• Youtube
  • English Version
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৬:১২ অপরাহ্ন

করাঙ্গী নিউজ
স্বাগতম করাঙ্গী নিউজ নিউজপোর্টালে। ১৫ বছর ধরে সফলতার সাথে নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন করে আসছে করাঙ্গী নিউজ। দেশ বিদেশের সব খবর পেতে সাথে থাকুন আমাদের। বিজ্ঞাপন দেয়ার জন‌্য যোগাযোগ করুন ০১৮৫৫৫০৭২৩৪ নাম্বারে।

বিয়ের চাপ দেয়ায় তামান্নাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা

  • সংবাদ প্রকাশের সময়: শুক্রবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৯

চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি: হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে চাঞ্চল্যকর তামান্না আক্তার প্রিয়া (১৪) নামের কিশোরীকে হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। গ্রেফতারে পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত এবং একাই সে হত্যা করেছে বলে দায় স্বীকার করে নিহত তামান্নার চাচাত ভাই ও প্রেমিক আলমগীর।

বুধবার দিবাগত গভীর রাতে চুনারুঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ নাজমুল হক এর নেতৃত্বে একদল পুলিশ বাহুবলের মিরপুর ইনিয়নের চন্দ্রছড়ি গ্রামে অভিযান চালিয়ে দুই সন্তানের জনক ঘাতক আলমগীর (২৫) কে গ্রেফতার করে।

সে নিহত তামান্নার আপন চাচাত ভাই এবং একই গ্রামের মৃত আব্দুল হাসিমের ছেলে।

বৃহস্পতিবার ঘাতক আলমগীরকে হবিগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলামের আদালতে হাজির করা হলে আলমগীর ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। এসময় সে হত্যা কান্ডের সাথে জড়িত বলে দায় স্বীকার করে।

জানা যায়, হত্যা মালমার একদিনের মাথায় প্রযুক্তির মাধ্যমে বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর ঘাতক প্রেমিক আলমগীরকে তার শশুর বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। আলমগীর পেশায় একজন রাজ মেস্ত্রী। দীর্ঘদিন ধরে মানিকগঞ্জ জেলা থেকে রাজমিস্ত্রীর কাজ করে। মাঝে মধ্যে বাড়িতে আসত। বাড়ির খোজ খবর নিতে হঠাৎ একদিন তার মেজু চাচীর মোবাইলে ফোন করে আলমগীর। তখন ফোন রিসিভ করে তামান্না আক্তার প্রিয়া। তখন তার সাথে বেশ কয়েক মিনিট কথা হয় তাদের মাঝে।

এর পর থেকে মাঝে মধ্যে চাচীর নাম্বারে ফোন দিয়ে কথা বলতো দুজনে। গোপনে চলতে থাকে তাদের প্রেম। এক অপরকে কাছে পেতে মরিয়া হয়ে উঠে। তামান্নার মা সেলিনা বেগম ৩/৪বছর ধরে গৃহকর্মীর কাজে সৌদি আরব থাকায় দুজনে এ সুযোগ কাজে লাগায়। ঘরে তামান্নার পিতা ও ছোট একটি ভাই ছাড়া আর কেউ নেই। পিতা বেশির ভাগ সময়ই কাজের কারণে বাহিরে থাকেন। আর ছোট ভাই লেখাপড়া করে। প্রেমের সর্ম্পক গড়ে ওঠায় মাঝে মাঝে আলমগীর দুধপাতিল গ্রামে আসত। এরই সুবাধে তারা একাধিকবার শারীরিক সর্ম্পকে মিলিত হয়।

আলমগীর সুযোগ সন্ধানে তার স্ত্রী সন্তানদের কাছে না গিয়ে মানিকগঞ্জ থেকে গ্রামের বাড়ি আসতো তামান্নার কাছে। তামান্নার সাথে দৈহিক সম্পর্কের এক পর্যায়ে সে ৩ মাসের অন্তঃসত্বা হয়ে পড়ে। অন্তঃসত্বা হওয়ার কথা শুনে সমস্যায় পড়ে যায় আলমগীর। একদিকে তার স্ত্রী সন্তান অন্যদিকে প্রেমিকার অন্তঃসত্ত্বার খবর। তারপরও আলমগীর তামান্নাকে ধর্য্য ধরার কথা বলে এবং তার স্ত্রী সন্তানদের একটি আলাদা ঘর বানিয়ে দিয়ে তামান্নাকে মানিকগঞ্জ নিয়ে যাবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। বিষয়টি মানতে নারাজ তামান্না। এনিয়ে তাদের মধ্যে চলে মনোমালিন্য। অবশেষে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় চাপ কাটাতে গর্ভপাত করাতে চেয়েছিল আলমগীর।

তামান্না প্রেমিক আলমগীরকে বিয়ের জন্য একাধিকবার চাপ সৃষ্টি করে। কিন্তু ঘটনার দিন মানিকগঞ্জ যাওয়ার কথা বলে বাড়ির পাশ্ববর্তী উপজেলার দুধপাতিল গ্রামের শাল বাগানে নিয়ে যায়। সেদিন তারা দুজন সেখানে সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাটায়। সেখানে আলমগীর ও তামান্না মধ্যে কথা কাটাকাটি হলে এক পর্যায়ে আলমগীর উত্তেজিত হয়ে তামান্নাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। হত্যাকান্ডে সে একাই জড়িত বলে জানায়। তার মৃত্যু নিশ্চিত হলে সকাল ৭টা পর্যন্ত লাশ পাহাড়া দেয় আলমগীর। যাহাতে করে শেয়াল কুকুর লাশ না খেয়ে ফেলে। এর পর সে তার শশুর বাড়ি মিরপুরে পালিয়ে যায়। হত্যার দায় স্বীকার করে এমনই লোমহর্ষক বর্ণনা আদালতে দেয় ঘাতক আলমগীর।

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার ১১টায় দুধপাতিল মহুরী ছড়ার পাশে বন্দের বাড়ি পশ্চিমে সাল বাগানে একটি মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় লোকজন পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে চুনারুঘাট থানার এসআই মোস্তফা কামালের নেতৃত্বে একদল পুলিশ স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় মৃত দেহটি উদ্ধার করেন। এঘটনায় তামান্নার পিতা বাদী হয়ে ঘাতক আলমগীরকে আসামী করে চুনারুঘাট থানায় একটি মামলা দায়ের করে। মামলা দায়েরের পর হত্যার ক্লু উদঘাটন এবং আসামী গ্রেফতার করতে মাঠে নামে পুলিশ। এক পর্যায়ে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঘাতক আলমগীরকে গ্রেফতার করা হয়।

এ ব্যাপারে চুনারুঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ নাজমুল হক জানান, হত্যা মালমার একদিনের মাথায় প্রযুক্তির মাধ্যমে মুল আসামীকে গ্রেফতার করতে আমরা সক্ষম হয়েছি। তিনি আরও বলেন, হবিগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্লা এর নির্দেশে আমরা বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর ঘাতক প্রেমিক আলমগীরকে তার শশুর বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। ময়না তদন্তের প্রতিবেদন হাতে পেলেই খুবই শীঘ্রই এ মামলার চার্জশীট দাখিল করা হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো সংবাদ