করাঙ্গী নিউজ
স্বাগতম করাঙ্গী নিউজ নিউজপোর্টালে। ১৫ বছর ধরে সফলতার সাথে নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন করে আসছে করাঙ্গী নিউজ। দেশ বিদেশের সব খবর পেতে সাথে থাকুন আমাদের। বিজ্ঞাপন দেয়ার জন‌্য যোগাযোগ করুন ০১৮৫৫৫০৭২৩৪ নাম্বারে।

মুক্তপথ থেকে করাঙ্গী

  • সংবাদ প্রকাশের সময়: সোমবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২১

অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য :
আজ থেকে প্রায় ২৫ বছর আগের কথা। বাহুবলের মিরপুরে কলেজ রোডের গোড়ায় এখন যেখানে ‘জয়গুরু ভাণ্ডার’ নামে জগদীশ বাবুর যে মুদি দোকানটি রয়েছে ঠিক সেখানেই ‘সাপ্তাহিক মুক্তপথ’ নামে একটি পত্রিকার অফিস ছিল। সম্ভবত সাপ্তাহিক মুক্তপথই ছিল বাহুবল থেকে প্রকাশিত প্রথম কোনো পত্রিকা। এর সম্পাদক ও প্রকাশক ছিলেন বর্তমান বাহুবল উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াসমিন আপার স্বামী এম এ জব্বার ফুল মিয়া। ফুল মিয়া ভাই ওইসময়ে একটি এনজিও পরিচালনা করতেন। সেই এনজিওর বেঁচে যাওয়া টাকা থেকে সপ্তাহে মুক্তপথ পত্রিকাটি প্রকাশ করতেন। পত্রিকা যেদিন বের হত তার দুদিন আগে জাবেদ ভাই, মনি ভাইসহ অন্যদের কি যে ব্যস্ততা থাকত তা না দেখলে কেউই বিশ্বাস করবেন না। এমনও সপ্তাহ গেছে নির্ঘুম থেকে পত্রিকা বের করে তারা দুজন বাড়ি গেছেন। দীর্ঘদিন পত্রিকাটি চলছিল। ক্রমান্বয়ে পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে পড়ে।

এরপরে বাহুবল থেকে ‘সাপ্তাহিক হবিগঞ্জের সংবাদ’ নামে আরেকটি পত্রিকা বের করেন সোহেল আহমদ কুটি ভাই। দীর্ঘদিন নিয়মিতভাবে পত্রিকাটি চলছে। এখনো হয়ত পত্রিকাটি বের হয়, কিন্তু ওইভাবে আর পড়ার সুযোগ হয়নি। তবে বাহুবল সদরে কুটি ভাই এখনো হবিগঞ্জের সংবাদ পত্রিকার নামে অফিস রেখেছেন। প্রায়ই প্রতি সন্ধ্যায় কুটি ভাই তার পার্ষদদের নিয়ে আড্ডা জমান। মুড়ি, চানাচুরের মিশ্রণে আড্ডাটি মাঝে মাঝে জমজমাট হয় বলে খবর আসে। কিন্তু নিজে আর থাকতে পারিনি।

ছোটবেলা থেকেই দেখেছি উপজেলা পরিষদের প্রধান ফটকের উল্টোদিকে আব্দুল আউয়াল তহবিলদার সবুজ ভাইয়ের পত্রিকার এজেন্সি ছিল। আজ থেকে কুড়ি-বাইশ বছর আগে বাংলাদেশের এমন কোনো পত্রিকা বাকি ছিল না যা সবুজ ভাইয়ের এজেন্সিতে পাওয়া যেত না। এটা শুধু পত্রিকার এজেন্সি ছিল না, বাহুবলের সুধীসমাজের একটি আড্ডাখানাও ছিল। ধীরে ধীরে সবুজ ভাই সেই এজেন্সিও ছেড়ে দিলেন। এখন বাহুবলে একটিও পত্রিকার এজেন্সি নেই। সবুজ ভাইয়ের এই ইতিহাস এখনকার প্রজন্ম জানেনও না।

আজ থেকে ২৫ বছর আগে উপরের তিনটি বিষয়ই ছিল বাহুবলের শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতি জগতের সূতিকাগার। এই তিনটিই যখন আমাদের কাছ থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে তখনই আজ থেকে তের বছর আগে অনলাইন পত্রিকা ‘করাঙ্গী নিউজের’ জন্ম দেয় সিদ্দিকুর রহমান মাসুম। হারিয়ে যাওয়া তিনটি বিষয়ের শূণ্যস্থান পূরণে নেমে পড়ে করাঙ্গী নিউজ। যখন সে ডিজিটাল প্লাটফর্মের পত্রিকা করাঙ্গী নিউজ শুরু করে তখন অনেকেই এর মাজেজা বুঝতে পারেননি। এনিয়ে বহু টিপ্পনি সহ্য করেছে মাসুম। কিন্ত আজ? আজ তের বছর পর এসে করাঙ্গী নিউজ পাঠকের হৃদয়ে জায়াগা করে নিচ্ছে আপন মহিমায়। বিশেষ করে বাহুবলের কোনো ঘটনা করাঙ্গী নিউজে ছাপা হলে অংশীজনরা খুশি বোধ করেন।

করাঙ্গী নামটি কিন্তু বাহুবলের হৃদয়ে লিখা। বাহুবলের বুক চিরে যে নদীটি প্রবাহিত তার নামও করাঙ্গী। সম্ভবত সেখান থেকেই নামটি নিয়ে পত্রিকার নামকরণ হয়েছে। তবে সে যাই হোক, করাঙ্গী নিউজ আজ চর্তুদিকে সমাদৃত। তার প্রতিটি সংবাদ বিভিন্ন মহলে আলোড়ন তুলে। ফলে বাহুবলে করাঙ্গী নিউজ এখন আর ছোট বা নবীন নয়। রীতিমত প্রভাব বিস্তারকারী সংবাদ প্রতিষ্ঠান। উপজেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে পাড়ার সংগঠনও মোবাইলে একবার করাঙ্গীতে ঘুরে যায়। এ কিন্তু কম পাওনা নয়। আজ সেই করাঙ্গী নিউজের জন্মদিন। শুভ জন্মদিন করাঙ্গী নিউজ।

আমি যেহেতু বাহুবলে হিন্দু সংগঠন বা মন্দির ভিত্তিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত সেহেতু অনেক খবরই আমার রাখতে হয়। কিছু খবর আমি সংগ্রহ করি আবার কিছু খবর এমনিতেই আমার কাছে উড়ে উড়ে চলে আসে। এরমধ্যে কিছু প্রশ্নও থাকে। তবে সবচেয়ে বেশি যে প্রশ্নের উত্তর আমাকে দিতে হয়েছে সেটি করাঙ্গী নিউজের সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান মাসুম সম্পর্কিত।

আমাদের সমাজ ব্যবস্থা তো এখন রাজনৈতিকভাবে দ্বিখন্ডিত। এই দ্বিখন্ডিত সমাজে মাসুম বিএনপি না জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত? তার মানসিকতা কি? এমনতর প্রশ্নের জবাবে আমি একটি কথাই বলেছি, মাসুম রাজনৈতিক ভাবে যেকোনো আদর্শের অনুসারি হতে পারে। সে নিয়ে আমার মাথাব্যাথা নেই। আমি শুধু দেখছি মাসুম টাকা নিয়ে সংবাদকে ‘নয়ছয়’ করে কি না? কিন্তু আমি আশ্চর্যজনকভাবে দেখলাম মাসুম তাও করছে না। অথচ ইচ্ছে করলেই সে টাকা নিয়ে ভুল সংবাদ ছাপতে পারত। কিন্তু তা না করে মোটামুটি সত্য সংবাদই প্রকাশ করছে। একেবারে যেন পেশাদার। অথচ উপজেলা পর্যায়ে থেকে পেশাদার সংবাদকর্মী হওয়া খুবই কঠিন। মাসুম সেই কঠিন কাজটিই করে যাচ্ছে। আর ঠিক এই জায়গাতেই মাসুমকে আমার পছন্দ। কারণ করাঙ্গীতে মাসুম এমন কিছু সংবাদ এরইমধ্যে প্রকাশ করেছে যা ‘হজম’ করা সম্পাদক হিসেবে কষ্টকর ছিল। কিন্তু স্বচ্ছ থাকার কারণে মাসুম করাঙ্গী নিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। তার এগিয়ে যাওয়া আরো সমৃদ্ধ হোক। বিকশিত হোক করাঙ্গী নিউজ।

করাঙ্গী নিউজ ছাড়াও সিদ্দিকুর রহমান মাসুম জাতীয় দৈনিক যুগান্তরের বাহুবল প্রতিনিধি। সিলেট থেকে প্রকাশিত প্রাচীন দৈনিক জালালাবাদেরও হবিগঞ্জ প্রতিনিধি। বাহুবলে যে দুচারজন জাতীয় পত্রিকার সংবাদ প্রতিনিধি রয়েছেন মাসুম তারমধ্যে একজন।

বাহুবলের বুক চিরে করাঙ্গী নদী যতদিন প্রবাহিত হবে ততদিন যেন করাঙ্গী নিউজও তার পথচলা অব্যাহত রাখে। সবশেষে, ভালো থাকুক করাঙ্গী নিউজ।

লেখক: সিনিয়র রিপোর্টার, দৈনিক ভোরের কাগজ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো সংবাদ