করাঙ্গী নিউজ
স্বাগতম করাঙ্গী নিউজ নিউজপোর্টালে। ১৫ বছর ধরে সফলতার সাথে নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন করে আসছে করাঙ্গী নিউজ। দেশ বিদেশের সব খবর পেতে সাথে থাকুন আমাদের। বিজ্ঞাপন দেয়ার জন‌্য যোগাযোগ করুন ০১৮৫৫৫০৭২৩৪ নাম্বারে।

শ্রীমঙ্গলে কনকনে শীতে পর্যটকের ভিড়

  • সংবাদ প্রকাশের সময়: সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৯

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি : শ্রীমঙ্গলে জেঁকে বসেছে শীত। এরই মধ্যে পর্যটন কেন্দ্র চা’য়ের রাজধানীখ্যাত শ্রীমঙ্গলে বাড়তে শুরু করেছে পর্যটকের ভিড়।

শুক্রবার ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন থাকায় শ্রীমঙ্গলের পর্যটন স্পটগুলোতে ছিল পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়। প্রকৃতিতে বইছে মৃদু শৈত্য প্রবাহ।

প্রাকৃতিক কারণে শ্রীমঙ্গল বৃষ্টি ও শীতপ্রবণ এলাকা। ফলে শৈত প্রবাহের কারণে শ্রীমঙ্গলে আরও তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে।

শুক্রবার বিকেল ও শনিবার দুপুরে কয়েকটি পর্যটন স্পট ঘুরে দেখা যায়, স্থানীয় ও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসা ভ্রমণ পিপাসুদের মিলনমেলা।

এর মধ্যে শহরের একেবারে কাছে অবস্থিত বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন বধ্যভূমি একাত্তর, গ্রান্ড সুলতান টি রিসোর্ট এন্ড গলফ, মহাজেরাবাদ জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদ, ভাড়াউড়া লেক, ডিনিস্টন সেমেট্রি, গলফ মাঠ, লালঠিলা, নিরালা ও লাউয়াছড়া পানপুঞ্জি, বন্যপ্রানী সেবাশ্রম, রমেশের নীলকন্ঠ সাতকালার চা কেবিন ও জেরিন চা বাগান পর্যটন স্পটে পর্যকদের পদচারণা ছিল মুখরিত।

শ্রীমঙ্গল ছাড়াও পার্শ্ববর্তী কমলগঞ্জ উপজেলার হাম হাম জলপ্রপাত, মাধবপুর লেক, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, খাসিয়া পুঞ্জি, বড়লেখার মাধবকুণ্ড ঝর্ণা, কুলাউড়ার হাকালুকি হাওর, সিলেটের জাফলং, বিছানাকান্দি, রাতারগুল, লালা খাল, সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর, শিমুলবাড়ি, ভোলাগঞ্জ সাদা পাথরের কোয়ারী, শাহজালাল (রহ:) ও শাহপরান (রহঃ) এর মাজার শরীফ, কিন ব্রীজ, আলী আমজাদের ঘড়িসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান দেখতে হাজারো পর্যটক এসব এলাকায় ভিড় করছেন বলে জানা গেছে।

ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গলে ঘুড়তে আসা রহিমা আক্তার জানান, মূলত তাদের উদ্দেশ্য শ্রীমঙ্গলের সবুজ চায়ের বাগান দেখা, তাই চা-বাগানের আশপাশের দর্শনীয় স্থান গুলো ঘুরে দেখেছেন।

সঙ্গে থাকা তার ছোট বোন খাদিজা আক্তার সান্তনা ও জান্নাত জানান, চা-বাগানের আশপাশের স্পটগুলো তারা ঘুরে দেখেছেন। বিশেষ করে সবুজে ঘেরা চা-বাগান দেখে তারা মুগ্ধ।

জান্নাত বলেন, ‘শুধু সবুজ প্রকৃতি নয়, আমরা শ্রীমঙ্গলে এসে এবার শীত উপভোগ করছি। যা ইট পাথরের ঢাকা শহরে পাই না।

এদিকে পর্যটন শিল্পকে ঘিরে আবাসিক হোটেল -রিসোর্টগুলো এখন পর্যটকে ঠাসা। হোটেল রিসোর্টগুলোতে গত বছরে ডিসেম্বরের মতো এবারও পর্যটক আশানুরূপ।

জানুয়ারিতে দেশি- বিদেশি পর্যটক সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশা করছেন হোটেল ব্যবসায়ীরা। শ্রীমঙ্গলের পাঁচ তারকা মানের হোটেল গ্রান্ড সুলতান টি রিসোর্ট এন্ড গলফ সূত্রে জানা গেছে, বড় দিন ও থার্টি ফার্স্ট নাইটকে ঘিরে অধিকাংশ রুম বুকড হয়ে গেছে। অতিথিদের স্বাগত জানাতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

শহরের প্যারাডাইজ লজ গেষ্ট হাউসের কর্ণধার আবুজার বাবলা বলেছেন, এরই মধ্যে তাদের অধিকাংশ রুম ভাড়া হয়ে গেছে।

গত দুদিন ধরে শ্রীমঙ্গলে সূর্যের দেখা পাওয়া গেছে খুবই অল্প। শনিবার দিনজুড়ে আবহাওয়ায় ছিল কুয়াশাচ্ছন্ন। তবে দিনে-রাতে ঘন কুয়াশাচ্ছন্ন ছিল সারা উপজেলা। সূর্যের দেখা না পাওয়ায় শীতের তীব্রতা বাড়ছেই।

শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিসুর রহমান জানান, শনিবার সকালে শ্রীমঙ্গলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের আবহাওয়া সহকারি কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম জানান, সূর্যের দেখা না পাওয়ায় শীতের তীব্রতা বেড়েছে। মৃদু শৈত্য প্রবাহের কারণেও শীত বাড়ছে।

তবে আগামী কয়েকদিনে কুয়াশা কেটে গেলে শীতের তীব্রতা আরও বাড়তে পারে বলে শ্রীমঙ্গলের আহাওয়া পর্যবেক্ষক মুজিবুর রহমান জানান।

আবহাওয়া অফিসের রেকর্ড মতে, ১৯৬৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি শ্রীমঙ্গলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ২.৮ ডিগ্রি এবং ১৯৬৬ সালের ২৯ জানুয়ারি সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৩.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল।

এছাড়া ১৯৯৫ সালের ৪ জানুয়ারি, ২০০৭ সালের ১৭ জানুয়ারি এবং ২০১৩ সালের ১০ জানুয়ারি শ্রীমঙ্গলে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শীতের তীব্রতায় খেটে খাওয়া দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষজন পড়েছেন বিপাকে।

বিশেষ করে চা বাগান ও সীমান্ত ঘেষা অঞ্চলে দরিদ্র চা শ্রমিক ও শহরের ছিন্নমূল মানুষ শীত বস্ত্রের অভাবে নিদারুন দুর্ভোগে পড়েছেন। এসব চা বাগানে অনেক শ্রমিকদের আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করতে দেখা গেছে।

এদিকে শীতের কাপড়ের দোকানগুলিতে ভিড় করছে মানুষ। শহরের পুরান কাপড়ের একমাত্র বিক্রয় কেন্দ্র সাইফুর রহমান মার্কেটে ভিড় দেখা গেছে ধনী-গরীব সব শ্রেণির মানুষের।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আছাদুজ্জামান জানান, ইতোমধ্যে শ্রীমঙ্গল উপজেলার শীতার্ত মানুষের মাঝে বিতরণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রান ভাণ্ডার থেকে ৪ হাজার ৬৮০টি কম্বল বরাদ্দ পাওয়া গেছে।

তাছাড়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান মন্ত্রনালয় থেকে ১ হাজার ১১১টি কম্বল বরাদ্দ এসেছে, যা ইতোমধ্যে উপজেলার শীতার্ত মানুষের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।

যদিও সরকারি এই বরাদ্দ চাহিদার তুলনায় অপ্রত্যুল। তবে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন থেকেও বিভিন্ন স্থানে শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু করছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো সংবাদ