করাঙ্গী নিউজ
স্বাগতম করাঙ্গী নিউজ নিউজপোর্টালে। ১৫ বছর ধরে সফলতার সাথে নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন করে আসছে করাঙ্গী নিউজ। দেশ বিদেশের সব খবর পেতে সাথে থাকুন আমাদের। বিজ্ঞাপন দেয়ার জন‌্য যোগাযোগ করুন ০১৮৫৫৫০৭২৩৪ নাম্বারে।

প্রধানমন্ত্রীর খাদ্য সহায়তা বন্টন বৈষম্য ও প্রস্তাব

  • সংবাদ প্রকাশের সময়: বৃহস্পতিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২০

কাদির চৌধুরী বাবুল: করোনা মহামারিতে বাংলাদেশের কোনো কোনো জেলা লকডাউন করা হয়েছে। মানুষের ঘরে ঘরে চলছে খাদ্য সংকট। বিপদে পড়েছে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত। কাজ নেই, রুজি নেই। ঘর থেকে বের হওয়ার হুকুম নেই। সরকার সার্বিক বিবেচনায় খাদ্যের ব্যবস্থা করলেও হচ্ছে না সুষম বন্টন ৷ প্রশাসন বিভিন্নভাবে অনলাইনে নিচ্ছেন সাহায্য প্রার্থীর তালিকা। কোনো জনপ্রতিনিধি তালিকা করছেন ভোটের বিবেচনায়। কোথাও হচ্ছে দলীয় বিবেচনায়।

একটি বিশ্বাস যোগ্য তালিকা প্রণয়ন ও বন্টন নিয়ে বিশ্বাস ও অবিশ্বাস নানান বক্তব্য চলছে। কেউ যেনো বিশ্বাসের মাপকাঠিতে উঠতে পারছেন না। কেউ বলছেন বন্ঠন করবে সেনাবাহিনী, কেউ বলছেন প্রশাসন। কেউ বলছেন জনপ্রতিনিধি।

অধিকাংশ জনগণ বলছেন পরীক্ষিত দেশপ্রেমিক রাষ্ট্রের সেনাবাহিনী এই দায়িত্ব নিলে ভালো হবে। খাদ্যের সুষম বন্টন হবে। কোন দূর্নীতি হবে না। সবই হবে, কিন্তু সব কিছুর মূলে একটি স্বচ্ছ তালিকার দরকার। প্রশ্ন আসছ— মূলতঃ স্বচ্ছ তালিকাটা করবে কে? তালিকায় প্রকৃত সাহায্য প্রার্থীর নাম কী তালিকাভুক্ত হবে? আমাদের সেনাবাহিনী খাদ্য বন্টনের দায়িত্ব নিলেও কোনো কোনো বিবেচনায় সুষম বন্টন হবে না। কারণ আমাদের সেনাবাহিনী গ্রামে গ্রামে, মহল্লায়, পাড়ায় পাড়ায় হেঁটে, মানুষের অবস্থা জেনে তালিকা করে খাদ্য বিতরণ করা কঠিন। তাই তালিকার বেলায় গাফলতি থেকেই যাবে। এতে প্রকৃত খাদ্য প্রার্থীদের নাগালের বাহিরেই প্রধানমন্ত্রীর খাদ্য উপহার থেকে যাবে। সামনে রমজান মাস।

করণীয় কী!
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শিক্ষক সমাজ অনেক কাজের আস্থা ও ভরসার স্থল। আমাদের দেশে শিক্ষকগণকে রাজনীতিক বিবেচনায় হেয় প্রতিপন্ন করে রাখলেও বিশ্বের অনেক দেশে শিক্ষকই প্রধানতঃ সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী। একজন সরকারী প্রধান শিক্ষক এলাকার মানুষের ভালোমন্দ সার্টিফাই করার ক্ষমতা রাখেন। প্রশাসনিক অনেক ক্ষমতা রাখেন। কিন্তু দেখুন, আমি বলছি — এই ক্রান্তি লগ্নে দেশের জন্য আমাদের সকলেরই অবদান রাখতে হবে। আজ কোনো কারণে কোন দেশের সাথে যুদ্ধ বাঁধলে আমাদের গর্বিত সেনাবাহিনী আগে থাকবে, অন্যান্য বাহিনী অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধে নামবে। আমরা কী বসে থাকতে পারবো? না, সম্ভব নয়, আমাদেরও অস্ত্র হাতে নিবে। করোনা রোগ মহামারিতে আজকে প্রথম সাঁরির যোদ্ধা কারা? নিশ্চয় আমাদের দেশ প্রেমিক ডাক্তারগণ। গতকাল ও আজ দুজন ডাক্তার মারা গেলেন। ডাক্তারগণও হাত গুটিয়ে বসে থাকতো পারতো কিন্তু তা করেন নি। দেশের মানুষকে বাঁচাতে ঘর ছেড়েছেন। যদিও তাঁরা জানতো, করোনায় তাদের মৃত্যু হতে পারে। আমাদের এই করোনা যুদ্ধ হলো ভিন্ন। যতো বেশি জনগণকে ঘরে রাখা যাবে ততই লাভ, যুদ্ধ জয় হবে দ্রুত। কেন না মানুষ খাদ্যের অভাবে ঘর হতে বের হলে করোনা যুদ্ধ শুধু বিলম্বিতই হবে। মানুষ ঘর হতে একটি কারণেই বের হবে— তাহলো খাদ্যের প্রয়োজনে। কোনো বাবা তার সন্তানের ভুখামুখ দেখতে চাইবেন না। চুলোয় হাঁড়ি বসছে না, চাল ডালের অভাবে। এই চিত্র কোনো মানুষ সহ্য করতে পারবে না। পেটের ক্ষিদের কাছে সবই তুচ্ছ। করোনা তুচ্ছ! মৃত্যু তুচ্ছ! আইন তুচ্ছ! সবই তুচ্ছ!
তাহলে আমাদের আগে কী প্রয়োজন?

খাদ্যের সুষম বন্টন ব্যবস্থা। সুষম বন্টন ব্যবস্থায় অধিক লাভ; খাদ্যের অপচয় হবে না। কম খাদ্য হলেও সকলের কাছে পৌছবে। চুরি হবার সম্ভাবনা নেই। সুষম বন্টনের দরুন প্রকৃত অভাবীর কাছে খাদ্য পৌছবে। মানুষ আইন শৃঙ্খলা মেনে ঘরে থাকবে। দ্রুততম সময়ে করোনা মাহামারি নিস্কৃত হবে। এখন আমাদের দ্রুত সময়ে ভাবা উচিত কীভাবে দ্রুততম সময়ে প্রকৃত তালিকা করে দ্রুত খাদ্য পৌঁছে দেওয়া যায়। আমরা অন্যান্য দেশকেও ফলো করতে পারি।

আমরা জানি, প্রতিটি গ্রাম, শহরের পাড়ায় পাড়ায় একটি করে প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। প্রধান শিক্ষকের হাতে ক্যাচম্যাপ আছে। প্রধান শিক্ষক/শিক্ষকরা জানেন এই গ্রাম/পাড়ায়/মহল্লায় কে গরীব, কে ধনী। আমার বিবেচনায় প্রতিটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে তার ক্যাচম্যাপ এলাকার তালিকা প্রণয়ন কমিটির প্রধান করে দ্রুত তালিকা করা উচিত। সাথে বিভিন্ন বিবেচনাপ্রসূত আরো চারজন সদস্য যুক্ত করে একটি করে টিম করা উচিত। টিমের সদস্যগণ নির্বাচিত করে দিবেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার।

টিমের কাজ হবে দ্রুত সময়ে সাহায্য প্রার্থীর নামের তালিকা করা। তালিকামতো প্রত্যেককে একটি করে প্রিন্টেড কর্ড ইস্যু করা। এই কার্ড বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক/কমিটির প্রধান এক্তিয়ার ও ক্ষমতা বলে প্রদান করবেন। উক্ত তালিকা মতে খাদ্য বিতরন করবে খাদ্য বিতরণ কমিটি। এই কমিটির প্রধান হতে পারেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। বিভিন্ন বিবেচনাপ্রসূত সারা উপজেলায় ইউপি চেয়ারম্যানসহ ১০/১২ জন সদস্য নির্বাচিত হবেন। ইউনিট প্রধান হবেন ইউপি চেয়ারম্যান। চেয়ারম্যান স্বভাবিকভাবেই কর্তৃত্ব করবেন, বিশেষ এক্তিয়ারে তালিকায় সংযুক্তি/বৃদ্ধি করবেন, তালিকা কর্তন করবেন না। মূল উপজেলা কমিটির সদস্য নির্বাচিত করে দিবেন জেলা প্রশাসক।

প্রধান শিক্ষক/কমিটি প্রধান তাঁর ক্যাচম্যান এলাকার তালিকা করে উক্ত তালিকা জমা দিবেন মূল কমিটির প্রধানের কাছে। প্রধান দ্রুততম সময়ে তাঁর সদস্যগণকে নিয়ে তালিকা অনুযায়ী দ্রুত সময়ে খাদ্য বন্টনের ব্যবস্থা করবেন। বন্টনের সময় কার ঘর পাকা, কার ছেলে বিদেশ থাকে, কার বা কী আছে, কার কী নেই এই সব প্রশ্নের সম্মুখীন কেউ হতে পারবে না। তালিকা কমিটির প্রধান তাঁর ক্যাচম্যান এলাকা হতে যাকে যাকে খাদ্য সহায়তার অাওতায় এনেছেন তারা কার্ড দেখিয়ে বিনাবাক্যে সাহায্য পাবেন। (কার্ডে বন্টনকারীর স্বক্ষর/সীল দিতে পারেন)। কার্ড না দেখিয়ে কোনো ব্যক্তি খাদ্য নিতে পারবেন না। বন্টন কাজে ব্যবহৃত হবে উপজেলার ম্যানপাওয়ার, প্রকৃত সামাজিক সংগঠন, সরকারি রিসোর্স, প্রয়োজনে পাবলিকের গাড়ি। বন্টন কাজে সহযোগিতা করবেন দেশ প্রেমিক পুলিশ প্রশাসন। কোনো ক্ষেত্রে আমাদের দেশ প্রেমিক সেনাবাহিনী— যাতে কেউ কোন বিশৃঙ্খলা না করতে পারে।

খাদ্য বন্টন পক্রিয়াঃ গ্রাম/পাড়া/বস্তির ঘরে ঘরে পৌছে দিবেন।

বন্টন তদারকিঃ খাদ্য তালিকামতো সবার হাতে খাদ্য পৌছলো কি না, একটি মনিটরিং টিম থাকবে। একটি অভিযোগ সেল থাকবে। তালিকায় নাম ও কার্ড থাকা সত্ত্বেও খাবার না পেলে মনিটরিং সেল ব্যবস্থা নিবে।
আইনঃ দুর্নীতি হলে সকল সাজা সাধারণ আইন ও মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে হতে পারে।

লেখক: শিক্ষক ও কো-অর্ডিনেটর,
পুওর কেয়ার কুইক রেসপন্স টিম, বাহুবল, হবিগঞ্জ।
Email : kadirchygmail.com

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো সংবাদ