নিজস্ব প্রতিনিধি, হবিগঞ্জ: অপরিকল্পিত বালু, মাটি উত্তোলন, দখল ও ময়লা আবর্জনা ফেলার কারণে নদীর প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। পানি দূষণসহ নদী গর্ভের গঠন প্রক্রিয়া বদলে যাচ্ছে, নদী ভাঙছে, মাছসহ জলজ প্রাণীর প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। খোয়াই নদী পরিদর্শন শেষে ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) ও খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার এর নেতৃবৃন্দ একথা বলেন।
আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস ২০২৪ উপলক্ষে ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) ও খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার খোয়াই নদীতে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন, দখল-দূষণ পরিদর্শন করেন।
১৮ মার্চ মঙ্গলবার বেলা ১১ টা থেকে বিকেল ৩ টা পর্যন্ত নৌকা নিয়ে খোয়াই নদীর বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করা হয়। এসময় প্রতিনিধিদল দেখেন নদীর ভিতর থেকে বড় বড় ড্রেজার মেশিন, এস্কেভেটর, ট্রাক্টর দিয়ে অনিয়ন্ত্রিতভাবে মাটি ও বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। নদীর ভিতর গভীর গর্ত করে বড় বড় পুকুর, দিঘির মতো করে ফেলা হয়েছে। এছাড়া খোয়াই মুখ এলাকায় নদীতে আবর্জনা ফেলায় ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে এলাকাটি। যা থেকে দুর্গন্ধ ও দূষণ ছড়াচ্ছে।
পরিদর্শনকালে ছিলেন পরিবেশ সংগঠক, লেখক তাহমিনা বেগম গিনি, খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার তোফাজ্জল সোহেল, হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এর মৎস্য বিজ্ঞান অনুষদ এর সহকারী অধ্যাপক মো: আইনুদ্দিন হক, জলজ সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক ইফতেখার আহমেদ ফাগুন, প্রভাষক মো: আবু তালহা, প্রভাষক অলকা শাহ রায়, প্রভাষক শারমিন আহমেদ, গাছ মামা খ্যাত মো: রায়হান, পরিবেশকর্মী সাইফুল ইসলাম, এজাজ মাহমুদ, রাব্বী মোহাম্মদ জয় প্রমুখ।
প্রভাষক ইফতেখার আহমেদ ফাগুন বলেন, নদীতে বালু উত্তোলনের ফলে নদী স্বাভাবিক গতি হারায়। একইসাথে নদীর পানি ঘোলা হয়। মাছ ও জলজ প্রাণির প্রজনন ও বংশ বিস্তারের উপর এর বিরূপ প্রভাব পড়ে।
সহ: অধ্যাপক জনাব মো. আইনুদ্দিন হক বলেন, আমরা দেখছি খোয়াইমুখ এলাকায় নদীতে বিভিন্ন ধরনের ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। মানুষ এই নদীর পানি গোসল এবং গৃহস্থালীর কাজে ব্যবহার করছে। বিশেষ করে থালা-বাসন, কাপড়-চোপড় ধৌতসহ প্রাত্যহিক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে এই দূষিত পানি। এতে করে মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকির সমূহ সম্ভাবনা ব্যাপকভাবে রয়েছে। খোয়াইমুখ এলাকায় ময়লা-আবর্জনা ফেলা বন্ধ করে এলাকাটিকে দূষণমুক্ত করতে হবে। যা নদীতীরবর্তী মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার তোফাজ্জল সোহেল বলেন, নদীর অভ্যন্তর থেকে এস্কেভেটর, ড্রেজার যন্ত্র দ্বারা বালু, মাটি উত্তোলনের চিত্র ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। নদীর ভিতর বড় বড় গভীর গর্ত করা হচ্ছে। যা নদীর ভুচিত্রের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে নদীতে যখন স্বাভাবিক পানি কিংবা বান দেখা দিবে তখন এইসব গর্তে পানির ঘূর্ণি তৈরি হবে। এই ঘূর্ণন তীরে আঘাত করে ভাঙনের সৃষ্টি হতে পারে। এমন নেতিবাচক প্রভাব ও প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপন্ন হয়ে মানুষ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বালু- মাটি উত্তোলনে সৃষ্ট বায়ু দূষণে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে।
তাহমিনা বেগম গিনি বলেন, এই অঞ্চলের স্বাস্থ্যকর পরিবেশের জন্য খোয়াই নদী থেকে অনিয়ন্ত্রিত বালু -মাটি উত্তোলন ও ময়লা আবর্জনা ফেলা বন্ধ করে, নদী খনন ও তীর সুরক্ষা করে এর স্বাভাবিক প্রভাব নিশ্চিত করতে হবে।#