শনিবার, ১০ মে ২০২৫, ১১:১৩ অপরাহ্ন
হাবিব সরোয়ার আজাদ,সুনামগঞ্জ: প্রাচীন লাউড় রাজ্যের রাজধানী সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার হলহলিয়া দূর্গ ও ব্রাহ্মনগাঁওয়ের গৌর গোবিন্দের রাজবাড়ির উৎখননের কাজ শুরু হয়েছে।
বুধবার থেকে শুরু হওয়া উৎখনন কাজের মধ্য দিয়ে প্রায় ১২’শ বছরের পুরনো রাজবাড়িটি তার অতীত ইতিহাস ঐহিত্য নিয়ে বুধবার থেকে ফের মাথা উচু করে দাঁড়াতে শুরু করেছে।
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ৯ সদস্যের একটি টিম দলবদ্ধভাবে এ খনন কাজ করছেন।
প্রসঙ্গত: সুনামগঞ্জের তাহিরপুুর উপজেলার বড়দল (উওর) ইউনিয়নের হলহলিয়া গ্রামটি সুপ্রাচীনকালে লাউড় রাজ্যের রাজধানী ছিল।
লাউড় রাজ্যের চতুসীমা ছিল পশ্চিমে ব্রহ্মপুত্র নদ, পূর্বে জৈন্তিয়া, উত্তরে কামরুপ সীমান্ত ও দক্ষিণে বর্তমানে ব্রাম্মণবাড়িয়া পর্যন্ত।
বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া এই লাউড় রাজ্যের প্রাচীন নিদর্শন হাওলি প্রকৃতপক্ষে ছিলো রাজবাড়ি। তৎকালীন রাজা বিজয় সিংহ আজ থেকে প্রায় ১২’শ বছর পূর্বে এই বাড়িটি নির্মাণ করেছিলেন।
এই রাজবাড়িটি ৩০ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত। তৎকালে নির্মিত এই রাজ বাড়িটিতে ছিল বন্দীশালা, সিংহদ্ধার, নাচঘর, দরবার হল, পুকুর ও সীমানা প্রাচীর যার কিয়দংশ আজ ১২শ বছর পরেও দৃশ্যমান রয়েছে।
বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ সাদিকের প্রচেষ্টায় দুই মাসব্যাপি চলবে উৎখননের কাজ। প্রাচীন নিদর্শন, ইতিহাস সম্পর্কে জানা, পর্যটন বিকাশের উদ্দেশ্যে ওই খনন কাজ শুরু করা হয়।’
২০১৭ সালের ২০ নভেম্বর ও ২১ নভেম্বর পয্যন্ত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতœতত্ত্ব বিভাগের দুজন শিক্ষক ও একদল শিক্ষার্থী গবেষক অধ্যাপক ড. অসিত বরণ পালের নেতৃত্বে এই হাওলি রাজবাড়ি সংরক্ষণ ও খননের লক্ষ্যে প্রাথমিক মাঠ জরিপ কার্য পরিচালনা করেছিলেন।
প্রতœœতত্ত্ব অধিদপ্তর চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আঞ্চলিক পরিচালকের নেতৃত্বে ৯ সদস্য বিশিষ্ট টিমে রয়েছেন ঢাকা প্রতœœতত্ত্ব অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক মাহবুবুল আলম, কুমিল্লা ময়নামতি যাদুঘরের কাস্টেডিয়ান ড. আহমেদ আব্দুল্লাহ, সহকারী কাস্টেডিয়ান মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান, কুমিল্লা প্রতœœতত্ত্ব¡ অধিদপ্তরের সিনিয়র ড্রাফটম্যান সিরাজুল ইসলাম, জালাল আহমেদ, আলোকচিত্রকর নুরুজ্জামান মিয়া, রেকর্ডার ওমর ফারুক পাঠোয়ারী, অফিস সহায়ক লক্ষন দাস। ৯ সদস্যের টিম আগামী দুই মাস খনন কাজ করবেন।’
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আঞ্চলিক পরিচালক ড. মুহাম্মদ আতাউর রহমানের সভাপতিত্বে খনন কাজের উদ্ভোধন উপলক্ষে উপজেলার হলহলিয়ায় এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. বরকতুল্লাহ খান।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার পূর্ণেন্দু দেব,অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শ্রী কানন কুমার দেবনাথ , জয়নাল আবেদীন ডিগ্রি কলেজ অধ্যক্ষ ফণী ভূষন সরকার, বাদাঘাট ডিগ্রি কলেজ অধ্যক্ষ জুনাব আলী প্রমুখ।’
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আঞ্চলিক পরিচালক ড. মুহাম্মদ আতাউর রহমান বুধবার রাতে জানান, প্রথম দিনের খননকাজের মধ্য দিয়ে রাজবাড়ির সীমানা প্রাচীরের বেশ কিছু অংশ ,রাজবাড়ির প্রবেশদ্বার সফলভাবে খনন করে দৃশ্যমান পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন পুরো খননকাজ শেষ হলে পর্যটকরা অনায়াসে এ রাজ্যের ঐতিহ্যের নির্দশন দর্শনের পাশাপাশী প্রায় ১২’শ বছরের পুরনো ইতিহাস সম্পর্কে জানার সুযোগ পাবেন বলে আশা করি।’