চিকিৎসক জানিয়েছেন, রথীশ রঞ্জন দাস এর কিডনি দিন দিন অকেজো হতে চলেছে। শেষ চিকিৎসা ডায়ালাইসিস অথবা কিডনি ট্রান্সফার। জীবনের প্রায় সময়টাই বিভিন্ন ধরনের রোগের সাথে লড়াই করতে হয়েছে। বিভিন্ন রোগব্যাধির চিকিৎসা করাতে গিয়ে তিনি একেবারে নিঃস্ব। আগামী ফেব্রুয়ারিতে চাকরি জীবন শেষ হতে চলছে। তার আগেই জীবন প্রদীপ নিভে যায় কিনা এব্যাপারে সন্দিহান।
শ্রদ্ধেয় শিক্ষক রথীশ রঞ্জন দাস ১৯৬৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারী হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার নাগুরা গ্রামে এক নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা রাখেশ চন্দ্র দাস ও মাতা নর্মদা রাণী দাস। পিতা ছিলেন একজন সাধারণ কৃষক এবং মাতা ছিলেন গৃহিনী। ৭ জন ভাই বোনের মধ্যে ৫ম সন্তান তিনি।
জন্মের পর চার বছর বয়সে তিনি নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হন। উন্নত চিকিৎসার অভাবে শারীরিকভাবে দুর্বল ছিলেন। তারপরও নিয়মিত লেখাপড়া শুরু করেন। পড়াশুনায় সর্বদাই ভালো ছিলেন। নাগুরা ফার্ম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। এরপর ১৯৭৯ ইং সনে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে “নাগুরা ফার্ম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে ১ম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। “বৃন্দাবন সরকারি কলেজ” থেকে কুমিল্লা বোর্ডের ১৯৮১ ইং সনে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে ১ম বিভাগে পাস করেন। তিনি এইচএসসি উত্তীর্ণ হওয়ার পর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (BUET) ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি হন এবং এক বছর পড়ালেখার পর ডায়রিয়া ভাইরাসে আক্রান্ত হন। তখনকার সময়ে যোগাযোগ সুযোগ সুবিধা ছিল না। যার কারনে মানসিকভাবে ভীত হয়ে পড়েন এবং শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন। ফলে বুয়েটে পড়ালেখা শেষ করতে পারেননি। বুয়েটে থেকে ফেরত আসার পর থেকেই তিনি বিষন্নতায় ভুগেন। যা পরবর্তীতে শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে প্রভাব ফেলে।
প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিরে এসে ১৯৮৪ ইং সনে বৃন্দাবন সরকারি কলেজে বিএসসি (পাস) কোর্সে ভর্তি হন। তিনি ১৯৮৬ ইং সনে ওই কলেজ থেকে চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরীক্ষা দিয়ে বিএসসি (পাস কোর্স)-২য় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। তখন তিনি একটা বেসরকারি স্কুলে চাকুরি নেন। এরপর তিনি ১৯৮৮ ইং সনে মিরপুর ফয়জুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক (গনিত) পদে যোগদান করে অদ্যাবধি কর্মরত আছেন। ১৯৯২ ইং সনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কুমিল্লা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে ২য় বিভাগে বিএড সম্পন্ন করেন। তিনি ১৯৯৭ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
বিয়ের সাত বছর পর্যন্ত কোন সন্তানাদি পাননি। সাত বছর পর একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। তার একমাত্র সন্তান পূজা দাস বৃন্দাবন সরকারি কলেজের এইচএসসি বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। স্ত্রী রত্না দাস এবং একমাত্র মেয়ে পূজাকে নিয়েই তাঁর সংসার।
শিক্ষক রথীশ রঞ্জন দাস এর পিত্ততলীতে পাথর ধরা পড়ে ২০০৫ সালে এবং ২০১০ সালে পিত্ত অপারেশন করে ফেলে দিতে হয়। তারপর ২০১৫ সালে কিডনি রোগে আক্রান্ত হন। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা চালিয়ে যান দীর্ঘ আট বছর। তাঁর চাকরিটিই ছিল পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস। এছাড়া আর আয় ছিল না। অনেক কষ্ট করে অসুস্থ শরীর নিয়ে সবকিছু সামলিয়ে নেন। কিন্তু চাকরির শেষ পর্যায়ে এসে বেশি অসুস্থ হয়ে যাওয়ার কারনে মেডিকেল লিভ নিয়ে থাকতে হয়েছে। এখন চাকরি জীবন শেষ হয়ে যাওয়ার কারনে আয়ের পথ এখন প্রায় বন্ধ।
চিকিৎসকরা বলছেন, দিন দিন কিডনির অবস্থা একদম খারাপের দিকে চলে যাচ্ছে। কিডনির চিকিৎসা ও এত ব্যয়বহুল যে পরিবারের পক্ষে চিকিৎসার খরচ চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব। ক্রিয়েটিনিন পয়েন্ট ১৫ তে চলে গেছে। এখন শেষ চিকিৎসা ডায়ালাইসিস অথবা কিডনি ট্রান্সফার। রথীশ রঞ্জন দাস স্যার যে শহরে বসবাস করছেন সেখানে ডায়ালাইসিসের সুবিধাও নেই বললেই চলে।
কিডনি জনিত জটিলতার কারণে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। কিডনি ডায়ালাইসিস প্রক্রিয়া চলমান। তাঁকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা নিয়ে যেতে হবে। এতে অনেক টাকার প্রয়োজন। সম্পত্তিও বলতে, পৈত্রিক ভিটা-ই শুধু আছে।
তিনি গত ৪ অক্টোবর থেকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এর পুরাতন বিল্ডিং এর ৪ তলায় ১নং ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন। অবস্থার অবনতি হওয়ায় বর্তমানে ICU তে ডাক্তারদের পর্যবেক্ষনে আছেন। আত্মীয় স্বজনের মধ্যেও এমন কেউ নেই যে সাহায্য করবে। এখন টয়লেট, খাওয়া দাওয়া সবকিছুই বিছানাতেই শুয়ে করতে হয়। অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় তিনি বর্তমানে মুখে কথাও বলতে পারেন না। এমতাবস্থায় মেয়ের সাথে সহধর্মিনী একমাত্র সাহায্যকারী হিসেবে সাথে আছেন। কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য যে বিপুল অর্থের প্রয়োজন, তা দরিদ্র এই শিক্ষকের পক্ষে জোগার করা সম্ভব হচ্ছেনা। তাই সমাজের বিত্তবানদের কাছে সহায়তা কামনা করেছেন। বর্তমানে জীবন বাঁচাতে রোগীকে কিডনি ডায়ালাইসিস করতে হবে যা ব্যয় বহুল। বর্তমানে অর্থাভাবে থমকে আছে সুচিকিৎসা।
বাঁচার আকুতি নিয়ে সকলের সহযোগিতা চাইছেন ওই শিক্ষক। শিক্ষকের একমাত্র কন্যা পূজা বলেন, হয়তো এই প্রতিবেদনটি দেখে অনেকেই আমার বাবার পাশে দাঁড়াবেন বলে আমি প্রত্যাশা করি। সবার কাছে সুচিকিৎসা ও তাঁর পরিবারের প্রতি সুদৃষ্টি রাখতে প্রয়োজন সবার সামর্থ্য অনুযায়ী সহযোগিতা। রথীশ রঞ্জন দাস এর জন্য সাহায্য পাঠাতে চাইলে এই নাম্বারে যোগাযোগ করতে পারবেন মোবাইল নাম্বার-০১৫৫৮৭০৫২৮৮।