মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৭:০৭ পূর্বাহ্ন
মামলা না দেয়ায় থামছেনা মাটি কাটা, নেতৃত্বে বিশেষ মাটি কাটা বাহিনী !
এম,এ আহমদ আজাদ,সিলেট বিভাগীয় প্রধান(বাংলাদেশ) :
হবিগঞ্জের হাওরাঞ্চলে পরিবেশ আইন অমান্য করে অবৈধভাবে কৃষি জমি থেকে মাটি কাটা থামছেনা। একটি সঙ্গবদ্ধ চক্র বৃহৎ পরিসরে মাটি কাটছে উপজেলা শতাধিকস্থান থেকে। দায়সারাভাবে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা না করে নিয়মিত মামলা দায়ের করা হলেই বন্ধ হবে অবৈধ মাটি কাটা এমন দাবী সচেতন মহলের দাবি।
অবৈধভাবে ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রি করে আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছে উপজেলা মাটি কাটা ঠিকাদার কমিটির নেতৃবৃন্দ। মাটি বাহিনী নামে পরিচিত এই সমিতির সদস্যরা অবৈধভাবে অর্জন করেছেন লাখ লাখ টাকা। মাটি কাটা অব্যাহত রাখতে ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন নেতার কাছে দৌড়ঝাঁপ ও ধরণা দিচ্ছে মাটি কাটার প্রধান নজরুল বাহিনী।
অপরদিকে, অবৈধ মাটি কাটার সংবাদ প্রকাশ বন্ধে সাংবাদিকদের ম্যানেজ করার পায়তারায় লিপ্ত এ বাহিনী। তবে এতে সায় না দেয়ায় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছে নজরুল বাহিনীর লোকজন।
আজ সোমবার নবীগঞ্জ শহরের বাংলা-টাউন এলাকায় নেতৃত্বে গড়ে ওঠা উপজেলা মাটি কাটা ঠিকাদার সমিতির সভা অনুষ্ঠিত হয়। আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর একটি গোয়েন্দা সংস্থার নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়- অনুষ্ঠিত সভায় অবৈধ মাটি কাটা অব্যাহত রাখতে ও প্রশাসনের অভিযান বন্ধ করতে জেলা-উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমিতির নেতৃবৃন্দরা দেখা করবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা যায়, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১২ এর ৬ ধারায়) অনুযায়ী, প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট টিলা ও পাহাড় নিধন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অন্যদিকে ১৯৮৯ সালের ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন (সংশোধিত ২০০১) অনুযায়ী, কৃষিজমির টপ সয়েল বা উপরিভাগের মাটি কেটে শ্রেণি পরিবর্তন করাও সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ রয়েছে। দুই আইনে শাস্তির বিধান একই রকম। এসব কাজে জড়িত ব্যক্তিদের দুই লাখ টাকার জরিমানা ও দুই বছরের কারাদ- দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। একই কাজ দ্বিতীয়বার করলে দায়ী ব্যক্তির ১০ লাখ টাকা জরিমানা ও ১০ বছরের কারাদ- হবে। এ ক্ষেত্রে এ কাজের সঙ্গে জড়িত জমি ও ইটভাটার মালিক ও ঠিকাদার উভয়ের জন্যই সমান শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়- পৌর এলাকার জয়নগর, গয়াহরি, কানাইপুর, ভবের বাজার, সদর ইউনিয়নের পশ্চিম তিমিরপুর, আউশকান্দি ইউনিয়নের মিনাজপুর সৈয়দপুর, পারকুল, কুর্শি ইউনিয়নের বাজকাশারা, সাদুল্লাপুর, এনাতাবাদ, হৈবতপুর, সুলতানপুর, রতনপুর, কুর্শি, দেবপাড়া ইউনিয়নের, কান্দিগাঁও, আইনগাঁও, রুস্তমপুর, বাউসা, ইউনিয়নের বাশডর, রিফাতপুর, ভরপুর, চানপুর, গজনাইপুর ইউনিয়নের সাতাইহাল, দেওপাড়া, কালিয়ারভাঙ্গা ইউনিয়নের মান্দারকান্দি, ইমামবাড়ি, পানিউমদা ইউনিয়নের ভরগাঁও, খাগাউড়া, ইনাতগঞ্জ,দীঘলবাক, করগাঁওসহ ১৩টি ইউনিয়নের একাধিক জায়গাসহ শতাধিক স্থান থেকে কৃষিজমিতে এক্সভেটর মেশিন বসিয়ে মাটি কেটে সরবরাহ হচ্ছে নিকটবর্তী ইটভাটায়।
কালিয়ার ভাঙ্গা ইউনিয়নের খলিল মিয়া বলেন, কৃষি জমির উর্বরতা নষ্ট করে কোটি কোটি টাকার মূল্যের অসংখ্য নিচু জায়গা এসব মাটি দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে। পরিবেশ আইন অনুযায়ী কৃষিজমি ও টিলার মাটি কাটা দ-নীয় অপরাধ হলেও এসব কাজে উপজেলা প্রশাসনের মদদ রয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে।
এ নিয়ে অভিযুক্ত নজরুল চৌধুরীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে অবৈধভাবে মাটি কাটার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন- আপনাদের সাথে আমরা বসতে চাই বসার সুযোগ দেন। কথা বলার একপর্যায়ে নিউজ করলে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলার হুমকি দেন তিনি।
তিনি আরও বলেন- মাটি কাটার বিষয়ে ডিসি অফিসে আবেদন করা হয়েছিল কিন্তু অনুমতি না দেয়া হয়নি। কৃষকরা তাগদা দেয়ার কারণেই আমরা মাটি কাটছি।
এ প্রসঙ্গে নবীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) শাহীন দেলোয়ার বলেন- যেখানে খবর পাচ্ছি সেখানে অভিযান করেছি, কিছু জায়গায় জরিমানাও করেছি। আমাদের অভিযান চলছে।