সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ১২:৩৬ পূর্বাহ্ন
আবুল কালাম আজাদ: সরকার সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিত দুরত্ব মেনে চলাচলের জন্য গণপরিবহন, দোকানপাঠ খুলে দিয়েছে। শর্ত সাপেক্ষে বাতিল করা হয়েছে সরকারি বেসরকারি ছুটি। আমরা ৬৬দিন জীবণের যুদ্ধকেরেছি, এখন জীবণ জীবিকার যুদ্ধ দুটো একসাথেই এখন চলবে। নয়তো আমার দেশের মানুষ ভাল থাকবে না। অর্থনীতির চাকা সচল থাকবে না ইত্যাদি। সরকারের আন্তরিকতার অভাব ছিলনা বিগত আড়াই মাসে। দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে শুরু করে প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি সাংবাদিক সবাই চেষ্ঠা করেছেন মানুষকে ঘরে রাখতে। কিন্তু মানুষ কতটা ঘরে ছিল সেটা আমরা সবাই জানি। বিশেষ করে গত ঈদের আগের ১৫ দিনে আমরা দেখেছি, দেশের মানুষের কেনাকাটা আর চলাচলের অবস্থা। কাল থেকে আবার স্বরুপে ফিরবে আমার স্বদেশ। সীমতি পরিসর এখন হাসি ঠাট্টায় পরিনত হয়েছে। এর মুল কারণ আমাদের সচেতনতার অভাব। এদেশের মানুষ দেশ স্বাধীনের পর থেকেই সচেতন, আবার সবাই অসচেতন! এর কারণ অবশ্য নানাবিধ। কেউ শিক্ষিত হলেই সচেতন হবে
আর কেউ লেখাপড়া না জানলেই সচেতন হবে না, এমনটা ভাবার কোন কারণ নেই এখন। বিগত ৬৬ দিনের লকডাইন আমাদের তাই শিখিয়েছে। শিখিয়েছে আরো অনেক কিছু।সেটা হয়তো আরেকদিন আলোচনা করা যাবে। জীবণের প্রয়োজনের চেয়ে অপ্রয়োজনেই আমরা বেরিয়েছি বেশি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৌড়ানি দেখতেও আমরা বের হয়েছি। আর সামাজিক দুরত্ব তো এখন মানুষের কাছে বের হওয়ার একটা উপলক্ষ্য মাত্র।
এসব নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও নানা আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে। এতসব বিষয় সামনে এনেও আমরা সচেতন নই। তার প্রমাণ অহরহই দেখছি। রবিবার থেকে সীমতি পরিসরে অফিস আদালত খুলেছে। এতে সরকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু আজ যা দেখলাম তাতে মনে হলো আমরা ৬৬ দিন জেলখানায় ছিলাম। জেল থেকে মুক্ত হয়ে যেভাবে হাজতি মুক্ত আকাশ খুজেঁ। আমরাও তাই খুজছি। কোথায় স্বাস্থ্যবিধি, কোথায় সামাজিক দুরত্ব আর কোথায় প্রয়োজন আর অপ্রয়োজন। মানুষ যেন আবদ্ধ ঘর থেকে বের হতে উদ্রীব ছিল। বন্দি পাখির মতো ছাড়া পেয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েছেন সবাই। এখানে কে শিক্ষিত, আর কে অশিক্ষিত, তার চেয়ে বড় বিষয় এসব মানুষ সবাই ভাল কাপড় চোপড় পরিধান করেছেন, সবাই দেখতে ভদ্র মানুষের মতোই। চায়ের দোকান, খোলা পরিবেশ, চা বাগান, পাহাড়, রাস্তায়, যানবাহনে কোথায় নেই মানুষে পদচারণা।
সবাই যেন আলো বাতাসের বাইরে ছিলেন বহুকাল। একটু আলো বাতাস নিতেই বের হযেছেন। চা পান করতে দলে দলে আসছেন শহরের কানগুলোতে। দলবেধে হাটছেন শহরে। গ্রামের বাজারগুলো তো লকডাউনেও ছিল সরগরম। তাদের অনেকের মুখেই মাস্ক নেই, নেই স্বাস্থ্য সুরক্ষার কোন চিহ্ন। কেন আমরা এত উদাস, কেন এক অসচেতন, নাকি আমরা সচেতন হয়েও অসচেতন হয়ে চলছি। করোনা ভাইরাস সংক্রমন যখন দিনে ৫/৭ জন ছিল তখন আমরা মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাফস,সাথায় ক্যাপ পড়ে ঘুরে বেড়িয়েছি। আর আজ যখন দিনে আক্রান্ত আড়াই হাজার দাড়িয়েছে, তখন আমরা বেহুশ হয়ে স্বাস্থ্যবিধি বা সামাজিক দুরত্ব না মেনেই চলছি। একবারওকি ভাবছি, আমাদের এ অসচেতনা আমাদের কতুটুক ক্ষতির কারণ হতে পারে। আমরা অনেকেই এমন ধারনা করি বা জানি। কারণ ইতোমধ্যেই উন্নত রাষ্ট্রগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখেছি, তারা কতটা অসহায় ছিলেন, এখনও
আছেন। আমাদের দেশে সেটা হতে বাকি থাকবে না, যদি না আমরা সচেতন হই। স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, আপনার সুরক্ষা, আপনার কাছে। আমরা কি এর অর্থ বুঝে চলছি, নাকি বুঝেও না বুঝার ভান করছি। আমাদের এখনই সচেতন না হলে আমাদের অবস্থাও হতে পারে ইতালি কিংবা যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ফ্রান্স স্পেনের মতো। বর্তমানে ব্রাজিলে চলছে মহামারি। এসব দেখেও আমাদের শিক্ষা নেওয়া প্রয়োজন ছিল। আমরা কি নিতে পেরেছি শিক্ষা। অনেকেই বলবেন, আমাদের অবস্থা অনেক ভাল, আক্রান্তের ৮৬তম দিনে এসেও আমরা ভাল আছি। তা সঠিক। কিন্তু সেই ভাল থাকবে না যদি আমাদের সচেতন হয়ে স্বাস্থ্যবিধি ও আর সামাজিক দুরত্ব না মেনে চলি। কারণ আমাদের সামাজিক সংক্রমন শুরু হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে ঢাকা, নারায়নগঞ্জ এবং চট্টগ্রামে ব্যপক আকার ধারণ করেছে। আমাদের দেশে স্ংক্রমন এখন চরম পর্যায়ে গেছে, এটা বলাও যাবে না। এখন
আক্রান্ত বাড়ছে, সেটা কোথায় গিয়ে দাড়ায়, সেটাই এখন দেখার বিষয়। সংক্রমন আগামী ১৫ দিন ভবাবহ অবস্থায় যাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। তাই আমাদের সবকিছু করা সম্ভব হবে, আড্ডা, ঘুরাঘুরি, বিয়ে সাদি, বন্ধুবান্ধব সবকিছুই থাকেবে যদি আমরা বেচেঁ থাকি। তাই আমাদের এসব বিষয় ভাবার দরকার। বিশেষ করে তরুন, যুবকরা এসব নিয়ে ভাবার সময় পান না। তবে তাড়া আড্ডার সময়ই ঠিকই পান। আমার ধারণ আগামী ১৫/২০ দিন আমাদের নিজেদের প্রয়োজনে নিজেকে সুরক্ষায় রেখেই চলাচল করি। প্রয়োজনে মাস্ক, গ্লাফস পড়ে বের হই, অপ্রয়োজনে বের না হয়ে নিজে বাচিঁ, পরিবারকে বাচাই, অন্যকে বাচাই।
লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক , চুনারুঘাট।