শনিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৩ অপরাহ্ন
করাঙ্গীনিউজ: সভা-সমাবেশের অনুমতি ছাড়া সংলাপে কোনো বিশেষ সমাধান পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের উদ্যোক্তা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন।
বৃহস্পতিবার (০১ নভেম্বর) রাত পৌনে ১২টায় ৭ নম্বর বেইলি রোডের নিজ বাসায় এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান। এ সময় ফ্রন্টের অন্যান্য শরিক দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
ড. কামাল হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের সংলাপ ছিলো। আমরা তিন ঘণ্টা সেখানে ছিলাম। আমরা অনেকগুলো কথা বলেছি। নেতৃবৃন্দ সবার অভিযোগ ও বক্তব্য তুলে ধরেছেন।সবার কথা শোনার পর প্রধানমন্ত্রী বেশ লম্বা বক্তৃতা দিলেন। তবে ওখানে কোনো বিশেষ সমাধান আমরা পাইনি।
‘শুধু একটা ব্যাপার ইতিবাচক। সভা-সমাবেশের ব্যাপারে উনি (প্রধানমন্ত্রী) যেটা বললেন একটা ভালো কথা বলেছেন।’ পরে গণফোরাম নেতা সুব্রত চৌধুরী সংলাপ নিয়ে লিখিত সারসংক্ষেপ পাঠ করেন।
দলটির নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, প্রথমে আমাদের নেতা ড. কামাল হোসেন প্রধানমন্ত্রীর সামনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন। এরপর বিএনপির মহাসচিব সাত দফা দাবি তুলে ধরেছেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যান্য নেতারাও আমাদের পক্ষ থেকে বক্তব্য তুলে ধরেন।
‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ঢাকাসহ সারাদেশে সভা-সমাবেশেসহ রাজনৈতিক কর্মসূচির ওপর কোনো বাধা থাকবে না। রাজনৈতিক দলসমূহ যে যেখানে সভা করতে চাইবে তাদের কোনো বাধা দেবে না। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য তিনি ইতোমধ্যেই নির্দেশনা দিয়েছেন।’
তিনি বলেন, রাজনৈতিক মামলার সম্পর্কে বলেছেন (প্রধানমন্ত্রী), রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের মামলা ও গায়েবি মামলার তালিকা আপনারা দেন। আমি অবশ্যই বিবেচনা করবো যাতে হয়রানি না হয়।
‘উত্থাপিত দাবি-দাওয়া নিয়ে ভবিষ্যতে আলোচনা অব্যাহত থাকবে বলে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন’ বলেও উল্লেখ করেন সুব্রত চৌধুরী।
খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কি-না বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) সুনির্দিষ্টভাবে কোনো কিছু বলেননি। তিনি বলেছেন, এই বিষয়গুলো নিয়ে ভবিষ্যতে আরও আলোচনা হতে পারে।
বিএনপি কী এতে আশাবাদী? প্রশ্ন করা হলে ফখরুল বলেন, আমি তো বলেছি যে ভাই আমি এ বিষয়ে খুব সন্তুষ্ট নই, এটা আগেই বলেছি।
সংলাপে সমাধানের আগে নির্বাচনে তফসিল ঘোষণা হবে কি-না প্রশ্ন করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা তফসিলের বিষয়ে বলেছি। উনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, তফসিল দেওয়ার এখতিয়ার তাদের নেই। সেটা নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।
এক্ষেত্রে ঐক্যফ্রন্টের কর্মসূচি কী হবে? এর জবাবে ফখরুল বলেন, আমাদের ঐক্যফ্রন্টের যে কর্মসূচি ছিল, সে কর্মসূচি চলবে।
আরও প্রশ্ন করলে মির্জা ফখরুল ড. কামালের দিকে দেখিয়ে দিয়ে বলেন, সামগ্রিকভাবে কথা বলবেন উনি।
সংলাপ থেকে আপনারা কী পেলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সব সময় কী সব কিছু অর্জন হয় নাকি! এ পর্যায়ে জেএসডির নেতা আ স ম আব্দুর রব বলেন, একদিনে সব পাওয়া যায় না।
তখন ড. কামাল হোসেন বলেন, আমরা সংলাপের সুযোগ পেয়েছি। আমরা আমাদের কথা বলে এসেছি উনাকে (প্রধানমন্ত্রী)। উনি জানতে পেরেছেন। উনি উনার কথাগুলো বলেছেন, উনার মনের কথা আমরা কিছুটা জানতে পেরেছি।
এরপর আ স ম আব্দুর রব বলেন, স্যারের কথাগুলো শুনেছেন। আমরা ৭ দফা কর্মসূচি দিয়েছি। মানা না মানার দায়িত্ব হলো সরকারের। আমাদের কর্মসূচি আমরা দিয়েছি এ নিয়ে আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
এই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, গণফোরামের জগলুল হায়দার আফ্রিকসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত সাড়ে ১০টার কিছু পর পর্যন্ত সাড়ে তিন ঘণ্টা চলে এই সংলাপ। সংলাপে ড. কামাল হোসেন ঐক্যফ্রন্টের ২০ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।
সংসদ ভেঙে দেওয়া, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একাদশ সংসদ নির্বাচনের দাবি তোলা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গত ২৮ অক্টোবর সংলাপের আহ্বান জানান ড. কামাল হোসেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গণভবনে বৃহস্পতিবার এ সংলাপ হলো।