শনিবার, ১০ মে ২০২৫, ০৯:২২ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিনিধি, সুনামগঞ্জ: সুনাগঞ্জ জেলার শাল্লায় উপজেলার জোয়ারিয়া বাঁধ ভেঙ্গে তলিয়ে গেছে কৃষকের সোনালী ফসল। ইতোপূর্বেই পত্র-পত্রিকায় জোয়ারিয়া বাঁধ প্রকল্প কমিটির সভাপতি আব্দুর রহমানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিল এলাকাবাসী।
এদিকে, জোয়ারিয়া বাঁধ ভেঙ্গে শ্রীহাইল, হোসেনপুর, গোবিন্দপুর, ইছাকপুর, শঙ্করপুরসহ আরো বেশ ক’টি গ্রামের ফসল তলিয়ে গেছে বলে জানা যায়। এলাবাসী বলেছেন মাত্র ৩০ ভাগ জমির ফসল কাটা হয়েছে।
অন্যদিকে, জোয়ারিয়া বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় ছায়ারের বেড়িবাঁধসহ অন্যান্য বাঁধগুলো ভেঙ্গে গিয়ে ছায়ার হাওরের ফসলও তলিয়ে যাওয়ার ভয়ে শঙ্কিত উপজেলার কৃষকরা।
এদিকে, কৃষকদের দ্রুত ধান কাটার জন্য মাইকিং করেছে শাল্লা উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর। কারণ আগামী ২২ ও ২৩ এপ্রিল বন্যার পূর্বাভাস জানিয়েছে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। দারাইন নদী এমনিতেই পানিতে টুইটুম্বর। যেকোন সময় বাঁধ ভেঙ্গে ফসল তলিয়ে যেতে পারে। ইতোপূর্বেই হাওরের নিচু জায়গাগুলোতে পানি জমে অনেক ফসল তলিয়ে গেছে। ফলে কৃষক হতাশাগ্রস্ত হয়ে আধা আধি ধান কাটাচ্ছেন। এর মধ্যে কৃষি অফিসের এমন মাইকিংয়ে আরও উদ্বিগ্ন শাল্লার কৃষকরা।
মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) উপজেলা কৃষি অফিসার কে.এম বদরুল হকের সাথে একান্ত আলাপকালে তিনি বলেন- আবহাওয়া অফিস ও আমাদের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে আগামী ২২-২৩ এপ্রিল বন্যার সম্ভাবনা রয়েছে।
অন্যদিকে, দারাইন ও কুশিয়ারা নদীর পানি ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। যেকোন সময় পানি হাওরে ঢুকে ফসলের ক্ষতি করতে পারে। তার উপর নেই পর্যাপ্ত ধান কর্তনের শ্রমিক। এ কারণে কৃষকদের সচেতন করতে মাইকিং করা হচ্ছে উপজেলার প্রতিটি মসজিদে। যাতে কৃষকরা দ্রুত ধান কেটে বন্যার পূর্বেই গোলায় তুলতে পারেন।
তিনি আরও বলেন- এ উপজেলায় ২২ হাজার হেক্টর বোরো জমি রয়েছে। উক্ত ২২ হাজার হেক্টর বোরো জমি থেকে ১লাখ ২০ হাজার মেট্রিকটন বোরো ধান উৎপন্ন হয়। এ পর্যন্ত এ উপজেলায় ধান কাটা হয়েছে ৩০ ভাগ, ধান পেকেছে ৮০ ভাগ। উপজেলায় ৫ হাজার ৭শ’ হেক্টর জমির ধান কর্তন হয়েছে। আগামী ৭-৮ দিনের মধ্যে বাকি ধান কর্তন করা যাবে বলে কৃষি অফিসার কে.এম বদরুল হক জানান।
শাল্লা উপজেলার বেশ ক’জন কৃষকের সাথে কথা হলে বাবুল রায়, আয়েজ মিয়া, অমলেন্দু সরকার, হাবিব মিয়া, নিখলেশ রায়, সোহেল মিয়া ও মাও. আব্দুল মান্নান বলেন- ধান কাটার লোকের অভাবে আধা আধি ধান কাটাচ্ছি। আবার ধান বাড়িতে আনতে বস্তা প্রতি গুণতে হচ্ছে ৫০ টাকা। কেউ কেউ আবার এক একর জমির ধান কাটতে ৩৬ মণ ধান দিতে হচ্ছে শ্রমিকদেরকে। ১ একরে ধান উৎপন্ন হয় মাত্র ৬০ থেকে ৬৫ মণ। তার উপর মাড়াই খরচ তো আছেই। হিসেব করলে দেখা যায়- বোরো ফসল উৎপাদনে কৃষকের লোকশানের শেষ নেই।
গত ১৭ এপ্রিল রাতে শিলাবৃষ্টিতে ছায়ার হাওরে কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে কৃষকরা জানান। তার উপর কৃষি অফিসের এমন ২২-২৩ এপ্রিল ঝড় তোফান ও বন্যার খবরে কৃষকরা আরও বেশি চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। ফলে আধা পাকা ধানও অনেক কৃষক হাঁটু পানি কিংবা কোমর পানিতে নেমে কাটছেন। ঘরে বসে নেই গৃহিনীরাও। তারাও কাঁচি হাতে নিয়ে ক্ষেতে ধান কাটতে শুরু করেছেন।