• Youtube
  • English Version
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০২:৫৩ অপরাহ্ন

করাঙ্গী নিউজ
স্বাগতম করাঙ্গী নিউজ নিউজপোর্টালে। ১৫ বছর ধরে সফলতার সাথে নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন করে আসছে করাঙ্গী নিউজ। দেশ বিদেশের সব খবর পেতে সাথে থাকুন আমাদের। বিজ্ঞাপন দেয়ার জন‌্য যোগাযোগ করুন ০১৮৫৫৫০৭২৩৪ নাম্বারে।

পরিবেশ মন্ত্রীর শহরে পানির মারণ! বড়লেখাবাসীর বিড়ম্বিত জীবনের গল্প

  • সংবাদ প্রকাশের সময়: শনিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০

আবদুল কাদের তাপাদার: স্বাধীনতার সুদীর্ঘকাল পর দেশের সীমান্তবর্তী ও ঐতিহ্যবাহী জনপদ বড়লেখা অঞ্চলে একজন পূর্ণ মন্ত্রীর গাড়িতে পতাকা উড়ছে। এই দৃশ্যমান চেতনা এলাকাবাসীকে গৌরবান্বিত করেছে। বড়লেখা পৌরসভার প্রাণকেন্দ্র পাখিয়ালার বাসিন্দা সরকারের বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন তৃণমূল থেকে উঠে আসা একজন জনদরদী রাজনীতিক।

মহামারী করোনা পরিস্থিতিতে এলাকার অসহায় গরীব মানুষের মাঝে মন্ত্রীর ব্যক্তিগত ও মানবিক সহায়তা সাধারণ মানুষের মধ্যে আলোচিত হয়েছে। গণমাধ্যমেও বিষয়টি ইতিবাচকভাবে এসেছে।

কিন্তু সপ্তাহান্তে বড়লেখা পৌরসভাসহ আশপাশের বিপুল সংখ্যক অধিবাসীর জীবনে পানির মারণ অস্বস্তিকর ও চরম বিড়ম্বনার এক বিপর্যস্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। যা বিগত ৫০ বছরে দেখেনি বড়লেখার মানুষ। ৫ বছর আগে এমনই হঠাৎ
ভারীবর্ষণে পাহাড় ভাঙ্গা ঢল নেমে প্লাবিত হয়েছিল বড়লেখা শহর। মাত্র দুই ঘন্টায় পানি নেমে গেলেও কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল।

কিন্তু গত রোববার, সোমবার জুড়ে তিন দফায় ৯/১০ ঘন্টার পাহাড়ি ঢল বড়লেখা শহরসহ আশপাশের সড়কপথ, রাস্তাঘাট, হাটবাজার, অফিস আদালত ও মাঠের ফসলী জমির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দোকানপাটে পানি উঠেছে।
এক, দুইদিনে সমস্ত পৌরশহরের মানুষ জীবনযাত্রায় বড় ধরনের বিড়ম্বনা ও বিপর্যস্ত পরিস্থিতির মুখোমুখি হন।

এক ধরনের উঁচু ও পাহাড় টিলার পাদদেশে এই এলাকার ভৌগোলিক পরিমণ্ডল গড়ে উঠায় অধিবাসীরা এর আগে কখনো এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হননি। ফলে উপজেলা পরিষদ এলাকা, বড়লেখা শহরের দোকানপাট, সড়ক ও জনপথের ব্যস্ত সড়ক, বড়লেখা উত্তর চৌমুহনা থেকে দক্ষিণের নিকড়িছড়ার পার কাঠালতলী পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ গুরুত্বপূর্ণ স্হাপনা পানিতে সয়লাব হয়ে যায়।

পানিতে ডুবে যাওয়ার এমন উদ্বেগজনক পরিস্থিতির অস্বাভাবিক চিত্র সামাজিক যোগাযোগের কল্যানে দেশ বিদেশে মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। দেশে বিদেশে অবস্থানরত বড়লেখাবাসী পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে এজন্য দায়ী করে নানা তির্যক মন্তব্য করতে দেখা যায়।

যেদিন যেভাবে ঢলের তোড়ে ভেসে যায় পৌরশহর

স্থানীয় অধিবাসীরা জানান, শনিবার রাত ১১টা থেকে বড়লেখায় ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয়ে একটানা চলে রোববার সকাল ৯টা পর্যন্ত। প্রায় ১০ ঘন্টার ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানি দ্রুত নেমে যেতে না পারায় পৌর শহরের বিভিন্ন বাসা-বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ঢুকে পড়ে। এছাড়া বড়লেখা-মৌলভীবাজার আঞ্চলিক মহাসড়কের বিভিন্নস্থান তলিয়ে যায়। রোববার বৃষ্টি কম হলেও সোমবার সকালের ভারীবর্ষণে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

বড়লেখা শহরের একজন ব্যবসায়ী জানান, বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে শহরের বিভিন্ন বাসা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি উঠেছে। বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ওঠে মালামাল নষ্ট হয়েছে। বড়লেখা-মৌলভীবাজার আঞ্চলিক মহাসড়কের বড়লেখা থানা, হাসপাতাল, উপজেলা পরিষদ, পল্লী বিদ্যুতের সাব-স্টেশন, ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সম্মুখ, কাঠালতলী বাজার ও দক্ষিণভাগের টিলাবাজার নামক স্থান পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব স্থানে পানি ওঠায় যানবাহন চলাচল ব্যাহত হয়েছে। পানি ঠেলে চলতে গিয়ে অনেক যানবাহন বিকল হয়ে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন চালক মালিকরা। মানুষজনকে পানি মাড়িয়ে চলাচল করতে চরম দুর্ভোগে পোহাতে হয়েছে।

পৌর শহরের কয়েকজন বাসিন্দার অভিযোগ, দখল আর দূষণে নালা, ছড়া-খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি প্রবাহের পথ বন্ধ হয়ে পড়েছে। ফলে বিভিন্ন সময় বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানি দ্রুত নামতে না পেরে গোটা পৌর শহরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এছাড়া পৌরশহরে অপর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণেও অল্প বৃষ্টিতে কৃত্রিম জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। যার কারণে স্থানীয়দের বাসা বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢোকায় তাদের লাখ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়।

বড়লেখা পৌরশহরে বিশেষ করে এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ সরকার তথা মন্ত্রী শাহাব উদ্দিনের দীর্ঘ সফলতায় বিরোধিরা একটা অজুহাত খোঁজার চেষ্টা করতেই পারে! কারা এমন পরিস্থিতি তৈরি করছেন? কেনো এমন কিছু মুখরোচক প্রশ্নের মুখোমুখি আজ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ?

বড়লেখার মাটি মানুষের নেতা ও সরকারের জনপ্রিয় মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন তৃণমূল পর্যায়ে আলাপ আলোচনা করে বড়লেখার প্লাবন সম্পর্কে খোঁজ নিয়েছেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। তিনি এ ব্যাপারে প্রশাসনিকভাবেও জানার চেষ্টা করতে পারেন বলে জানিয়েছেন বড়লেখা আওয়ামী লীগের একজন নেতা।

ষাটমা নিকড়িছড়া খননের নামে লেফাফাদুরস্ত, দায়িত্বহীনতার অভিযোগ

কয়েক বছর আগে যখন মাত্র ৬/৭ ঘন্টার ভারীবর্ষণে পাহাড়ি ঢলের তোড়ে বড়লেখা পৌরশহর আকস্মিক পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে তখন থেকেই আলোচনায় আসে পাথারিয়া পাহাড়ে সৃষ্ট এককালের খরস্রোতা পাহাড়ি ছড়া ষাটমা নিকড়িছড়া খননের প্রসংগ।

বড়লেখা শহরের উজানে এই দুটি খরস্রোতা পাহাড়ি ছড়া ভরাট হয়ে যাওয়াকে পৌরশহরের আকস্মিক বন্যার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। নানাভাবে আলাপ আলোচনার পর বর্তমান মেয়র আবুল ইমাম মো. কামরান চৌধুরীর বিশেষ প্রচেষ্টায় এবং মন্ত্রী শাহাব উদ্দিনের ঐকান্তিক সহযোগিতায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন বড়লেখা পৌশহরকে অকাল বন্যার হাত থেকে রক্ষায় “বন্যা, জলাবদ্ধতা ও তীরবর্তী পতিত ভূমি সেচের আওতায় নিয়ে আসতে “বড়লেখা পৌরসভার উত্তর সীমানার পাহাড়ি ছড়া ষাটমা ও দক্ষিণ সীমানার নিকড়িছড়া পুনঃখননের প্রকল্প নেয়।

কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েক দফায় এই দুটি ছড়ার পুনঃখননের কাজের নামে এক ধরনের লেফাফাদুরস্ত করা হয়। মেয়র কামরান চৌধুরী এসব কাজের সার্বিক তত্ত্বাবধান করেন। ঠিকাদারির দায়িত্ব পালন করেন বিএডিসির লোকজন। কিন্তু এই প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে মেয়র কামরান চৌধুরী ও বর্তমানে খাগড়াছড়িতে দায়িত্বরত তৎকালীন মৌলভীবাজার বিএডিসির সাব এসিট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার গিয়াসউদ্দিনের বক্তব্যে বিস্তর ফারাক লক্ষ্য করা যায়।

মেয়র কামরান জানিয়েছেন তিনি কাজের তদারকি করেছেন। সবকিছু তার মনে নেই। প্রকল্পে কতো টাকা ব্যয় হয়েছে বা কত কিলোমিটার খনন হয়েছে তা বিএডিসির ঠিকাদাররা বলতে পারবেন। বিএডিসির যে কর্মকর্তা এখানে কাজ করেছেন সেই গিয়াস উদ্দিনের সঙ্গে আলাপকালে জানান, তিনি এখন খাগড়াছড়িতে কর্মরত আছেন।

তিনি জানান, দুই ছড়া মিলে ৪ কিলোমিটার খনন করা হয়েছে বলে তার মনে হয়। এবং এই প্রকল্পের বাজেট খুব বেশি নয়। ১৪/১৫ লাখ টাকা হতে পারে। তবে মেয়র কামরান চৌধুরী দুই ছড়া মিলে ৬ কিলোমিটার খনন হয়েছে বলে জানান। তিনি জানান, বাজেট কত তাঁর সঠিক মনে নেই। তবে প্রায় কোটি টাকার কাছাকাছি হবে বলে তার ধারণা।

কাউন্সিলর যেহিন সিদ্দিকীর আগ্রহের প্রকল্প, মেয়র জানতে দেননি কিছুই

ষাটমা ও নিকড়িছড়া পুনঃখনন প্রকল্প নিয়ে প্রথম থেকেই খুব আগ্রহ নিয়ে খোঁজ খবর রাখছিলেন বড়লেখা পৌরসভার প্রভাবশালী কাউন্সিলর, উপজেলা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক যেহিন সিদ্দিকী। তিনি জানান, বড়লেখাকে অকাল বন্যার হাত থেকে রক্ষায় এলাকার সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন ভাইয়ের বিশেষ সহযোগিতায় এই প্রকল্প আলোর মুখ দেখে।

কিন্তু খাল পুনঃখনন প্রকল্পের নামে এই প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে। সত্যিকারার্থে, প্রকল্প অনুযায়ী খাল খনন হলে মাত্র দুই বছরের মাথায় বড়লেখা পৌর শহর পানিতে ডুবে সয়লাব হতো না।

তিনি অভিযোগ করেন, খাল পুনঃখনন প্রকল্প অনুযায়ী খালের তলদেশ থেকে আরো ৬ ফুট গভীর পর্যন্ত খনন করার কথা। কিন্তু দেখা গেছে, খালের সাইড খুঁড়ে কিছু মাটি পারে তোলা হয়েছে। ফলে গত দুবছর ধরে পাহাড়ী ঢল নেমে ধীরে ধীরে পারের মাটি খালে পড়ে তা আরো বেশি আকারে ভরাট হয়ে পড়েছে।

এবার ভারী বর্ষণ ও একটানা পাহাড়ি ঢলের তোড়ে তাই খালের দু পার ছাপিয়ে জনপদের বাসা বাড়ি, দোকানপাট, সড়কপথসহ সবকিছু প্লাবিত হয়েছে। সঠিক নিয়মে খাল পুনঃখনন হলে অনেক বছর ঢলের পানি খাল নালা ধরে রাখতে পারতো। প্রকল্পের আরেকটি উদ্দেশ্য পারের পতিত জমিতে সেচ দিয়ে। ফসল আবাদ করা যেতো। কিন্তু অনিয়মের কারণে সবকিছু ভেস্তে গেছে।

পৌর পরিষদের সভায় এই প্রকল্প সম্পর্কে জানতে চাইলে মেয়র কামরান কিছুই জানতে দেননি বলে দাবি করেছেন কাউন্সিলর যেহিন সিদ্দিকী।

তিনি বলেন, এ বিষয়ে শুধু মেয়র কামরান সবকিছুই জানেন। তিনিই এই প্রকল্প তদারকি করেছেন। আমরা খাল খনন প্রকল্পে তাকেই শুধু দেখেছি। কোনো ঠিকাদারকে দেখিনি। যেহিন জানান, এই প্রকল্পে কয়েক কোটি টাকার বাজেট ছিল বলে তার ধারণা। খান খননের নামে দুই ছড়ায় ৭ কিলোমিটার খোঁড়া হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।

যেহিনের এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়র কামরান বলেন, এই প্রকল্প তাকে জানানোর কথা নয়। আমি একা কিছুই করিনি। বিএডিসি সবকিছু করেছে। আমি তদারকি করেছি।

অপরিকল্পিত পৌর শহর, জোর যার মূলক তার

২০০১ সালে সাবেক বড়লেখা সদর ইউনিয়নকে ভেঙে উপজেলা সদরের ৭ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে গড়ে উঠে বড়লেখা পৌরসভা। বড়লেখা পৌরসভার যাত্রা শুরুর প্রায় দুই দশক অতিক্রান্ত হতে চললেও আজো কোনো সমন্বিত পরিকল্পনা নেয়া হয়নি।

সম্পূর্ণ অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠছে বড়লেখা পৌর শহর। শহরের অনেক নালা খাল এখন তার অস্তিত্ব হারিয়েছে। সওজসহ সরকারি জায়গা দখল করে স্হায়ী স্হাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। অবৈধভাবে অনেক ভূমি অনেক দখল করে বাসা বাড়ি, দোকান পাট নির্মাণের হিড়িক পড়েছে। জোর যার মূলক তার নীতিতে বদলে যাচ্ছে বড়লেখা পৌর শহর।

পৌর শহরের উত্তর সীমানা ষাটমা ছড়া থেকে উত্তরে পানিধার নিকড়িছড়া এলাকা পর্যন্ত দখল বেদখলের খেলা চলছে। এটা দেখার যেনো কেউ নেই। তাছাড়া পৌরসভা গঠিত হলেও এখন পর্যন্ত শহরে পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্হা গড়ে উঠেনি।পয় নিষ্কাশনের তেমন কোনো পরিকল্পিত ব্যবস্হাপনাও গড়ে তোলা হয়নি।

দখলে ক্ষিনেশ্বরী খাল, লংলীছড়াসহ নালা খালের অস্তিত্ব হারাচ্ছে

বড়লেখা পৌর শহর এলাকায় উপজেলা কমপ্লেক্স সংলগ্ন টিটিডিসি স্কুলের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া একসময়ের পাহাড়ি খরস্রোতা ক্ষিনেশ্বরী খাল কিংবা উত্তর বাজার বালিকা বিদ্যালয়ের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া লংলীছড়া ও নিমাই কালভার্টের অস্তিত্ব এখন হারিয়ে যেতে বসেছে।

এভাবে খাল নালা এবং সড়ক জনপথের জায়গা দখল করে বাড়িঘর, দোকাটপাটসহ নানা রকম স্হাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। প্রতিনিয়ত দখল বেদখলের খেলা চললেও এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে কেউ কোনো ব্যবস্হা নিচ্ছেন না বলে অভিযোগ পৌরবাসী সচেতন মানুষের।

ক্রম বর্ধমান প্রায় অর্ধ লক্ষ মানুষের এই পৌর শহরে দিন দিন বাড়ছে জীবনের কোলাহল। মানুষ বাড়ছে। দোকানপাট, বাণিজ্যিক বিপণী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাড়িঘর বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু সেরকম সুযোগ সুবিধা বাড়ছে না। যে যার মতো সেখানে যেখানে স্হাপনা নির্মাণ করছেন। কেউ এতে বাধা দিচ্ছেন না।

এক ধরনের বেপরোয়া প্রতিযোগিতা চলছে স্হাপনা নির্মাণের। এভাবেই সম্পূর্ণ অপরিকল্পিতভাবে গত দুই দশক ধরে অগোছালোভাবে গড়ে শহরের অবকাঠামো। যা ভবিষ্যতের জন্য হুমকিস্বরূপ বলে মনে করছেন পৌরসভার অনেক বাসিন্দা।

প্রায় দুই দশকেও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়নি এই পৌরসভা

২০০১ সালে বড়লেখা পৌরসভা গঠনের পর প্রথমে প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার- ইউএনও জসিম উদ্দিন বাদল। ২০০৩ সালে পৌরসভার প্রথম নির্বাচনে পৌরসভা চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মালিক।

তার দায়িত্বকালিন সময়েই চেয়ারম্যান পদবীটিকে সরকার মেয়র হিসেবে ঘোষণা করে। বর্ধিত মেয়াদে দায়িত্ব পালনকালিন সময়ে ২০০৮ সালে মহবন্দ প্রকাশিত সোনাপুর নিবাসী মেয়র আবদুল মালিক ইন্তেকাল করেন।

পরবর্তীতে প্যানেল মেয়র ও বিএনপি নেতা পাখিয়ালার মতিউর রহমান ইরাজ আলী ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে ২০১১ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তী পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপি নেতা গাজিটেকার ফখরুল ইসলাম মেয়র হিসেবে বিজয়ী হন। সর্বশেষ নির্বাচনে পৌরসভার মহবন্দের বাসিন্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা ছাত্র লীগের সাবেক সভাপতি আবুল ইমাম মোঃ কামরান চৌধুরী মেয়র নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

বড়লেখা বি-ক্যাটাগরির একটি পৌরসভা। বিগত ২০ বছরেও পৌরসভার নিজস্ব কোনো ভবন নির্মিত হয়নি। জেলা পরিষদের “উপজেলা জনমিলন কেন্দ্র” কে পৌরসভা অস্হায়ী অফিস হিসেবে ব্যবহার করছে।

অপরিকল্পিত শহর, ড্রেনেজ সংকট ও বেদখলের কথা সবার মুখে

বড়লেখা শহরে অকাল বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি ও বাসিন্দাদের বিড়ম্বনার জীবন প্রসংগে কথা বলতে গিয়ে সাবেক ও বর্তমান মেয়রসহ আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির নেতৃবৃন্দ
অপরিকল্পিত শহরে অপর্যাপ্ত পয়ঃনিষ্কাশন, ড্রেনেজ ব্যবস্হার সংকট এবং দখল বেদখলের কারণে বিপর্যস্ত অবস্থার কথা প্রায় একই সুরে উচ্চারণ করেছেন।

বড়লেখা উপজেলা পরিষদের তরুণ জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোয়েব আহমদ, বড়লেখা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগ সভাপতি তাজ উদ্দিন, সাবেক মেয়র, বিএনপি নেতা ফখরুল ইসলাম, সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম সুন্দর, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল আহাদ, পৌর বিএনপির সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম, বড়লেখা সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন ও দক্ষিণভাগ উত্তর (কাঠালতলী) ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এনাম উদ্দিন আহমদ বড়লেখা পৌরসভা ও আশপাশের এলাকায় অকাল বন্যা এবং বিশেষ করে পৌরবাসীর নানা সংকট সমস্যা নিয়ে কথা বলেছেন।

সোয়েব বললেন, অপরিকল্পিত শহরে সুষ্ঠু পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে উঠেনি

বড়লেখা পৌর শহরে অকাল বন্যার কারণে বাসিন্দাদের বিড়ম্বনার বিষয় নিয়ে কথা গিয়ে উপজেলা পরিষদের তরুণ চেয়ারম্যান সোয়েব আহমদ বললেন, বড়লেখা পৌর শহর গড়ে উঠছে সম্পূর্ণ অপরিকল্পিতভাবে।পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্হা, ড্রেনেজ ব্যবস্হাপনার মারাত্মক সংকট ক্রমবর্ধমান এই ছিমছাম শহরকে এখন সমস্যাগ্রস্ত করে তুলছে।

খাল নালাসহ জায়গা জমি বেদখল হয়ে বাড়িঘর, দোকানপাট নির্মিত হচ্ছে। তিনি বলেন, সড়ক ও জনপথের উভয়পাশে দখল হওয়া জায়গায় ড্রেনেজ ব্যবস্হাপনা গড়ে তুলতে পারলে পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা হবে। এতে করে ঢলের পানি নেমে যেতে পারবে।

ষাটমা নিকড়িছড়া পুনঃখনন সঠিকভাবে হয়েছে কিনা জানতে চাইলে সোয়েব বলেন, আমার জানামতে খনন হয়েছে। তবে কতটুকু সঠিকভাবে হয়েছে সেটা আমি জানি না। তিনি ষাটমা ও নিকড়িছড়ার উজানের অংশ খনন না করলে এই পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পাওয়া কঠিন হবে বলে মত দেন। একটি পরিকল্পিত শহর গড়ে তুলতে তিনি পরিকল্পনা তৈরি করার উপর গুরুত্বারোপ করেন।

পাহাড়ি ছড়া ষাটমা নিকড়িছড়ার উজানে খনন না হলে বিড়ম্বনার শেষ হবে না: ভাইস চেয়ারম্যান

এবার ষাটমার উজান এলাকা জফরপুর, সাতকরাকান্দি এবং দক্ষিণে নিকড়িছড়ার উজানে মুছেগুল কুতুবনগর দিয়ে পাহাড়ি ঢল নেমে বড়লেখা পৌর শহর প্লাবিত হয়েছে বলে মনে করেন উপজেলা পরিষদের তরুণ ভাইস চেয়ারম্যান তাজ উদ্দিন। তিনি জানান, খননকৃত ষাটমা নিকড়িছড়ার সাইডের মাটি খালে পড়ে যাওয়ার কারণেও ঢলের পানি জনপদে ঢুকে পড়েছে।

তিনি বলেন, শহরে অবৈধভাবে খাল নালা ভরাট হয়ে গিয়ে বর্তমান পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এ থেকে উত্তরণে পরিকল্পিত শহর গড়ার দিকে মনোনিবেশ দিতে হবে বলে তিনি মনে করেন।

কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালিপনা ও দায়িত্বহীনতার কারণে অকাল বন্যাঃ সাবেক মেয়র ফখরুল

বড়লেখা পৌরসভার নির্বাচিত দ্বিতীয় (সাবেক) মেয়র বিএনপি নেতা প্রভাষক ফখরুল ইসলাম মনে করেন, খাল খননের নামে অনিয়ম ও শহরজুড়ে খাল নালা বেদখলের বেপরোয়া প্রতিযোগিতার কারণে বড়লেখায় পাহাড়ি ঢলে নেমে মানুষজন বিড়ম্বনার মুখোমুখি হয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালিপনা ও দায়িত্বহীনতার কারণে এমন অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন সাবেক এই মেয়র। তিনি বলেন, যথাযথ কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব পালন করলে এই অবস্থার সৃষ্টি হতো না।

ভরাট ও বেদখলের কারণে বড়লেখা পৌর শহর প্লাবিত হয়েছেঃ সুন্দর

একটি সুষ্ঠু পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে না পারা ও পরিকল্পনার অভাবে পৌর শহরে অকাল বন্যা দেখা দিয়েছে বলে মনে করেন বড়লেখা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও এককালের তারকা ফুটবলার রফিকুল ইসলাম সুন্দর। তিনি বলেন, সড়ক ও জনপথের জায়গাসহ সরকারি খাল নালা নিজেদের মতো ব্যবহার করে বাড়িঘর নির্মিত হচ্ছে। এটা দেখার কেউ নেই।

অবৈধ দখল ও ভরাট বন্ধ করতে বললেন আবদুল আহাদ

বড়লেখা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক কৃতি ফুটবলার মহবন্দ নিবাসী আবদুল আহাদ পৌর শহরকে সংকটের হাত থেকে রক্ষা করতে সবরকমের দখল বেদখল খেলা ও নালা খাল ভরাট বন্ধ করার আহবান জানান। তিনি একটি সুন্দর শহর গড়ে তুলতে বড়লেখাবাসীকে চিন্তা চেতনায় ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করেন।

খাল খননের নামে সামান্য কাজ হয়েছে, তদন্ত চাইঃ আনোয়ার

বড়লেখা পৌরসভা বিএনপির সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম জানান, আমরা শুনেছি অকাল বন্যার হাত থেকে বড়লেখা পৌর শহরকে রক্ষায় বড় অংকের প্রকল্প নেয়া হয়। ষাটমা নিকড়িছড়া পুনঃখনন করার এই প্রকল্পে আসলে কী হয়েছে আমাদের জানার সৌভাগ্য হয়নি। তবে পুরোপুরি খনন হলে এটা মাত্র দুই বছরে ভরাট হওয়ার কথা নয়। দুই খালের তীর ছাপিয়ে পাহাড়ি ঢলের পানিতে পৌর এলাকা সয়লাব হয়েছে। আনোয়ারুল ইসলাম এই প্রকল্পে কী কাজ হয়েছে তার তদন্তের দাবি জানান। তিনি পরিকল্পিত পৌর শহর গড়ে তোলার বিষয়ে পরিকল্পনা প্রণয়নেরও দাবি করেন।

ষাটমা নিকড়িছড়া উজান থেকে গভীরে গিয়ে খনন করার দাবি চেয়ারম্যান সিরাজের

বড়লেখা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি, এলাকার দীর্ঘদিনের জনপ্রতিনিধি সিরাজ উদ্দিনকে বুধবার সকালে যখন ফোন করি জানালেন, তিনি এখন তার ইউনিয়নের নিকড়িছড়া তীরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে অকাল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট, কালভার্ট ও বাড়িঘর দেখতে বেরিয়েছেন। তিনি জানালেন, নিকড়িছড়া বা ষাটমায় খালের তলদেশ গভীরভাবে খনন করতে হবে।

সদর ইউনিয়নের সীমানা উজানের ৩ কিলোমিটারসহ সঠিকভাবে ও গভীরতাসহ খনন না করলে পাহাড়ি ঢলের তোড়ে আমরা আগামীতে ভেসে যাবো। ষাটমা নিকড়িছড়া সঠিকভাবে খনন হয়নি দাবি করে তিনি অবিলম্বে সঠিকভাবে খাল খননের প্রকল্প নেয়ার দাবি জানান।

নিকড়িছড়ার উজানের ৩ কিলোমিটার খননের দাবি চেয়ারম্যান এনামের

নিকড়িছড়ার প্লাবনে শুধু পৌরবাসী নয়, এবার নাকাল হয়েছেন কাঠালতলী বাজারসহ এলাকার মানুষ। কাঠালতলী বাজার বড়লেখা পৌরসভার সীমানা পেরিয়ে বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের অন্তর্ভুক্ত। এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এনাম উদ্দিন এবারের পাহাড়ি ঢলের মতো প্লাবনের তোড় আর কোনোদিন দেখেননি উল্লেখ করে বলেন, মানুষের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিড়ম্বনার শেষ ছিল না। নিকড়িছড়ার ডাউন অংশ শুধু খনন করলে সমস্যার সমাধান হবে না বলে মত দেন দেশের একমাত্র আকর্ষণীয় জলপ্রপাত মাধবকুণ্ড এলাকার এই তরুণ চেয়ারম্যান।

আমার কারণেই ষাটমা নিকড়িছড়া পুনঃখনন সম্ভব হয়েছে, দুর্নীতির অভিযোগ সঠিক নয়ঃ মেয়র কামরান

বড়লেখা পৌরসভার বর্তমান মেয়র আবুল ইমাম মোঃ কামরান চৌধুরী মহবন্দের বাসিন্দা। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। পৌর শহরকে অকাল বন্যার হাত থেকে রক্ষা করা ও খালের পারের পতিত জমি সেচের আওতায় এনে চাষাবাদের উপযুক্ত করতে তার একান্ত প্রচেষ্ঠায় এই প্রকল্প নেয়া হয় বলে তিনি জানান।

মেয়র কামরান জানান, গত ৫০ বছরে কেউ এ ধরনের পাহাড়ি ছড়া খননের চিন্তা করেননি। বড়লেখা উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ পাহাড়ি ছড়া দেওছড়া, মাধবছড়া খননের খুব দরকার ছিল। এগুলো কেউ খনন করার সাহস করেনি। আমি সাহস করে ষাটমা ও নিকড়িছড়া খননের প্রকল্প নেই। খাল পুনঃখনন হওয়ায় পৌরবাসী অনেক সুবিধা পাবে। খাল পুনঃখনন সঠিকভাবে হয়নি এবং এতে অনেক অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়র বলেন, কাজ করেছে বিএডিসি। তিনি তদারকি করেছেন। তাই অনিয়মের বিষয়ে তিনি বলতে পারবেন না।

খাল খননের বাজেট কত টাকা এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়র কামরান বলেন, কোটি টাকার মতো হবে। তবে এটাও বিএডিসি ভালো বলতে পারবে। তাদের কাছে হিসাবপত্র আছে। তবে বড়লেখা পৌর শহরে অবৈধ দখল ও খাল নালা ভরাট করে বেআইনি স্হাপনা নির্মাণের বিষয়ে তিনি বলেন, আগে থেকেই এসব দখল বেদখলের খেলা চলছে। এসব বন্ধ হওয়া উচিত বলে তিনি মন্তব্য করে বলেন, সড়ক জলপথের জায়গা দখলমুক্ত করে পয়ঃনিষ্কাশন ও ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে।

পৌরশহরকে বন্যা ও জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষার প্রকল্প কী আসলে আলোর মুখ দেখেছে?

২০১৯ সালের মার্চে সিলেটের সংবাদপত্রে প্রকাশিত নীচের এই রিপোর্ট আমাদেরকে আসলে কী জানান দেয়?

রিপোর্টটি শিরোনামসহ তুলে ধরা হলোঃ

“ষাটমাছড়া পুণঃখনন কর্মসুচির দ্বিতীয় ধাপের কাজ শুরু”

বড়লেখা পৌরশহরের অকাল বন্যা ও জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ শহরের উত্তর সীমান্ত দিয়ে প্রবাহিত ষাটমাছড়া (নদী) ভরাট ও ভুমি দস্যুদের জবর দখল। পৌরমেয়র আবুল ইমাম মো. কামরান চৌধুরীর বিশেষ তৎপরতায় ছড়াটির পুণঃখননের প্রকল্প গ্রহণ করে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)। প্রকল্পের প্রথম ধাপের ২ কিলোমিটার খনন কাজ গত বছর সম্পন্ন হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে কর্মসুচির দ্বিতীয় ধাপের ৩ কিলোমিটার এলাকার খনন কাজের উদ্বোধন করেন মেয়র কামরান চৌধুরী।

বড়লেখা ডিগ্রী কলেজ সংলগ্ন ষাটমা ব্রীজের পার্শে খননকাজের উদ্বোধনকালে উপস্থিত ছিলেন সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) সিরাজ উদ্দিন, পৌরসভার কাউন্সিলার আব্দুল মালিক ঝুনু, বিএডিসি’র সাব-এসিসটেন্স ইঞ্জিনিয়ার মো. গিয়াস উদ্দিন, সাংবাদিক আব্দুর রব, ইকবাল হোসেন স্বপন, ইউপি মেম্বার ফারুক আহমদ, মাওলানা জুবায়ের আহমদ, ব্যবসায়ী আব্দুল আজিজ, মৌলুদ হোসেন চৌধুরী, এবাদুর রহমান প্রমূখ।

বিএডিসি সুত্রে জানা গেছে, বন্যা, জলাবদ্ধতা ও তীরবর্তী পতিত ভুমি সেচের আওতায় নিয়ে আসতে বড়লেখার ষাটমা ছড়া পুণঃখননের উদ্যোগ গ্রহণ করে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)। বিএডিসি’র সিলেট বিভাগ ক্ষুদ্র উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় গত বছর কর্মসুচির প্রথম ধাপে ষাটমাছড়ার ২ কিলোমিটার এলাকা পূণঃখনন করা হয়। একই প্রকল্পের আওতায় আরো ৩ কিলোমিটার এলাকা দ্বিতীয় ধাপে পূণঃখনন কাজের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এতে সরকারের ব্যয় হচ্ছে ৩৫ লাখ টাকা।

বিএডিসি’র সাব-এসিসটেন্স ইঞ্জিনিয়ার মো. গিয়াস উদ্দিন জানান, ষাটমাছড়ার প্রথম ধাপের খনন কাজ গত বছর সম্পন্ন হয়েছে। চলিত বছর পৃথক দুটি লটে ছড়ার আরো ৩ কিলোমিটার পূণঃখনন কাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে শুধু বড়লেখা পৌরশহরের অকাল বন্যা ও

জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানই হবে না, এছাড়াও ষাটমা ছড়ার উভয় তীরের ব্যাপক কৃষি জমি চাষাবাদের আওতায় আসবে।”

উপরের রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে দ্বিতীয় ধাপের এই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ লাখ টাকা। এবং এখানে ৩ কিলোমিটার কাজ করার কথা রয়েছে। রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে এর আগে ষাটমা ছড়ায় আরো ২ কিলোমিটার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। অর্থাৎ শুধুমাত্র ষাটমা ছড়ায় ৫ কিলোমিটার কাজ হয়েছে। তাহলে নিকড়িছড়ায় কত টাকায় কত কিলোমিটার কাজ হয়েছে? বিএডিসির প্রকৌশলী গিয়াসউদ্দিন এখন বলছেন, সবমিলিয়ে ১৫/১৬ লাখ টাকার কাজ হয়েছে।

আসলে এখন কেউই সঠিক কোনো হিসাব বলছেন না কেনো? ষাটমা ও নিকড়িছড়া খাল পুনঃখনন প্রকল্পে আসলে কত কিলোমিটার কাজ হয়েছে এবং কত টাকা খরচ হয়েছে এই তথ্য নিশ্চিত করে এখন কেউই বলতে চাচ্ছেন না। তাহলে খাল পুনঃখননের নামে লেফাফাদুরস্তের যে অভিযোগ উঠেছে তাই কি সত্য?

মন্ত্রী শাহাব উদ্দিনের সামনে আধুনিক বড়লেখা গড়ার এক সুবর্ণ সুযোগ অপেক্ষমান

বড়লেখা পৌরসভার পাখিয়ালায় জন্ম ও বেড়ে উঠা তৃণমূলের রাজনীতিক আজকের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভাপতি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার অত্যন্ত প্রিয়ভাজন মন্ত্রী হিসেবে অনেকেই মনে করেন।

তাঁর সামনে বড়লেখা পৌরসভাকে এ ক্যাটাগরিতে উন্নীতকরণ ও বড়লেখা পৌর শহরকে একটি আধুনিক শহরে রূপান্তরের সুবর্ণ সুযোগ অপেক্ষা করছে।

আধুনিক বড়লেখা গড়ার নির্মাতা হিসেবে তাঁর নাম ইতিহাসের সোনালী পাতায় লিখে রাখতে তিনি নিশ্চয়ই চাইবেন। যেহেতু তিনি এ মাটির ‘সান অব দ্য সয়েল। তিনি বড়লেখার ভূমিপুত্র। বড়লেখাবাসী চেয়ে আছেন তাঁর দিকে। তাদের স্বপ্ন ও আশা নিয়ে।

লেখক: সম্পাদক,এখন সিলেট।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো সংবাদ