করাঙ্গী নিউজ
স্বাগতম করাঙ্গী নিউজ নিউজপোর্টালে। ১৫ বছর ধরে সফলতার সাথে নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন করে আসছে করাঙ্গী নিউজ। দেশ বিদেশের সব খবর পেতে সাথে থাকুন আমাদের। বিজ্ঞাপন দেয়ার জন‌্য যোগাযোগ করুন ০১৮৫৫৫০৭২৩৪ নাম্বারে।

একজন মতিন স্যার, কীর্তিমান তৈরির কারিগর

  • সংবাদ প্রকাশের সময়: সোমবার, ২১ মার্চ, ২০২২
ফয়সল আহম রুহেল: যে স্কুলের ছাত্র, সেই স্কুলে যৌবনকালে শুরু কর্মজীবন। আবার সেখান থেকেই কর্মজীবনের পরিসমাপ্তি। বিদ্যালয় কিংবা নিজ ছাত্রছাত্রীদের ছেড়ে অন্যত্র চলে না যাওয়া। সেই বিদ্যালয়কে অক্লান্ত পরিশ্রম ও ভালবাসা দিয়ে সফলতার স্বর্ণ শিখরে পৌঁছানো। নিজ মেধা, যোগ্যতা, দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা দিয়ে হাজারো কীর্তিমান তৈরি। নিজ হাতে গড়া ও জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হওয়া শিক্ষার্থীরা উচ্চ পদে আসীন। এই সফলতা একদিন দু’দিনে আসেনি। জীবনের পুরো সাড়ে ৩৭ বছর ব্যয় হয়েছে এর পেছনে। পিছুটান কিংবা কোন কঠিন বাস্তবতাও দমাতে পারেনি। আর এই কারণেই তিনি আজো কারো কাছে একজন আদর্শ শিক্ষক, কারো কাছে একজন আদর্শ মানুষ। এই গর্বটুকু নিয়েই আজীবন শিক্ষকতা করে যান এই গুণী শিক্ষক মো. আব্দুল মতিন স্যার। তিনি হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার দক্ষিণা চরণ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক।
 
 
 
 
জন্ম : শিক্ষক আব্দুল মতিন ১৯৫৯ সালের ১ এপ্রিল হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার গোগাউড়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম আব্দুল জব্বার ও মরহুমা জবেদা খাতুন। আব্দুল মতিন ৪ ভাই, ২ বোনের মধ্যে তিনি ৪র্থ। বড় ভাই আব্দুল গফ্ফার সহকারী কাজী। মেজু ভাই আব্দুর রহমান বেঁচে নেই। ৩য় ভাই মো. আব্দুল মজীদ বিআরডিবির কর্মকর্তা ছিলেন বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত। বোন কলসুমা খাতুন ও জায়েদা খাতুন গৃহিনী।
 
 
শিক্ষা : তিনি ১৯৬৮ সালে বালিয়ারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক সমাপনি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। একই বৎসর প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় উক্ত স্কুল থেকে সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পান। ১৯৭২ জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষায় আবারও সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পান তিনি। ১৯৭৪ সালে দক্ষিণা চরণ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে ২য় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ১৯৭৬ সালে আব্দুল মতিন হবিগঞ্জ বৃন্দাবন কলেজ থেকে ২য় বিভাগে আই. এস.সি পাশ করেন। এরপর ১৯৮০ সালে তিনি হবিগঞ্জ সরকারী বৃন্দাবন কলেজ থেকে বি.এস.সি পাশ করেন। আব্দুল মতিন বিএড ১৯৮৪-৮৫ সেশনে ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে উচ্চতর ২য় স্থান অর্জন করেন।
 
কর্মজীবন শুরু : আব্দুল মতিন ১৯৮১ সালের ১ অক্টোবর থেকে কর্ম জীবন, তথা শিক্ষকতা জীবন শুরু করেন। এ শিক্ষকের নিজ বিদ্যালয় দক্ষিণা চরণ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক (বিএসসি) পদে নিয়োগ পান। ২০০৮ সালের ১ আগষ্ট স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসাবে আব্দুল মতিনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর তিনি ২০১০ সালের ১৩ অক্টোবর ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ প্রধান শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ পান। তিনি দীর্ঘ সাড়ে ৩৭ বছর শিক্ষকতার পর ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ অত্র বিদ্যালয় থেকে অবসরে চলে যান।
 
 
 
শৈশব : শ্রদ্ধেয় শিক্ষক আব্দুল মতিন স্যার ১৯৬৪ সালে বালিয়ারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৬৮ সালে প্রাথমিক সমাপনি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন । একই বৎসর প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় উক্ত স্কুল থেকে সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পান। ১৯৬৯ সালে চুনারুঘাট দক্ষিণা চরণ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ট শ্রেণীতে তিনি ভর্তি হন। ঐ বৎসর পাকিস্তানের স্বৈরশাসক আইয়ূব বিরোধী গণআন্দোলন পূর্ব পাকিস্তানে চলছিল, গণআন্দোলনে পাকিস্তানের স্বৈরাশাসক আয়ূব খানের পতন ঘটেছিল। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে যখন মুক্তিযুদ্ধ চলছিল তখন তিনি ৮ম শ্রেণীর ছাত্র। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে যখন স্কুলে যেতেন, তখন রাস্তায় পাক বাহিনীর মোকাবেলা করে স্কুলে যেতে হত। পাক বাহিনীকে তখন খুবই ভয় পেতেন। তারা দেহ তল্লাশি করে স্কুল পাঠাতো। এমন কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করে তখন স্কুলে যেতেন। এগুলো এই শিক্ষকের স্মৃতিপটে এখনও ভেসে উঠে। ১৯৭২ সালের মার্চ মাসে ৮ম শ্রেণীর বৃত্তি পরীক্ষা (জুনিয়র বৃত্তি) হবিগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষায় তিনি আবারও সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পান। ১৯৭৪ সালে তিনি চুনারুঘাট দক্ষিণা চরণ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ২য় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ১৯৭৬ সালে হবিগঞ্জ বৃন্দাবন কলেজ থেকে ২য় বিভাগে আই. এস.সি পাশ করেন। ১৯৮০ সালে তিনি হবিগঞ্জ সরকারী বৃন্দাবন কলেজ থেকে বি.এস.সি পাশ করেন। তিনি বিএড ১৯৮৪-৮৫ সেশনে ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে উচ্চতর ২য় বিভাগের পাশ করেন।
 
সেরা শিক্ষক : আব্দুল মতিন যখন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়েন তখনকার সময়ে কয়েকজন সেরা শিক্ষক ছিলেন। ঐ সময়ে দক্ষিণা চরণ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ছিলেন জনাব আব্দুল জলিল স্যার। জলিল স্যার আব্দুল মতিনকে খুবই স্নেহ করতেন। তিনি আজ আমাদের মধ্যে বেঁচে নেই । ১৯৭৮ সালের আগস্ট মাসে স্যার মৃত্যুবরন করেন। তখনকার সময় সহকারী প্রধান শিক্ষক ছিলেন জনাব ইন্তাজ উল্লাহ স্যার। জনাব ইন্তাজ উল্লাহ স্যার আব্দুল মতিনের খুব প্রিয় শিক্ষক ছিলেন।
জনাব ইন্তাজ উল্লাহ স্যার একজন মেধাবী শিক্ষক ছিলেন। তিনি শিক্ষার্থীদের ইংরেজী বিষয়ে পাঠদান করতেন। ইংরেজী বিষয়ে স্যার খুব সুন্দরভাবে বুঝিয়ে পাঠ দান করাতেন। স্যার তখন গলগলিয়ে ইংরেজিতে কথা বলতে পারতেন। একজন ভাল শিক্ষক হতে যে সমস্ত গুণাবলী প্রয়োজন, সব গুণাবলী স্যারের কাছে ছিল।
 
আব্দুল মতিন এ ধরনের শিক্ষক পেয়েছিলেন বলে আজ নিজেকে ধন্য মনে করেন। ১৯৭৮ সালের আগস্ট মাসে ইন্তাজ স্যার প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং ২০০৮ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত স্যার অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন। আব্দুল মতিনের সময়ে জনাব আব্দুস ছামাদ স্যার বাংলা পড়াতেন। বাংলা বিষয়ে স্যারের অপরিসীম জ্ঞান ছিল। স্যারের বাংলা বিষয়ে জ্ঞানের তুলনা হয় না । স্যার আজ বেঁচে নেই। তখনকার সময়ে গণিত বিষয়ের একজন শিক্ষক ছিলেন স্যারের নাম জনাব আবুল হুসেন। গণিত বিষয়ে তিনি বিশেষ করে উচ্চতর গণিতে খুবই পারদর্শী ছিলেন। বিদ্যালয়ে পাঠদানকারী অনেক শিক্ষক এখন বেঁচে নেই।
 
স্কুলের যত সফলতা : দক্ষিণা চরণ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ফলাফল বোর্ডের দিকে তাকালে অনেক ভালো। কুমিল্লা বোর্ডের আওতায় এ স্কুল থেকে একাধিক ছাত্র বিজ্ঞান মানবিক ও ব্যবসা শাখার মেধা তালিকায় স্থান লাভ করে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড কুমিল্লার মেধা তালিকায় স্থান প্রাপ্তদের তালিকাদের মধ্যে ১৯৫৫ সালে রিপন চন্দ্র দেব ১৫তম (বিজ্ঞান), প্রাপ্ত নম্বর ৮৭১, ১৯৯৮ সালে চৌধুরী সারোয়ার ইসলাম ৪র্থ (মানবিক), প্রাপ্ত নম্বর ৮৪৯, ১৯৯৮ সালে মো. আব্দুল কুদ্দুছ (ব্যবসায় শিক্ষা) ১১তম, প্রাপ্ত নম্বর ৭৯৩।
 
এখানে উল্লেখ্য যে, ১৯৮৫ সাল থেকে কুমিল্লা বোর্ডের একটি নিষেধাজ্ঞার কারণে অত্র বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রী ভর্তি নিষেধ ছিল। সিলেট শিক্ষা বোর্ড প্রতিষ্ঠিত হলে ২০০৪ সালে আব্দুল মতিন স্যার তৎকালীন প্রধান শিক্ষকের অনুমতি নিয়ে সিলেট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের নিকট যোগাযোগ করে বোর্ড কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে ২০০৫ সালে থেকে অত্র বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রী ভর্ত্তি শুরু হয়। ২০০৪ সালের অত্র বিদ্যালয়ের ছাত্র সংখ্যা ছিল প্রায় ৫০০ জন। ২০০৮ সালে ছাত্রছাত্রী বেড়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৮০০ জনে।
২০০৮ সালের ৩১ জুলাই সাবেক প্রধান শিক্ষক জনাব আলহাজ্ব ইন্তাজ উল্লাহ স্যার অবসরে গেলে ২০০৮ সালের ১ আগষ্ট স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসাবে আব্দুল মতিনকে দায়িত্ব দেওয়া হয় ।
 
এ শিক্ষকের স্কুলের জন্য যত অবদান : আব্দুল মতিন দক্ষিণা চরণ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব ভার দেওয়ার পূর্বে স্কুলে কোন অনুমোদিত শাখা ছিল না। তিনি অনেক চেষ্টা করে শিক্ষা মন্ত্রনালয় ও শিক্ষা অত্র অধিদপ্তর থেকে অত্র বিদ্যালিয়ের ৬ষ্ঠ, ৭ম ও ৮ম শ্রেণীর একটি করে মোট ০৩ ( তিন ) টি শাখা অনুমোদন করে পরবর্তীতে ০৩টি শাখার বিপরীতে ৩ জন শিক্ষক নিয়োগ প্রদান করেন। অত্র বিদ্যালয়ে (দুই) শাখায় আরও দুইজন শিক্ষক নিয়োগ দেন। তিনি ২০১০ সালের ১৩ অক্টোবর ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ প্রধান শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ পান। প্রধান শিক্ষক থাকা কালে তিনি বিদ্যালয়ের বিল্ডিং তথা শ্রেণীকক্ষের অবস্থা ছিল নাজুক ক্লাস চলাকালিন সময়ে বৃষ্টির পানি ছাত্রছাত্রীর মাথায় পরত এবং বই খাতা বৃষ্টির পানিতে ভিজে যেত এবং ছাদের আস্তর খসে পরত। এরূপ ৫টি বিল্ডিং ছিল। একসময় উপজেলা প্রশাসন এসে বিল্ডিংগুলোতে শ্রেণীর কাজ না করার করা জন্য সিগনাল দিয়ে গেলেন। তখন ছাত্রছাত্রী বসানোর সিট না থাকায় প্রতিদিন ০২টি ক্লাশ পর্যায়ক্রমে বন্ধ ঘোষণা করা হল। এ অবস্থা থেকে উত্তরনের জন্য সরকারী-
বেসরকারী সহায়তায় পুরাতন বিল্ডিংগুলো ভেঙ্গে চারতলা বিশিষ্ট ০১ টি নতুন বিল্ডিং নির্মাণ হয়। জেলা পরিষদ থেকে তিন তালা ফাউন্ডেশন দিয়ে আরওও ১টি বিল্ডিংয়ের ১ তালা কমপ্লিট করা হয়। পৌরসভা থেকে আরও একটি এক তালা বিল্ডিং করা হয়। পরবর্তীতে আরও ১টি টিন সেড বিল্ডিং করা হয়। লাইব্রেরীর জন্য একটি বিল্ডিং করেন। ফ্যাসিলিটিজ বিল্ডিংয়ের উপরে স্কুলের খরচে টিন সেড দিয়ে ০৩টি শ্রেণী ব্যবস্থা করা হয়। মসজিদের অজুখানা ছিল না। তিনি মসজিদের অজুখানার ব্যবস্থা করেন। মসজিদের বারিন্দা ছিল না মসজিদের বারিন্দা করে দেন তিনি। মসজিদের নির্ধারিত ইমাম সাহেব ছিলেন। আব্দুল মতিন স্যার শিক্ষকদের এবং ম্যানেজিং কমিটির সহযোগিতায় মসজিদের স্থায়ী ইমাম নিয়োগ দেন। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য অফিস বাথরুম এর ব্যবস্থা করে দেন। ছাত্রছাত্রীদের জন্য পৃথক পৃথক বাথরুম ও টয়লেট নির্মাণ করেন। শ্রেণী কক্ষে ফ্যান ছিল না, প্রত্যেকটি শ্রেণীকক্ষে ফ্যানও বাতির ব্যবস্থা করেন। বিজ্ঞানাগারে নতুন নতুন যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা, ছাত্রছাত্রীদের সবাই যাতে আধুনিক পরিবেশে লেখাপড়া করার সুযোগ পায় সেই ব্যবস্থা করেন তিনি। সর্বশেষে মসজিদের আজান দেওয়ার মাইক ছিল না, মাইকের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। আব্দুল মতিন প্রধান শিক্ষক থাকা কালীন সময়ে শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ ছিলেন খুবই আন্তরিক। তারা আব্দুল মতিন স্যারকে খুবই মায়া-শ্রদ্ধা করতেন, তাঁর আদেশ-নির্দেশ তারা সবাই মেনে চলতেন। এই স্কুলের ফলাফল ছিল খুবই ভালো। আব্দুল মতিন স্যারের দায়িত্ব পালনের শেষদিকে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ছিল প্রায় ১৭০০জন। ১৯২৮ সালে এ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বর্তমানে ছাত্র-শিক্ষক ও অভিভাবকগণের সহযোগিতায় অত্র বিদ্যালয় হবিগঞ্জ জেলার অন্যতম শ্রেষ্ট মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে উঠেছে। এ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পিছনে যার অবদান সবচেয়ে বেশি বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক বাবু কামাক্যা চরণ বিশ্বাস (মনি বাবু) বি,এ অনার্স কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। এর অক্লান্ত পরিশ্রম ও দূরদর্শিতার প্রতি জানান আন্তরিক শ্রদ্ধা এবং কৃতজ্ঞতা জানান এই গুণী শিক্ষক আব্দুল মতিন।
 
এই শিক্ষকের শিক্ষার্থীরা : মানুষ গড়ার কারিগর আব্দুল মতিন স্যার আজ ধন্য। তাঁর হাতে গড়া ও জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হওয়া অনেক শিক্ষার্থীরা জ্ঞান-বিজ্ঞানে গরীয়ান হয়ে চিকিৎসা, প্রকৌশলী, সিভিল সার্ভিস, আইন, বিচার, সচিব-উপসচিব ও শিক্ষা বিভাগে নিজেদেরকে সুপ্রতিষ্ঠিত করে উচ্চ পদে আসীন আছেন।
 
 
পারিবারিক জীবন : শিক্ষক মো. আব্দুল মতিন ২ ছেলে ও ১ মেয়ের জনক। আব্দুল মতিন স্যার সন্তানদেরকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। বড় ছেলে লুৎফুর রহমান মেঘনা গ্রুপ এর সহকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক ঢাকায় কর্মরত ও ছোট ছেলে মো. মোর্শেদ কামাল হেলিওয়েস জাপানী কোম্পানীতে ঢাকায় কর্মরত। একমাত্র মেয়ে সুলতানা রাজিয়া স্বামীসহ ইটালীতে বসবাস করছেন।
 
গুনী এই শিক্ষক ২০২২ সালে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের নিয়ে কাজ করা হবিগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের স্বনামধন্য শিক্ষক সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার কৃতি সন্তান জনাব টি, আলী স্যারের নামে প্রতিষ্ঠিত যুক্তরাজ্য ভিত্তিক চ্যারেটি সংস্থা টি,আলী স্যার ফাউন্ডেশনের জরিপে চুনারুঘাট উপজেলার আদর্শ শিক্ষকের সম্মাননার স্বীকৃতি হিসেবে টি, আলী স্যার পদকে ভুষিত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, ফাউন্ডেশন হবিগঞ্জ জেলার নয় উপজেলার ১৮ জন আদর্শ অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষককে পদক দেয়ার পাশাপাশি তাদের জীবনী ধারাবাহিকভাবে লিখছেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি টি, আলী স্যারের পুত্র বৃটেনের জনপ্রিয় চ্যানেল এস টেলিভিশনের সাংবাদিক ফয়সল আহমদ (রুহেল)। পদকপ্রাপ্ত শিক্ষকদের মধ্যে থেকে আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে থাকা ৫ জন শিক্ষককে আর্থিক সহযোগিতাও দেবে সংস্থাটি।
 
একজন আদর্শ শিক্ষক পারেন ছাত্রছাত্রীদের মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটিয়ে তাদের কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে। এক্ষেত্রে শিক্ষক হিসাবে আব্দুল মতিন স্যার জীবনে কতটুকু সফল। সেটা তাঁর প্রাণ প্রিয় ছাত্রছাত্রীরাই ভাল জানেন। তবে আব্দুল মতিন স্যার সমাজকে আলোকিত করার প্রাণান্তকর চেষ্টা করেছেন অবসরের আগ পর্যন্ত। শিক্ষকতা জীবনের দীর্ঘ সাড়ে ৩৭ বছর প্রাপ্তি অ-প্রাপ্তির হিসাব না কষে ছাত্রছাত্রীদেরকে মেধা বিকাশে এবং আলোকিত মানুষ হিসাবে গড়ে তোলার জন্য চেষ্টা করেন এই মহান মানুষটি। এই শ্রদ্ধেয় শিক্ষকের অবসর জীবন যেন সুখের হয় , শান্তিময় হয়-এ প্রার্থনা করি। আমরা তার দীর্ঘায়ু কামনা করছি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো সংবাদ