করাঙ্গী নিউজ
স্বাগতম করাঙ্গী নিউজ নিউজপোর্টালে। ১৫ বছর ধরে সফলতার সাথে নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন করে আসছে করাঙ্গী নিউজ। দেশ বিদেশের সব খবর পেতে সাথে থাকুন আমাদের। বিজ্ঞাপন দেয়ার জন‌্য যোগাযোগ করুন ০১৮৫৫৫০৭২৩৪ নাম্বারে।

প্রতিভার অপমৃত্যু

  • সংবাদ প্রকাশের সময়: বৃহস্পতিবার, ২৭ আগস্ট, ২০২০

মোঃ মনিরুজ্জামান: বছরের শুরুতেই হাইস্কুল গুলো ৬নং ক্লাসে ছাত্র ভর্তির জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়তো। গ্রামের স্কুলগুলো পার্শ্ববর্তী অন্য স্কুলের সাথে একটা মনোদ্বান্দ্বিক অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতো। প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে বিভিন্ন শিক্ষকগন, কখনো তিনি নিজে এলাকার ৫নং ক্লাস পাশ করা ছাত্র-ছাত্রীর বাড়ীতে গিয়ে অভিভাবকদের বুঝিয়ে ছাত্র কিংবা ছাত্রীটিকে তার বা তাদের স্কুলে ভর্তি করানোর জন্য রাজী করাতেন।

এই কাজে তারা আত্মীয়তার সূত্র, ভাল সম্পর্কের সূত্র, ভাল রেজাল্ট করানোর প্রতিশ্রুতি, বিনা বেতন বা হাফ বেতনে পড়ার সুযোগ করে দেবার প্রতিশ্রুতি দিতেন।
ছাত্রী হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শিক্ষকদের সকল প্রচেষ্টা ভেস্তে যেতো। কারন, সংশ্লিষ্ট অভিভাবক তার মেয়েকে ঐ বয়সে পাত্রস্থ করে ঘাড় থেকে বোঝা নামিয়ে যেন হাফ ছেড়ে বাঁচতেন। তারা বলতেন, মেয়ের পড়িয়ে কি আর হবে- ‘সেইতো চুলার ছাই ফেলা আর রান্না বান্না করে সংসার করা। তা আমার মেয়ে সব পারে- বলে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে এক খিলি পান খাইয়ে শিক্ষকদেরকে সস্মানের সাথে বিদায় দিতেন।’

নিরবদের বাড়িতেও আশেপাশের দুটি স্কুল থেকে প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষকরাও এসেছিলেন। এক স্কুল থেকে তো ম্যানেজিং কমিটির লোকও এসেছিল। সকলেই বিভিন্ন সূত্র ধরে নিরবের মা ও বাবাকে বুঝানোর চেষ্টা করেন। নিরবের বাবা এসব কানে নেয় না। সে ধর্মীয় গোঁড়ামির মানুষ। নামাজ কালাম আর পীর মুর্শিদ নিয়ে পড়ে থাকে। পার্থিব বিষয় তার কানে বাজে না। তাই নিরবের মাকেই সকলে বুঝাতে চেষ্টা করেন।

নিরবের মা কাউকেই কথা দেয় না, শুধু এই বলেই বিদায় দেয়- ছেলে তো আপনাদেরই। ভালমন্দ মানুষ আপনারাই করে দিবেন। আমার বাপু খরচ দিয়ে পড়ানোর সামর্থ্য নেই।

সেদিন রাতে কুপির আলোতে খেতে বসে নিরবের মা, নিরবের মেঝে ভাই আর সেজে ভাইয়ের সাথে কুপি বাতির আলোর মতই অনুজ্জ্বল আলোচনায় সিদ্ধান্ত নেয়- বাড়ির কাছে যে হাই স্কুল সেখানেই নিরবকে ভর্তি করাবে।

পরদিন সকালে নিরবের ছোট দুই বোন ময়না আর অহনা না খেয়েই গ্রামের প্রাইমারী স্কুলে গেল। ছোট দু’ভাই তারুন্য আর অরোন্য দু’খানা শুকনো রুটি খেয়ে স্কুলে গেল। তারা সকলেই পড়াশুনায় অনেক মেধাবী বটে। গ্রামের লোকেরা বলাবলি করতো- এ যেন গোবরে পদ্মফুল!

নিরব তার সেজো ভাই সরনের সাথে হাই স্কুলে গেল। প্রধান শিক্ষকের রুমে ঢুকলে তিনি অনেক আন্তরিকতার সাথে তাদের বসতে বলেন। নিরব দাড়িয়েই থাকে। তার ভাই প্রধান শিক্ষকের সামনে বসে বিনীতভাবে জানায়- তার ভাই এই স্কুলে ভর্তি হবে কিন্তু আপাততঃ তাদের কাছে কোন টাকা নেই। প্রধান শিক্ষক ক্রিং ক্রিং বেলে দু’চড় মারতেই আওয়াজে পিয়ন এসে হাজির। স্যার-
অফিস করনিক স্যারকে ডাকো।

জি স্যার।
তোহা স্যার আসলেন-স্যার, আসসালামু আলাইকুম।
ওলাইকুম আসসালাম। নিরবকে দেখিয়ে হেড স্যার বললেন, ‘ওকে চিনেন?
তোহা স্যারের জবাব, না স্যার।
ওর নাম নিরব।
স্যার চিনেছি। ও এবার প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় মহাকুমায় ফার্স্ট হয়েছে।

ওকে নিয়ে যান, ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করান। টাকা নিবেন না। আমার নামে লিখবেন।

‘জি স্যার’-বলে তোহা স্যার নিরবকে বললেন, বাবা আমার সাথে এসো।

এতক্ষনে স্কুলে জানাজানি হয়ে গেছে, হৃদয়ডাঙ্গা গ্রামের মেধাবী ছাত্র নিরব ভর্তি হতে এসেছে। অনেক ছাত্র ছাত্রী উঁকি দিয়ে নিরবকে এক নজর দেখে তৃপ্ত হয়।

নিরব ভর্তি হয়, কিন্তু ঐদিন ক্লাস না করে তার ভাইয়ের সাথে বাড়ি চলে যায়।

চলবে….
লেখক:
পুলিশ পরিদর্শক
পিবিআই, নরসিংদী জেলা।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো সংবাদ