বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:০১ পূর্বাহ্ন
এম,এ আহমদ আজাদ,নবীগঞ্জ(হবিগঞ্জ):
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় চরম হয়রানি ও অনিয়মের পাশাপাশি ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। কয়েক জন লন্ডন প্রবাসী ইতিধ্যে বিষয়টি নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন। তাদেরকে এনআইডি কার্ড না দিয়ে নানা অজুহাতে বিলম্ভ করছেন।
সাধারণ মানুষ এরকম জাতীয় পরিচয়পত্র-সংক্রান্ত কাজে গেলেই হতে হয় ভোগান্তির শিকার। নানা অজুহাতে ভুক্তভোগিদের দিনের পর দিন ঘুরানো হয়। টাকা ছাড়া নবীগঞ্জ অফিসে কোন কাজ হয় না। যে কাজ একদিনে করা যায় সেই কাজ এক মাসেও হয় না।
এতে দূর-দূরান্তের লোকজন চরম ভোগান্তির শিকার হন। জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন, হারানো বা স্থানান্তরের আবেদন মানেই টাকা।চাহিদা মত টাকা না দিলে হয়রানি হতে হয়।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বুলবুল আহম্মদ এবং অফিস সহকারীরে নিয়ে একটি সিন্ডিকেট করেছেন। তাদের মাধ্যমে ভুক্তভোগিদের কাছে থেকে টাকা আদায়ের এমন অভিযোগ উঠেছে।এরই মধ্যে নবীগঞ্জ নির্বাচন অফিসে ঘুষ নেওয়ার ঘটনা এখন সবার মুখে আলোচনা।এমনকি পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে সেবা প্রত্যাশীদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের অভিযোগও রয়েছে নির্বাচন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এতে ভোগান্তিতে এ উপজেলার হাজারও সেবাপ্রত্যাশী। ভূক্তভোগীরা বিষয়টিকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
ঘুষ নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিষয়টি স্বীকারও করেন মনির নামের ওই কর্মচারী।
তিনি বলেন, আমাদের নির্বাচন কর্মকর্তা নিজেই অফিসের এসব কিছু নিয়ন্ত্রণ করেন আমরা কিছুই জানিনা। আপনারা নিউজ করবেন না, আমি তার সঙ্গে আলাপ করছি, আপনাদের চাহিদা কী বলেন।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের ক্যাটাগরি অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে উপজেলা নির্বাচন অফিস, জেলা নির্বাচন অফিস, বিভাগীয় নির্বাচন অফিস ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কার্যালয়ের দ্বারস্থ হতে হয় সেবা প্রত্যাশীকে। নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ বুলবুল আহম্মদ যোগদানের পরেই নবীগঞ্জ নির্বাচন অফিসে শুরু হয় নানা অনিয়ম, দুর্নীতি আর বেপরোয়া ঘুষ বাণিজ্য চলছে। ভোটার হস্তান্তর, এনআইডির নাম সংশোধন ও বয়স সংশোধনে ঘুষের জন্য সাধারণ নাগরিকদের করা হয় ব্যাপক হয়রানি। গ্রাম পুলিশ, কম্পিউটার অপারেটর, নামধারী সংবাদ কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণির লোকজনের দালালি শুরু হয় গুরুত্বপূর্ণ এ অফিসটিকে কেন্দ্র করে।
এ অফিসে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের জন্য আসা আমেরিকা প্রবাসী জাবের (ছন্মনাম) বলেন, আমার নামের বানান সংশোধনের জন্য নির্বাচন অফিসের লোকজন আমার কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা দাবি করে। বিষয়টি নিয়ে তাদের সঙ্গে আমার অনেক বাকবিত-া হয়। পরে ৫ হাজার টাকা দিয়ে তা সংশোধন করেছি। অফিসে আমার আরও কাজ আটক আছে নাম প্রকাশ করলে আমার সর্বনাশ হবে।
লন্ডন প্রবাসী আলিমউদ্দিন(ছন্মনাম) বলেন, নির্বাচন অফিসে নিজেরা সরাসরি না পারলে দালালদের মাধ্যমে টাকা দাবি করে। অনিয়ম, ঘুষ, মানুষের ভোগান্তি করা এ অফিসের নিয়মিত ঘটনা। আমাদের এনআইডি কার্ড দিচ্ছেন না। তিনি নানা অজুহাতে কালক্ষেপন করছেন, আমরা বিষয়টি নির্বাহী অফিসার ও জেলা নির্বাচন অফিসাকে বিষয়টি অবগত করেছি। এখন আমাদের নাম বললেও আমাদের কাজ আটকে দেয়া হবে।
নিজ অফিসের নানামুখী অপকর্ম, অনিয়ম আর ঘুষ লেনদেনের বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ বুলবুল আহম্মদ বলেন, প্রতিদিন প্রবাসীরা ভোটার হচ্ছেন। এখানে কোন প্রবাসীকে হয়রানি করা হয়নি। এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। যারা জেলা নির্বাচন অফিসে গিয়েছিলেন তাদের সমস্যা সমাধান করেছি।
নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান শাহরিয়ার বলেন, এ ধরনের অভিযোগ কয়েকজন লন্ডন প্রবাসী আমার কাছে দিয়েছেন। আমি নির্বাচন অফিসার ও কর্মচারীদের সতর্ক করেছি। তিনি আমাকে বলেছেন যারা লন্ডন প্রবাসী বিট্রিশ নাগরিকত্ব নেওয়ার সময় বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন তারা দেশে এনআইডি কার্ড পাবেন না।
এ বিষয়ে জানতে হবিগঞ্জ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ছাদেকুল ইসলাম বলেন গতকাল মঙ্গলবার আমার কাছে নবীগঞ্জের তিনজন লন্ডন প্রবাসী এসেছিলেন, তাদের নাগরিকত্ব বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাচন অফিসকে বলেছি। উপজেলা নির্বাচন অফিসার নতুন এসেছেন কিছু অনিয়ম থাকলে তাকে সংশোধন হতে বলবো। তিনি বানিয়াচং উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্ব থাকায় নিয়মিত অফিস করতে পারেন না।