয়। আমি গরীব মানুষ বারবার তাদের কাছে মিনতী করলেও টাকা ছাড়া আমাকে ছাড়া হবে না বলে জানিয়ে দেয়। পরবর্তী তাদের কথামতো টাকা না দেয়ায় মোবাইল কোর্টের কাছে আমাকে হাজির করে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করিয়েছেন।
এ বিষয়ে ভ্রাম্যমান আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট ইফফাত আরা জামান উর্মির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে বলে জানান। এ ঘটনার পিছনের ঘটনা জানেনকি না এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা করার পর তিনি এ বিষয়টি জানতে পেরেছেন। পরবর্তী বিষয়গুলো ইউএনও স্যার দেখছেন বলেও তিনি জানান।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদ রানার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ঘটনাটি অবগত হওয়ার পরপরই বিষয়টি ডিবিশন ফরেস্ট অফিসার রেজাউল করিম চৌধুরীকে জানানো হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি ইউএনওকে জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে বানিয়াচং থানার ওসি মোহাম্মদ এমরান হোসেন এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ইতিমধ্যে বিকাশের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা চাওয়ার বিষয়টি প্রমানিত হয়েছে। বিকাশ হিসেবে যার নাম্বারটি দেয়া হয়েছে তার নাম টিপলু দেব। তিনি ওই অভিযান টিমের গাড়ী চালক।