শনিবার, ১০ মে ২০২৫, ০৬:০৪ অপরাহ্ন
এম,এ আহমদ আজাদ, নবীগঞ্জ(হবিগঞ্জ) থেকেঃ
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় হাতিমারা নদী এখন ভরাট হয়ে গেছে। এই নদীটি নিয়ে রয়েছে রুপকথার কাহিনী। এক সময়ে খর স্রোতা নদী দিয়ে জাহাজ চলাচল করতো। হাতি দিয়ে বরযাত্রী পারাপারের সময় হাতিসহ তলিয়ে যায়। সেই বৃট্রিশ আমল থেকে নদীটির নামকরণ হয় হাতিমারা। এখন নদীটি সম্পূর্ন দখল হয়ে গেছে। নদীর বুক চিরে চাষ করা হচ্ছে বিভিন্ন ধানসহ সবজি বাগান । এই হাতিমারা নদীর তীরে গড়ে উঠেছে নবীগঞ্জ উপজেলার ১০/১৫ টি গ্রাম ও দুটি বাজার। এক সময় হাতিমারা নদী দিয়ে ব্যবসা বাণিজ্য করতেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। জেলেদের মাছ ধরাসহ নদীর পানি দিয়ে জমি চাষ করতেন চাষীরা। আজ অবৈধ দখল আর নদীতে ময়লা আবর্জনা ও বর্জ্য ফেলার কারনে প্রসস্থ কমে গিয়ে খালে পরিনত হয়েছে এ নদীটি। বর্ষা মৌসুমে নদীর দু’কূল ছাপিয়ে বন্যার সৃষ্টি হলেও শুকনো মৌসুমে তা চাষাবাদের জমি হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে। আবার কোথায় কোথায় নদী দখল কওে বাড়িঘর নির্মান করা হয়েছে।
ভরাট হয়ে হাতিমারা নদী হারাচ্ছে তার স্বাভাবিত চরিত্র। ১৫ থেকে ২০ বছর আগেও যে নদীতে ৫শ’ মনের ওজনের নৌকা ধান, ইট, বালু নিয়ে যাতায়াত করত। সময়ের পরিক্রমায় সেই এই নদী দিয়ে রাস্তার ও বসতবাড়ির বৃষ্টির পানি পর্যন্ত ঠিকভাবে নিষ্কাশিত হতে পারছে না।
বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি এ হাতিমারা নদী দিয়ে বের হতে না পারায় নবীগঞ্জে পুর্বাঞ্চলের আউশকান্দি, দেবপাড়া ও দীঘলবাক ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় পানি লেগে জলাবদ্ধতার ও অকাল বন্যার সৃষ্টি হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাযায়, এক সময়ের উত্তাল স্রোতের হাতিমার নদী কালেরগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে, নতুন প্রজন্মের কাছে এটা আর নদী মনে হয় না। লোকজন আগে হাতিমারা নদী ডাকলে নতুন করে হাতিমার বিল বলতে শুরু করেছেন।
নদীটি রক্ষার মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করেও যেন সুফল মিলছেনা এলাকাবাসীর। রাঘব বোয়ালদের দখলে রয়েছে হাতিমারা নদীর চরাঞ্চল। সামান্য বৃষ্টিতেই পানির নিচে তলিয়ে যায় ঐ নদীর দুই বসবাস কারী ১৫/২০টি গ্রামের বাড়িঘর ও ফসলি জমি।
ঐতিহ্যবাহী হাতিমারা নদীটি কালের আবর্তে দখলদারদের কবলে পড়ে একটি নালায় পরিণত হয়েছে। এসব যেন দেখার কেউই নেই। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য সুন্দর ও সুস্থ পরিবেশ প্রয়োজন।
নবীগঞ্জ উপজেলার হাতিমারা নদী থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন। করা হয় অবৈধ স্থাপনার তালিকা প্রণয়ন। নদীটি খননের জন্য দুই বছর আগের জাইকা প্রকল্প গ্রহন করা হলেও বরাদ্ধ কৃত কোটি লুটপাট করা হয় আংশিক খনন কাজ করে।
অনেকেই মনে করেছিলেন হয়তো হারানো যৌবন ফিরে পাবে হাতিমারা নদী। প্রশাসন অভিযান করে বেশ কিছু স্থাপনা উচ্ছেদ করেন। কিন্তু করোনা সংক্রমন বাড়ায় অভিযান শুরুর কিছুদিন পরই বন্ধ হয়ে যায়। এখন পর্যন্ত নদী সচল ও প্রবাহমান রাখতে আর কোন কার্যক্রম লক্ষ্য করা যায়নি। বর্তমানে হাতিমারা নদীতে বোরো ধান চাষাবাদ করা হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় করা হয়েছে সবজি চাষাবাদ।
দিনারপুর কলেজের অধ্যক্ষ তনুজ রায় বলেন, হাতিমারা নদীর প্রাণ ফিরিয়ে আনতে সবাইকে সচেতন হবে। হাতিমারা নদীতে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। নদীর দূষণ রোধে নদীতে ময়লা-আবর্জনা ফেলা বন্ধ করতে হবে।
সাংস্কৃতিক কর্মী পলাশ চৌধুরী বলেন, দেবপাড়া ইউনিয়নের রুস্তমপুর এলাকা থেকে আউশকান্দি ইউনিয়নের আমুকোনা দিয়ে যে নদী হাতিমারা নামে প্রবাহিত হয়ে শেরপুর বেরিবিল পর্যন্ত গেছে। প্রবাহিত হয়ে বন্ধুর মতো আমাদের আগলে রেখেছে বছরের পর বছর ধরে আজ সেটি আইসিইউতে। অক্সিজেনের লাইনটিও কাটা হচ্ছে জ্ঞানে-অজ্ঞানে। আমরা চাই নদী বাচুঁক, নগর বাচুঁক, নবীগঞ্জের নাগরিক বাচুঁক।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশন আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, শাখা বরাক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি হাতিমারা এ নদী দিয়ে পণ্য এবং যাত্রীবাহী বড় বড় নৌকা চলাচল করতো। কতিপয় অসাধু লোকজন নিজেদের ভোগ-বিলাসের জন্য নদীটিকে দখলের মাধ্যমে অস্তিত্ব সঙ্কটে ফেলেছে। দখল-দূষণের পাশাপাশি নদী ও পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষায় দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়হীনতা এবং উদাসীনতার কারণে নদীটি অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, মানুষ নদী বানাতে পারেনা সুতরাং নদী ধ্বংশ করার কোন যৌক্তিকতা নেই। এটি অন্যায় এবং আইন বিরুদ্ধ। গুরুত্বপূর্ণ এ নদীটি রায় যথাযথ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।