• Youtube
  • English Version
  • শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৪৮ পূর্বাহ্ন

করাঙ্গী নিউজ
স্বাগতম করাঙ্গী নিউজ নিউজপোর্টালে। ১৫ বছর ধরে সফলতার সাথে নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন করে আসছে করাঙ্গী নিউজ। দেশ বিদেশের সব খবর পেতে সাথে থাকুন আমাদের। বিজ্ঞাপন দেয়ার জন‌্য যোগাযোগ করুন ০১৮৫৫৫০৭২৩৪ নাম্বারে।

উত্তোলন ও দখলে ঝুঁকিতে হবিগঞ্জের বাঁধ

  • সংবাদ প্রকাশের সময়: মঙ্গলবার, ৩ মে, ২০১৬

নিজস্ব প্রতিনিধি, হবিগঞ্জ: অনিয়ন্ত্রিত বালু উত্তোলন ও দখল প্রতিযোগিতার কারণে হবিগঞ্জে খোয়াই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ মারাত্মক ঝুঁকির সম্মুখিন হয়ে পড়েছে। যে যার ইচ্ছেমতো নদী থেকে বালু উত্তোলন করছে। ফলে চুনারুঘাট থেকে জেলা শহর পর্যন্ত প্রতিরক্ষা বাঁধের শতাধিক স্থান ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। আসন্ন বর্ষায় জেলা শহররক্ষা বাঁধের অনেক স্থানে ভাঙনের আশঙ্কাও রয়েছে।

চুনারুঘাট, শায়েস্তাগঞ্জ ও হবিগঞ্জে নদীর প্রায় অংশ থেকেই ট্রাক ও ট্রাক্টর দিয়ে বালু উত্তোলন করছে লিজ গ্রহীতারা। অনেক স্থানে আবার ড্রেজার মেশিন দিয়েও বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। কোথাও আবার বাঁধ কেটে ড্রেজার মেশিনের পাইপ স্থাপন করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে নদীর বাঁধের কিনারা থেকে শুরু করে ব্রিজের কিনারা কোনো কিছুই মানছেনা তারা।

আবার ট্রাক-ট্রাক্টর ওঠানামা করানোর জন্য প্রতিরক্ষা বাঁধ কেটে নির্মাণ করা হয়েছে রাস্তা। এছাড়াও প্রায় প্রতিদিনই বাঁধের দু’পাশে নতুন নতুন স্থানে বাঁশের আঁড়া বেঁধে দখলে ব্যস্ত রয়েছে নদী তীরবর্তী এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি। তারা দখলকৃত এ স্থান ভূমিহীনদের কাছে হাত হিসেবে বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। অথচ তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস পাচ্ছেনা। কারণ তাদের আছে বিশাল গোষ্ঠী ও লাঠিয়াল বাহিনী।

নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ দখলে সহযোগিতা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সব্যসাচী চৌধুরী করাঙ্গীনিউজকে বলেন, আমাদের পর্যপ্ত জনবল নেই, দখলদার উচ্ছেদের জন্য মেজিস্ট্রেসি ক্ষমতাও নেই। এ অবস্থায় উচ্ছেদের জন্য আমরা জেলা প্রশাসন এবং পুলিশ প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছি। এমনকি দখলদারদের তালিকাও দিয়েছি। কিন্তু এখনও কোনো ফল হচ্ছেনা।

বালু উত্তোলনের জন্য বাঁধ কাটার বিষয়ে তিনি বলেন, নদীর বালু মহাল লিজ দেয় জেলা প্রশাসন। এজন্য আমরা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি, লিজ গ্রহীতারা যাতে বাঁধ না কাটতে পরে সে ব্যাপারে তারা যেন শর্ত দেন। বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হলে পুরো জেলা শহর হুমকিতে পড়বে।

সরেজমিন ঘুরে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চুনারুঘাট উপজেলার বাল্লা থেকে জেলা সদর হবিগঞ্জ পর্যন্ত খোয়াই নদীর বেশকিছু স্থানে প্রতিরক্ষা বাঁধ নেই। বাঁধের বেশ কয়েকটি স্থান আবার দুর্বল হয়ে পড়েছে। কয়েকশ স্থানে নদী থেকে বালু উত্তোলনের জন্য বাঁধ কেটে ট্রাক-ট্রাক্টর ওঠা-নামার জন্য রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, নদীর বাঁধের গোড়া কেটে নির্বিঘ্নে মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। এ অবস্থায় হবিগঞ্জ শহররক্ষা বাঁধসহ সর্বত্র বাঁধের শতাধিক স্থান মারাত্মক হুমকির সম্মুখিন হয়ে পড়েছে। এদিকে জেলা শহরে প্রতিরক্ষা বাঁধের দু’তীর দখল করে গড়ে উঠেছে শত শত বাড়িঘর।

বাঁধ সংলগ্ন এলাকার প্রভাবশালী বাসিন্দারা নদীর বাঁধ দখল করে অসহায় ভূমিহীনদের কাছে হাত হিসেবে বিক্রি করছে। শহর থেকে দূরবর্তী স্থানে প্রতি হাত ৩ থেকে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। আর শহরের কাছাকাছি হলে তা ৫ হাজার থেকে শুরু করে যার কাছ থেকে যত নেয়া যায় ভিত্তিতে বিক্রি হয় প্রতি হাত জমি। শহরের কামড়াপুর, গরুর বাজার, চৌধুরী বাজার ও শায়েস্তানগরে প্রতিরক্ষা বাঁধ বিক্রি হয় ১ থেকে ৩ লাখ টাকা শতক হিসেবে। জায়গা দখলের এসব কর্মকাণ্ডে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী সহযোগিতা করে চলেছে বলে জানিয়েছে কয়েকজন দখলদার। বাঁধ দখলের ছবি তুলতে গেলে তারা বলে, অসহায় গরীব মানুষের বসবাসের তো কোনো জায়গা নেই। আমরা তাদের বসবাসের জন্য জায়গা করে দিচ্ছি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, খোয়াই নদীর উৎপত্তিস্থল ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে। ভৌগোলিক কারণে নদীটি ভারত সীমান্ত অতিক্রম করে চুনারুঘাট উপজেলা হয়ে জেলা সদর হবিগঞ্জের ওপর দিয়ে বানিয়াচং ও লাখাই উপজেলা ছাড়িয়ে গেছে। যুগ যুগ ধরে খরস্রোতা এ নদীটি হবিগঞ্জবাসীর সুখ-দুঃখের সাথি হয়ে আছে। শুষ্ক মৌসুমে যেমন নদীর পানি ইরি-বোরো আবাদে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, তেমনি বর্ষাকালে সীমান্তের ওপার থেকে পাহাড়ি ঢল নেমে এলে খোয়াই রুদ্রমূর্তি ধারণ করে। কোথাও বাঁধ উপচে, আবার কোথাও বাঁধ ভেঙে ভাসিয়ে নেয় নদীর দু’কূলের মানুষের সহায় সম্বল। আর গ্রীষ্মে তলদেশ শুকিয়ে নদীটি পরিণত হয় মরা খালে।

এ অবস্থায় খোয়াইয়ের ধ্বংসলীলা ও এর বিরূপ প্রভাব থেকে নদীর দু’তীরের বিস্তীর্ণ এলাকার ফসল এবং জানমাল রক্ষায় ১৯৬৯ সালে তৎকালীন সরকার একটি প্রকল্প প্রণয়ন করে। ১৯৭৩ সালে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠান প্রকল্প এলাকায় জরিপ করে সরকারের কাছে রিপোর্ট জমা দেয়। এর পর থেকে বিভিন্ন সময় নদীর দু’তীরে বাঁধ নির্মাণ করা হয়। অনেক স্থানে নদীর বাঁক কেটে সোজা করা হয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো সংবাদ