শনিবার, ১০ মে ২০২৫, ০৩:৪০ অপরাহ্ন
মৃত্যু অবধারিত সত্য । যে কোন ধর্ম বর্ণ গোষ্ঠীর জন্য তা নির্ধারিত । মৃত্যুর মধ্য দিয়ে জীবনের পূর্ণতা পায়
ও পরিসমাপ্তি ঘটে । সাধারণত পরিপূর্ণ বয়সে মৃত্যুবরণ হলে সেটা মেনে নেয়া যায় । কিন্তু অকালে চলে যাওয়া , অসময়ে চলে যাওয়া যে কতো কষ্টের । তা ভুক্তভোগী ছাড়া কেউই বুঝতে পারে না । যার যায় সেই বুঝে কি অসহনীয় যন্ত্রণা । যার শুরু আছে শেষ নেই । করোনা মহামারী কালে আমরা দেশে বিদেশে এমন অনেক মানুষকে হারিয়েছি । মনকে শান্তনা দিয়েছি তাঁর আয়ু শেষ বলে । নিঃসন্দেহে আল্লাহর হুকুমে তার মৃত্যু হয়েছে । যদি একি এলাকায় প্রতি সপ্তাহে চার পাঁচজন মৃত্যু বরণ করে তখন যেন কেমন লাগে ?
তেমনি একটি মৃত্যু আমিনুর রশীদ এমরান । আমার লেখার পাঠকদের তথা হবিগঞ্জ জেলা বাসিকে তাকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার মতো কিছু নেই । জাতীয়তাবাদী ঘরানার মানুষসহ সকল দলের মানুষ তাকে এমরান এ নামেই ডাকতে স্বচ্ছন্দ বোধ করে । হবিগঞ্জ জেলায় বিএনপি ও ছাত্রদলের রাজনীতিতে সে অনেক পদ ই অলঙ্কৃত করেছে । পদের কথা লিখে আমার লেখার কলেবর বৃদ্ধি করতে চাই না । সে একাধারে ছিল রাজনৈতিক নেতা ও ক্রীড়া মোদী । রাজনৈতিক ময়দানের পাশাপাশি খেলাধুলার জগতে ও ছিল তার ঈর্ষণীয় পদচারণা । যদি ও তার সাথে আমার রাজনৈতিক ও খেলাধুলার জগতে কোন পূর্ব পরিচয় ছিল না । কিন্তু তৎকালীন সময়ে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় তার এসব কর্ম কান্ড আমার চোখ এড়াতো না । উপরন্তু একি জেলার বাসিন্দা হওয়ায় তার ব্যাপারে অনেক খবরাখবর জানতে পারতাম ।
বিশেষ করে এরশাদ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বর্তমান সরকার বিরোধী আন্দোলনে তার নির্ভীক ও সাহসি ভূমিকা সর্বজন স্বীকৃত । আমি ১৯৯৭ সালের শেষের দিকে দেশান্তরী হই । তখনকার যোগাযোগ ব্যাবস্থা এখনকার মতো সহজ লভ্য ছিল না । পত্র পত্রিকাও অনলাইনে ছিলনা । ছিলনা কোন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম । তাই অনেক খবরাখবর থেকে যায় আমার অগোচরে । এরশাদ পতনের পর জাতীয়তাবাদী দল দু টার্ম ক্ষমতায় ছিল । ১৯৯১ ও ২০০৪ সালে । মাঝে ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকে । বিএনপি ক্ষমতায় গেলে তার নেতা কর্মীরা ও উদর পূর্তি নিয়ে ব্যস্ত থাকে ।
কিসের নিয়ম , কিসের অনিয়ম দলের নাম ভাঙিয়ে অনেকেই তখন আঙ্গুল ফুলে বটগাছ । চোখের সামনে দেখতে পেলাম আমাদের সমবয়সি কথিত নেতারা বড় ভাই ডেকে ডেকে অতি সঙোপনে আখের গুছিয়ে নিয়েছে । জেলা শহরে অনেকেই বাসা বাড়ি করে ফেলেছে । বড় ভাই মন্ত্রীদের তৈল মেরে , মেকি আত্বীয়তার ফাঁদ পেতে ঢাকায় ফ্লাট বাড়ি গাড়ি করে ফেলেছে । রাগ করবেন না এই চিত্র শুধু হবিগঞ্জের নয় । প্রতিটি জেলার বড় ভাইয়েরা যার যার এলাকার মন্ত্রীদের দিয়ে এমন কাজ করিয়েছে । মন্ত্রীদের ও না করে উপায় নেই । এলাকায় বড় ভাই মন্ত্রীর রাজনীতির কেন্দ্র বিন্দু । তাকে ছাড়া মন্ত্রী সাহেব এলাকায় অচল । এটি হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আবহমান কালের ঐতিহ্য । যাকে আমরা চেইন অব কমান্ড বলি ।
যার ধারাবাহিকতার বাহিরে বর্তমান সরকার ও যেতে পারছেনা । স্বাধীনতা পরবর্তী কালে যত দল ই ক্ষমতায় এসেছে কেউই এ বৃত্তের বাইরে যেতে পারেনি । জনকল্যাণে সরকার নিয়োজিত না থেকে থেকেছে শুধু দলের নেতাকর্মীদের কল্যানে । যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছিল সে আকাঙ্ক্ষা আজো অধরা । গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার শুধু নামে আছে । কার্যত জন আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন কোন সরকারের আমলেই পুরোপুরি ঘটেনি । ( যে মাত্রায় ও গতিতে দলের নেতাকর্মী ও চামচা লাভবান হয় , সে মাত্রায় জনগণ হয়না ) যা হচ্ছে তাঁর সুফল দল নির্ভর । দলের নেতাকর্মীদের ভাগ্য বদল হয় । সাধারণ মানুষের হয় না । দলীয় নেতা নেত্রীর ভাগ্য সদা সর্বদা সুপ্রসন্ন ।
যে কারণে দিনে দিনে সাধারণ মানুষ রাজনীতি বিমুখ হয়ে পড়ছে । তাদের মুখে এক কথা , “ লঙ্কা যে যায় সেই রাক্ষস “। ক্ষমতার পালাবদলে আমাদের কিছু যায় আসে না । আজ এ সরকার তো কাল আরেক সরকারের নেতাকর্মীরা খাবে । যে কারণে সরকার পরিবর্তনে সাধারণ মানুষের আগ্রহ কমে গেছে । একমাত্র রাজনৈতিক সুবিধাভোগী ছাড়া কেউ পরিবর্তনের ঝুঁকি নিতে চায় না । তাই বাংলাদেশের রাজনীতি না করা বিশাল জনগোষ্ঠী দিনে দিনে ভোটের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে । অবশ্য এক্ষেত্রে ক্ষমতাসীনদের মেকানিজম নিয়ে ও অনেক অভিযোগ রয়েছে । এ নিয়ে একটি গবেষণা হওয়া দরকার । স্থানীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে এ চিত্র ভিন্ন । অসৎ প্রার্থীরা সামান্য নগদ নারায়নের মাধ্যমে গরিব মানুষদের ভোটে নিয়ে আসে ।
অনেকে আবার তার আত্মীয়তার খাতিরে , গোষ্ঠীর টানে অথবা আঞ্চলিকতার কারনে ভোট প্রদান করে । এমরান এর কথা লিখতে গিয়ে সঙ্গত কারণেই এ লেখা চলে এলো । এমরান যে পর্যায়ের নেতা ছিল যদি তার সরকারের দু টার্ম মন্ত্রীদের জন্য খাটি সরিষার তৈল নিয়ে ঢাকা দৌড়াদৌড়ি করত তাহলে সে অনায়াসে বাকি জীবন সুন্দর ভাবে কাটিয়ে দিতে পারতো । কিন্তু সে তা করেনি । আমেরিকায় এসেও কঠিন পরিশ্রম করে বৈধ উপার্জন করেছে ।
লেখক: মিশিগান যুক্তরাষ্ট্র ।