শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৪৯ পূর্বাহ্ন
ডা: রিয়াজুল জান্নাত মাসুম: তার মাইক্রোবাসে করে একই পরিবারের ৭-৮ জন ঢাকা থেকে মৌলভীবাজার ফেরার পথে হবিগঞ্জের রশিদপুরের কাছাকাছি ডাকাত দলের কবলে পড়েন। ডাকাতরা সবার মোবাইল, টাকা-পয়সা এবং গয়না ছিনিয়ে নেওয়ার পরেও ৫ জনকে কুপিয়ে আহত করে।
ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে যখন তাদেরকে ইমার্জেন্সিতে রিসিভ করি তখন দেখি কামাল উদ্দিন সহ ৩ জনের অবস্থা গুরুতর, এর মধ্যে আবার একজন খুবই খারাপ, শকে চলে যাচ্ছে, ব্লাড প্রেসার ৬০/৪০! কামাল উদ্দিনেরও বুকে এবং মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মারাত্মক জখম।
কিন্তু আকাশ থেকে পড়লাম যখন শুনলাম কামাল উদ্দিন এই আহত অবস্থায়ও নিজের কাটা মাথায় গামছা প্যাঁচিয়ে গাড়ির সব যাত্রীকে নিয়ে প্রায় ৫০ কিলোমিটার ড্রাইভ করে আমাদের সদর হাসপাতালে এসেছেন! তার বুকের হা হয়ে যাওয়া ক্ষত থেকে তখনো রক্ত ঝড়ছিলো!
কামাল সময়মত আসতে পেরেছিলেন বলেই শকে চলে যাওয়া সেই রোগিকে (যার অবস্থা এতই খারাপ ছিলো যে ক্যানুলা করতে গিয়ে ৪ টা ক্যানুলা নষ্ট হওয়ার পর পঞ্চম বারে আমরা সফল হই) বেশি দেরি হওয়ার আগেই ফ্লুইড দিয়ে আল্লাহর রহমতে স্টেবল করা গিয়েছিলো।
সকালে আমি ডিউটি শেষ করে আসার সময় কামাল উদ্দিন সহ সবাই স্টেবল ছিলেন। আল্লাহর রহমতে সবাই সুস্থ হয়ে যাবেন আশা করা যায়। কিন্তু এমন কঠিন সময়ে কামাল উদ্দিন যে দায়িত্ব-জ্ঞান ও সাহসের পরিচয় দিয়েছেন সেটা আমি এতদিন শুধু সিনেমাতেই দেখে আসছি। কামাল উদ্দিন আমার রিয়েল লাইফ সুপারহিরো। আল্লাহ তাঁকে তার এই কাজের উত্তম প্রতিদান দান করুন।
আর যারা রাতে লং জার্নি করেন, বিশেষ করে প্রাইভেট গাড়িতে তারা খুব সাবধানে চলাফেরা করবেন। বিপদ কখনো বলে কয়ে আসেনা। আল্লাহ এসব অমানুষদের থেকে আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন।
ফেসবুক থেকে সংগ্রহীত
লেখক: সার্জন, হবিগঞ্জ সদর হাসপাতাল