শনিবার, ১০ মে ২০২৫, ০৪:৪৫ অপরাহ্ন
তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি:
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় একের পর এক ডুবছে হাওর। এর পরও লাখ লাখ কৃষকের সম্বল বোরো ফসল রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের খবর নেই। ফাটল ও দেবে যাওয়া অংশে সংস্কারের কোনো কাজই করছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। যে কোনো সময় ঘটতে পারে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।
আর কষ্টের ফলানো সোনার ফসল পানিতে ডুবে যাওয়ার আশঙ্কায় ঝড়ছে কৃষকের চোখের পানি। বেড়ি বাঁধ ভেঙ্গে হাওরে পানি প্রবেশ করার কারণে এ পর্যন্ত প্রায় কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হলেও বাঁধ নির্মাণকারীদের বিরুদ্ধে এখনো আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে নি সরকার।
উপজেলার ছোট বড় ২৩টি হাওরে উৎপাদিত ২শ’ কোটি টাকার ফসলের উপর নির্ভর করেই জীবন চলে লাখ লাখ কৃষকের। এখন হাওরের ফসল রক্ষায় তাদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে, বাঁধ রক্ষায় রাত জেগে পাহারা দিচ্ছে প্রতিটি কৃষক। আর বাঁধ নির্মাণকারীদের বিরুদ্ধে ও বাঁধ রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জোরালো কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় লাখ লাখ কৃষকের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
অভিযোগ রয়েছে-গত ২৮শে ফেব্রুয়ারির মধ্যে এই উপজেলার ২৩টি হাওরের মধ্যে ১৬টি হাওরের বেড়ি বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ করার সরকারি নির্দেশ থাকলেও ৪০ ভাগ কাজও শেষ করে নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদার ও পিআইসিগণ নিজেদের খেয়াল খুশিমতো বাঁধের উপর থাকা গাছপালা কেটে পরিষ্কার না করে, বাঁধের দুই পাশ থেকে মাটি উত্তোলন করে কোনো রকম দায়সারাভাবে বাঁধ নির্মাণ করেছে। নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে মাটি এনে, বস্তায় মাটি ভরে, বাঁশ দিয়ে প্রতিরক্ষা বাঁধ দেয়ার নিয়ম থাকলেও এখানে তা কেউ শুনে নি।
এসব অনিয়মের কারণে গত কয়েক দিনের বৃষ্টির পানিতে বাঁধগুলো ভাঙতে শুরু করেছে।
জানা যায়-গত শনিবার ভোরে টাংগুয়ার হাওরের গোলাবাড়ি সংলগ্ন নজরখালি বাঁধটি বৃষ্টির পানির সামান্য চাপে ভেঙ্গে পানি হাওরে প্রবেশ করে। এতে করে সামসাগর, বেরবেড়িয়া, দশহালিয়া, লামগুল হাওরের প্রায় ৩ শত হেক্টর কাঁচা, আধা পাকা বোরো জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিতে তলিয়ে যাওয়া হাওরের কাঁচা, আধা পাকা ধান কাটছে কৃষকরা। সিএনআরএস টাংগুয়ার হাওর রক্ষণাবেক্ষণ কেন্দ্রীয় কমিটি টাংগুয়ার হাওরের এ বেড়ি বাঁধটি নির্মাণ করে।
এ ছাড়াও উপজেলার বোয়ালমারা, নাওটানা, মহালিয়া শনির হাওর, মাতিয়ান হাওর, লোভার হাওর, বলদার হাওর, লালুয়া গোয়ালা বাঁধ মেশিন বাড়ির বাঁধ, টাঙ্গুয়ার হাওরসহ বিভিন্ন হাওরের বাঁধ দেবে গেছে ও ফাটল দেখা দিয়েছে আর সেই ফাটল দিয়ে পানি হাওরে প্রবেশ করছে। যে কোনো সময় বাঁধগুলো ভেঙ্গে যাবে জানান স্থানীয় এলাকাবাসী।
সাদেক আলী, শোভন, উত্তম পুরকায়স্থ, অপু তালুকদারসহ হাওরপাড়ের কৃষকগণ জানান, বৃষ্টির পানি বাড়ছে, নদীতে পানি ভরে গেছে আর পাহাড়ি ঢল এলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তৈরি বালির বাঁধ ভেঙ্গে পানি হাওরে প্রবেশ করবে। ক্ষতি হবে কোটি কোটি টাকার কষ্টের ফলানো সোনার ফসল। হাওরে নির্মিত বেড়িবাঁধ কৃষকদের ফসল রক্ষার্থে কোনো উপকারে না এলেও বাঁধ নির্মাণের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের পকেট ভারি হয়েছে আর প্রতি বছর দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছে পাউবো।
তাহিরপুর উপজেলার সচেতন এলাকাবাসী বলেন- বাঁধ নির্মাণে প্রতি বছর সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করলেও বাঁধ নির্মাণ সঠিক ভাবে হচ্ছে না। পুকুর চুরি না একবারে ডাকাতি করেছে সংশ্লিষ্টরা। বাঁধ নির্মাণে অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাসহ জরিমানা করা প্রয়োজন।
তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুস ছালাম জানান- হাওরের বাঁধগুলো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। বাঁধ ভেঙ্গে ও অন্যান্য কারণে উপজেলার প্রায় ৫% বেশি বোরো ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বলেন-আমি সরজমিনে বিভিন্ন হাওরে গিয়ে দেখেছি, সঠিকভাবে বাঁধ নির্মাণ না করার কারণে হাওরের প্রতিটি বাঁধ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। যে কোনো সময় অনাকাঙ্ক্ষিত গঠনা ঘটতে পারে।