রবিবার, ১১ মে ২০২৫, ০১:৫৭ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিনিধি, হবিগঞ্জ: হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেছেন, মিডিয়া উন্নয়নকে অংশগ্রহণমূলক করতে সহায়তা করে। সরকার বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে কাজ করে থাকে। সংবাদপত্র আমাদেরকে যে তথ্য প্রদান করে সেখান থেকে আমরা বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি। তাই সংবাদপত্রকে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয়।
শুক্রবার (১০ জানুয়ারী) সকাল সাড়ে ১০টায় হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবে দেশের শীর্ষ স্থানীয় সংবাদপত্র দৈনিক কালেরকণ্ঠের ১০ম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি একথা বলেন।
জেলা প্রশাসক বলেন, হবিগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধের অনেক গৌরবোজ্জল ইতিহাস রয়েছে। হবিগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধাদের চারণ ভূমি। এম এর রবসহ অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধার জন্ম এই মাটিতে। এই মাটিতেই সর্ব প্রথম মুক্তিযোদ্ধের পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছিল। দেশের মুজিবনগর ও তেলিয়াপড়া উভয়টিই ভারতের সীমান্তে হওয়ায় কৌশল গ্রহণের স্থান নির্ধারন করা হয়েছিল। তিনি কালেরকণ্ঠকে মুক্তিযোদ্ধের চেতনায় শানিত হয়ে অন্যায় ও শোষনের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করবে বলে প্রত্যাশা করেন এবং প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা জানানের উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, তিনি হবিগঞ্জকে টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে বদলে দিতে চান। এর জন্য কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।এখানকার পরিবেশের উন্নয়ন, পাঠচক্রের আয়োজন, ঝাকঝকমভাবে মুজিববর্ষ আয়োজন, নাটক ও যাত্রা আয়োজন করব। আয়োজন করব ধর্মসভা। আর শিক্ষার উন্নয়নে এক বছরে ১৫০টি স্কুল পরিদর্শন করা হবে। সকলে মিলে এই কাজ করতে হবে।ভাল কাজ করতে হলে ভাল শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যখন শিশুর ভাল মানুষ দেখে তখন তারা ভাল হতে অনুপ্রেরণা পায়। তরুণ প্রজন্মকে আমাদের অনুপ্রাণিত করতে হবে। তাদেরকে স্বপ্ন দেখাতে হবে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিতরা মনে করে গাড়ী-বাড়ী আর অর্থ ভিত্তই সম্মান দেয়। তা সঠিক নয়। তারা জনগনের কথা শুনতে পাননা বলে এটি মনে করেন। সবাই এখন নিজেদেরকে চালাক ও বুদ্ধিমানভাবে। আসলে নিজেকে চালাক মনে না করে বোকা মনে করা এবং জ্ঞানী মনে না করে মুর্খ ভাবতে পারলে জ্ঞান আহরনে স্পৃহা সৃষ্টি হত এবং সমাজ পরিবর্তন হত।
জেলা প্রশাসক বলেন, আমরা এখন শর্টকাটে অভ্যস্থ হয়ে উঠছি। ভাল কাজে কাউকে পাওয়া যায় না। কারও কোন পদ পদবী থাকলে যা তার প্রাপ্য তাও নেয়। আবার যা প্রাপ্য নয় তাও নেয়। আবার যখন পদ থাকে না তখন তারা পাগল হয়ে যায়। নিজের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তিনি বেশ কয়েকটি মসজিদ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত। মসজিদ কমিটির লোকজন যখন তার কাছে মিটিং করার জন্য আসে তখন তিনি ফজরের নামাজের সময় মিটিং করতে বললে তারা আর রাজি হয় না। কোন রোগী যখন সাহায্যের জন্য আসে তখন ঔষধ দিলে তা না নিয়ে নগদ টাকা চায়। লেখাপড়ার সাহায্য চাইলে বেতন মওকুফ করে দিলে সন্তোষ্ট হয় না। কোন রাস্তার সমস্যরা কথা বললে সেই রাস্তা মেরামত করে দিলে কেউ খুশি হয় না, তারা চায় প্রজেক্ট এবং অর্থ বরাদ্ধ। তিনি এবার তার কাছে আসা বিভিন্ন উনয়ন প্রকল্পের টাকার পুরোটাই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেয়ার ঘোষনা দেন। তবে আগে কাজ করলেই পরে টাকা দেয়া হবে। আর ১০টাকা পেতে হলে খরচ করতে হবে ১২টাকা।
কালেরকণ্ঠের হবিগঞ্জ প্রতিনিধি শাহ ফখরুজ্জামান ও শুভ সংঘের সাধারন সম্পাদক কবি সিদ্দিকী হারুন এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান।
বিশেষ অতিথি ছিলেন সংবর্ধিত বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী টিপু, হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান শহীদ উদ্দিন চৌধুরী, প্রেসক্লাব সভাপতি মো. ইসমাইল হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ জাহিদুল ইসলাম, সরকারী বৃন্দাবন কলেজের সহকারী অধ্যাপক ড. সুভাষ চন্দ্র দেব, হবিগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মিজানুর রহমান শামীম, হবিগঞ্জে জিপি-ভিপি এডভোকেট আব্দুল মোছাব্বির বকুল ও যুক্তরাজ্য কমিউনিটি নেতা এডভোকেট চৌধুরী ফয়জুর রহমান মোস্তাক।
অন্যান্যের মাঝে বক্তৃতা করেন, বিশিষ্ট শিশু সংগঠক বাদল কুমার রায়, এটিএন বাংলার প্রতিনিধি এম এ হালিম, নিউজ টোয়েন্টিফোর এর প্রতিনিধি শ্রীকান্ত গোপ, মঈন উদ্দিন আহমেদ, কালেরকণ্ঠের চুনারুঘাট প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর আলম, সৈয়দুল হাসান সাঈদ, শাহ জয়নাল আবেদীন রাসেল, গউছ আলম, সুরবিতানের সাধারন সম্পাদক আবুল ফজল, সিদ্ধার্থ বিশ্বাস ও সিরাজুল ইসলাম জীবন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী টিপু বলেন, আমরা সম্মাননা পাওয়ার জন্য যুদ্ধ করি নাই। দেশকে স্বাধীন করার জন্য আমরা সংগ্রাম করেছি। এতদিন পরে আমাদেরকে যে সম্মাননা জানানো হচ্ছে তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি কালেরকণ্ঠ সব ময় বলিষ্ট ভূমিকা রাখায় কালেরকণ্ঠের সম্পাদকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে তিনি ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি সংবর্ধিত বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী টিপুকে উত্তরিয় পরিয়ে দেয়ার পর একটি ক্রেস্ট ও নগদ ১০ হাজার টাকা তুলে দেন। পরে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয়। সর্বশেষ ছিল উপস্থিতি অতিথি ও সকলের জন্য আপ্যায়ন। কালেরকণ্ঠের পাঠক ফোরাম শুভ সংঘ এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।