শনিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:৫৮ অপরাহ্ন
বড়লেখা (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি : মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত বোবারথল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। গত দুই মাস ধরে ৫ শতাধিক শিক্ষার্থীর পাঠদানের দায়িত্বে রয়েছেন মাত্র একজন শিক্ষক! দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক সংকটের কারণে স্বাভাবিক শ্রেণি কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ায় শিক্ষার্থীরা স্কুলবিমুখ হয়ে পড়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে- উপজেলায় এমনও স্কুল রয়েছে, যেখানে ছাত্রসংখ্যা ১শ’র নিচে। অথচ শিক্ষক সংখ্যা পাঁচের অধিক। সেসব স্কুল থেকে ডেপুটেশনে শিক্ষক পদায়ন করে এ স্কুলের পাঠদান চালিয়ে নেয়া সম্ভব বলে অনেকেই মন্তব্য করছেন। কিন্তু সেদিকে শিক্ষা অফিসের যথাযথ নজর না দেয়ায় ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।
সূত্রমতে, উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউপি’র বোবারথল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্যাটার্নভুক্ত ৯ জন শিক্ষকের স্থলে বছরের পর বছর ৩ শিক্ষক দিয়েই শ্রেণি কার্যক্রম চালিয়ে নেয়া হয়। এতে শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিক পাঠগ্রহণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এক বছর আগে ৩ জন শিক্ষকের ১জন নিজ জেলায় বদলি হলে শিক্ষক সংকট আরও তীব্র আকার ধারণ করে। গত ৭ মার্চ অবশিষ্ট ২ জন শিক্ষকের একজন, শিক্ষিকা ফরিদা ইয়াসমিনও নিজ জেলা নেত্রকোণায় বদলি হয়ে গেলে প্রধান শিক্ষক আব্দুস শাকুর খানকে একাই ৯ শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে।
সরেজমিনে গেলে প্রধান শিক্ষক আব্দুস শাকুর খান জানান- বিদ্যালয়ের ৫শ’ শিক্ষার্থীকে তিনি একাই পড়ান। উপজেলা সদর হতে ২২ কিলোমিটার দূরবর্তী এ বিদ্যালয় থেকে সপ্তাহে ২দিন সমন্বয় সভাসহ বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহের কাজে তাকে শিক্ষা অফিসে যেতে হয়। কোনো শিক্ষক না থাকায় বাধ্য হয়ে তখন বিদ্যালয় ছুটি দিতে হয়। এছাড়া সকালের শিফটের প্রাক-প্রাথমিকসহ তিনটি ক্লাস রয়েছে। এক ক্লাসে গেলে ফাঁকা দুই ক্লাসের শিক্ষার্থীর হাল্লা-চিৎকারে পাঠদান তো দূরের কথা, তাদের নিয়ন্ত্রণ করাই কঠিন হয়ে পড়ে। দ্বিতীয় শিফটেও তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির তিনটি ক্লাসের একটিতে গেলে অপর দুই ক্লাসের শিক্ষার্থীরা অতিষ্ঠ করে তোলে। ঠিক মতো ক্লাস না হওয়ায় ক্রমশ শিক্ষার্থীরা স্কুলবিমুখ হয়ে পড়ছে।
এলাকাবাসী জানান- বোবারথল এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে যতোক্ষণ পর্যন্ত শিক্ষক নিয়োগ দেয়া না হবে, ততোক্ষণ পর্যন্ত বোবারথল সপ্রাবি’র শিক্ষক সংকট নিরসন সম্ভব হবে না। কারণ বিদ্যালয়টি দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় হওয়ায় দূরবর্তী কোনো শিক্ষক সেখানে যাওয়া-আসা করে পাঠদান সম্ভব নয়।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়- বোবারথল গ্রামের ভেতরেই সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার মতো যোগ্যতাসম্পন্ন নারী-পুরুষ রয়েছেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে তাদের চাকরি দেয়া হয় না। কোনো সুযোগও দেয়া হয় না।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা অরবিন্দ কর্মকার জানান- বোবারথল স্কুলে শিক্ষক সংকট নিরসনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও অবহিত করা হয়েছে।