করাঙ্গী নিউজ
স্বাগতম করাঙ্গী নিউজ নিউজপোর্টালে। ১৫ বছর ধরে সফলতার সাথে নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন করে আসছে করাঙ্গী নিউজ। দেশ বিদেশের সব খবর পেতে সাথে থাকুন আমাদের। বিজ্ঞাপন দেয়ার জন‌্য যোগাযোগ করুন ০১৮৫৫৫০৭২৩৪ নাম্বারে।

স্বাস্থ্যঝুকি ও খাদ্য সংকট: বিপাকে মধ্যবিত্ত: চ্যলেঞ্জ মোকাবেলায় চাই সমন্বিত পদক্ষেপ

  • সংবাদ প্রকাশের সময়: রবিবার, ৩ মে, ২০২০

এড. মইনুল হাসান দুলাল:
বিশ্বের প্রতিদিন বেড়েই চলেছে লাশের মিছিল। ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট যুক্তরাজ্যের মতো দেশ আজ অসহায়। মহামারী করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলা
করা না গেলে গোটা বিশ্ব খাদ্য সংকটে পড়বে এতে সন্দেহ নেই।

কোভিড-১৯ এর ভয়াল থাবায় থমকে গেছে বিশ্ব অর্থনীতির চাকা। বিশ্বের অর্ধেকের বেশি মানুষ  এখন লকডাউনে। রপ্তানির ওপর নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ হওয়ার কারণে খাদ্যের  পর্যাপ্ত সরবরাহ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে, যা বিশ্ববাজারে খাদ্যের ঘাটতি তৈরি করেছে। এই পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সরবরাহ যেন বিঘ্নিত না হয়, তা নিশ্চিত করতে এবং বিশ্ববাণিজ্য যতটা সম্ভব মুক্তভাবে চলাতে বেশ কিছু দেশ লকডাউন শিথিল করতে শুরু করছে।

আমাদের দেশে ২৬শে মার্চ থেকে সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি চলছে। দেশে দৈনিক উপার্জনের উপর নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা প্রায় ৫
কোটি। নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে এ মানুষগুলো কর্মহীন হয়ে পড়েছে। ক্রমেই তীব্র হয়ে ওঠা এমন খাদ্য সংকটের মুখে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায়
রয়েছে দৈনিক রোজগার করা এই মধ্যম আয়ের মানুষ। আত্মসম্মান বোধের বিবেচনা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে ত্রাণ সংগ্রহ করতে না পারায় অনেক পরিবার চরম
খাদ্য সংকটের মুখোমুখি হয়েছে।

এদিকে প্রাণঘাতী (কোভিড-১৯) কারণে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য দেশে সাড়ে ৩ কোটি মানুষের হাতে ত্রাণ  তুলে দিয়েছে সরকার। ২৪ এপ্রিল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রাণলয়ে বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে তথ্যমন্ত্রালয়। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে ৩৫ লাখ ২২ হাজার পরিবারের হাতে নগদ সাহায্য হিসেবে ৩২ কোটি ৩০ লাখ টাকা, সেই সঙ্গে এ যাবত বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৯৩ হাজার ১৭০ মেট্রিক টন চাল এবং নগদ ৩৯ কোটি ৭৯ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। কিন্তু সরকারের এই বরাদ্ধকৃত ত্রানের সুষম বন্ঠন হয়েছে কী-না তা নিয়ে রয়েছে নানাবিধ প্রশ্ন। ১৮ কোটি জনগোষ্টির মধ্যে সারে ৩ কোটি মানুষকে ত্রান দিলে জনসংখ্যার এক পঞ্চমাংশ (প্রতি ৫ জনে ১জন) মানুষের হাতে বরাদ্ধকৃত ত্রান পৌছার কথা। কিন্তু এই মুহুর্তে ত্রান বিতরণে অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি ও আত্মসাতের খবরে দেশবাসী হতবাক হয়েছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলেছে সমালোচনার ঝড়। তবে অনেক জনপ্রতিনিধি সরকারী বরাদ্দের পাশাপাশি জীবনের ঝুকি নিয়ে নিজস্ব তহবিল থেকেও দিন-রাত নিরলস ভাবে কর্মহীনদের দ্বারে খাবার পৌছে দিয়ে মানবিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছেন।

আমাদের প্রধান রপ্তানী অংশীদার মার্কিন যুক্তরাষ্ট, জার্মানী যুক্তরাজ্য ফ্রান্স ইতালি। এসব দেশে করোনা মহামারী রূপ ধারণ করেছে। ২০১৯ সাল বাংলাদেশে রেমিটেন্স এসেছে ১৮৩৩ কোটি মার্কিন ডলার কিন্তু গেলো ২ মাসে প্রবাসীরা কর্মহীন হয়ে পড়ায় দেশে রেমিটেন্স অনেকাংশেই কমে গেছে। দেশে মোট জিডিপির ১৬ শতাংশ পুরণ করে তৈরী পোষাক, যা সর্বমোট রপ্তানীর ৮৩%।

ইতিমধ্যেই তৈরী পোষাক শিল্প কারখানা খুলে দেয়ায় অনেক শ্রমিক আক্রান্ত হয়েছেন যা সরকারকে ভাবিয়ে তুলেছে। মোট দেশজ উৎপাদনের (ডিজিপি) প্রবৃদ্ধিকে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে নিতে অবদান রাখে মাত্র ৫টি খাত।

অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি হিসাবে প্রমাণিত এই খাত গুলো হচ্ছে:-
উৎপাদান, পাইকারী ও খুচরা ব্যবসা, পরিবহন, কৃষি ও নির্মান। ছোট বড় কল কারখানা গুলো উৎপাদন খাতে অবদান রাখে, কিন্ত বর্তমান পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক
উৎপাদন করতে পারছে না এ শিল্প। পাইকারী ও খুচরা ব্যবসা গত বছর জিপিপিতে ১৩ দশমিক ৯২ শতাংশ অবদান রাখলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেকটাই গুটিয়ে গেছে। সারাদেশ লকডাউন থাকায় পরিবহন খাতের নাজুক অবস্থা বিরাজমান, কৃষি খাতের অবদান জিডিপিতে ১০ শতাংশ। বর্তমানে বোর মৌসুম চলায় ও কৃষকরা নির্ভিগ্নে ধান ঘরে তুলতে পারায় এর অবদান কমছে না। নির্মান খাত চলছে খুড়িয়ে খুড়িয়ে। যার কারণে ৬৭% অবদানের এই ৫টি খাতের এহেন পরিস্থিতি সাধারণ মানুষের উপর চরম প্রভাব ফেলতে শুরু করায় খাদ্য সংকটের বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার অবকাশ নেই। এদিকে খাদ্য সংকট মোকাবেলায় সরকার থেকে বলা হয়েছে, প্রায় ৮ লাখ মেট্রিক ধান, ১০ লাখ মেট্রিক টন চাল ক্রয়ের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

তাছাড়া ধান কাটাও শুরু হয়ে গেছে। অর্থনীতি বাঁচাতে সরকারে নেওয়া প্রণোদনা প্রায় ৯৫ হাজার ৬১৯ কোটি টাকা। কৃষিখাতে আরও বেশি। মাত্র ৪ শতাংশ সুদে কৃষি ঋণ দেয়া হবে। সরকারি গুদামে যেমন পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার মজুদ রয়েছে। এজন্য কৃষি-সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বীজ, সার, কীটনাশকসহ সব ধরনের কৃষি উপকরণের ঘাটতি যাতে না হয় এবং সময়মতো কৃষকের হাতে পৌঁছানোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

কৃষকেরা যাতে উৎপাদিত বোরো ধানের ন্যায্যমূল্য পান সেজন্য চলতি মৌসুমে গত বছরের চেয়ে ২ লাখ
মেট্রিক টন অতিরিক্ত ধান ক্রয় করা হবে । কিন্ত বাস্থবতা হলো, দেশে মানুষের উপার্জন প্রায় ৭০ শতাংশ কমে এসেছে। একদিকে করোনার সংক্রমনতা বৃদ্ধি অন্যদিনে মানুষের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট। আশঙ্কা করা হচ্ছে- করোনা-উত্তর দেশে চরম খাদ্য সংকট তৈরি হবে। যেভাবে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে, সেটা আসলে খুব একটা নিরাপদ পদ্ধতিতে হচ্ছে না। এতে অরো বেশি মানুষ আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে ইনকাম সাপোর্ট কর্মসূচি নিতে হবে। সংকট উত্তরণের পথ হিসেবে সরকারকে এখন দ্রুত সংকটে থাকা কর্মহীনদের ডাটার ভিত্তিতে মোবাইল ব্যাংকিং চালুর মধ্য দিয়ে নগদ টাকা পৌঁছাতে হবে।

সংকট মোকাবেলায় এরই মধ্যে সরকার অনেক বড় প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, এগিয়ে আসছেন বিত্ত্বশালীরা, স্বল্পাকারে হলেও নিরাপদে উৎপাদন চালাতে হবে, নিরাপত্তার বলয়ে শিথিল করতে হবে লকডাউন। বাধাহীন রয়েছে কৃষি খাত আমাদের একখন্ড জমিও ফেলে রাখা চলবে না। সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহন এবং বাস্তবায়নের মাধ্যমেই চলমান সংকট উত্তোরণের করতে হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

লেখকঃ আইনজীবী, সাংবাদিক ও কলামিষ্ট।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো সংবাদ