• Youtube
  • English Version
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০২:১৬ অপরাহ্ন

করাঙ্গী নিউজ
স্বাগতম করাঙ্গী নিউজ নিউজপোর্টালে। ১৫ বছর ধরে সফলতার সাথে নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন করে আসছে করাঙ্গী নিউজ। দেশ বিদেশের সব খবর পেতে সাথে থাকুন আমাদের। বিজ্ঞাপন দেয়ার জন‌্য যোগাযোগ করুন ০১৮৫৫৫০৭২৩৪ নাম্বারে।

রেমায় শকুনদের জন্য দেয়া হলো জবাই করা গরু

  • সংবাদ প্রকাশের সময়: রবিবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০

আবুল কালাম আজাদ. চুনারুঘাট (হবগিঞ্জ):
আজ শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিশ্ব শকুন দিবস। তীক্ষ্ম দৃষ্টির অধিকারী শিকারী এই পাখিটি মৃত জীবজন্তুর মাংস খেয়ে পরিবেশ রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সাধারণত লোকচক্ষুর আড়ালে বট, পাকুড়, অশ্বত্থ, ডুমুর প্রভৃতি বিশালাকার গাছে এরা বাসা বাঁধে। গুহায়, গাছের কোটরে বা পর্বতের চূড়ায় ১-৩টি ডিম পাড়ে। ‘প্রকৃতির পরিচ্ছন্নতাকর্মী’ হিসাবে পরিচিত এই শকুন বর্তমানে পৃথিবীর মহাবিপন্ন প্রাণীর তালিকায় রয়েছে। পৃথিবীতে সর্বমোট ২৩ প্রজাতির শকুন রয়েছে। বাংলাদেশে আগে ছিল ৬ প্রজাতির শকুন। কিন্তু এখন কেবল ‘বাংলা শকুন’ই কোনমতে টিকে আছে বলে জানা গেছে। দেশীয় প্রজাতির এই শকুনের ইংরেজী নাম White-rumped vulture। বিশ্বে প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে শনিবার শকুন দিবস পালন করা হয়।

এক সময়ে গরু, মহিষসহ গবাধি পশুর মৃতদেহ যেখানে ফেলা হতো সেখানেই দলে দলে হাজির হতো শকুন। তারা দ্রুত মৃত পশুর মাংস খেয়ে সাবাড় করে দিত। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে এভাবেই শকুন প্রকৃতি থেকে মৃতদেহ অপসারণের কাজ করে রোগব্যাধী মুক্ত পরিবেশ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছিল। গবাধি পশুর মৃতদেহের রোগ জীবানু এমনিতে সহজে মরে না। এগুলো সংক্রমিত হয়। কিন্তু মৃতদেহের রোগজীবাণু শকুনের পেটে দ্রুত ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। ফলে রোগ বিস্তার রোধ হয়। কিন্তু এখন আর আগের মতো শকুন দেখা যায় না। ফলে পরিবেশও আর আগের মতো প্রাকৃতিকভাবে পরিষ্কার হয় না, ফলে ছড়াচ্ছে রোগব্যাধি।

সারা বিশ্বে সর্বমোট ১৮ প্রজাতির শকুন দেখা যেত, এর মধ্যে পশ্চিম গোলার্ধে ৭ প্রজাতির এবং পূর্ব গোলার্ধে (ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়া) ১১ প্রজাতির শকুন। দক্ষিণ এশিয়ার দেশ বাংলাদেশে ৬ প্রজাতির শকুনের দেখা মিলতো। এর মধ্যে ৪ প্রজাতি দেশীয় আর ২ প্রজাতি পরিযায়ী। শকুন বা বাংলা শকুন ছাড়াও ছিল রাজ শকুন, গ্রীফন শকুন বা ইউরেশীয় শকুন-হিমালয়ী শকুন, সরুঠোঁট শকুন, কালা শকুন ও ধলা শকুন। বাংলা শকুনের বৈজ্ঞানিক নাম জেপস বেঙ্গালেনসিস। গলা লম্বা, লোমহীন মাথা ও গলা গাঢ় ধূসর। পশ্চােদশের পালক সাদা। পা কালো। ডানা, পিঠ ও লেজ কালচে বাদামি। একই বাসা ঠিকঠাক করে বছরের পর বছর এরা ব্যবহার করে। সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত শকুনের প্রজননকাল। ৪৫-৫০ দিনে ডিম ফোটে।

সারা পৃথিবী জুড়ে শকুনের অবস্থা খুবই নাজুক। গবেষকরা জানিয়েছেন পৃথিবীতে শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ শকুনই এখন আর নেই। এজন্যেই পরিবেশের ভারসাম্যহীনতার পাশাপাশি অ্যানথ্রাক্স, যক্ষ্মা, ক্যান্সার, পানি বাহিত রোগসহ বিভিন্ন রোগ ব্যাধি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার (আইইউসিএন) এর ‘ক্রিটিক্যালি এন্ডেনজার্ড’ প্রাণীর তালিকায় রয়েছে শকুনের সব ক’টি প্রজাতি। বিগত ৩ দশকে বাংলাদেশে শতকরা প্রায় ৯৯ ভাগ শকুন মারা গেছে। অবশিষ্ট এক ভাগও এখন মৃত্যুমুখে পতিত হচ্ছে। গবেষকরা শকুন কমে যাওয়ার কারণ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন গবাদি পশুতে ডাইক্লোফেনাক ও কেটোপ্রোফেন ওষুধের ব্যবহার। এ ওষুধ প্রয়োগ করা কোন প্রাণীর মৃতদেহ শকুনের খাদ্য তালিকায় চলে এলে কিডনি নষ্ট হয়ে শকুনের মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী।

আইইউসিএন-এর সহযোগী সংগঠন বার্ডসলিস্ট অর্গানাইজেশন উল্লেখ করেছে, কীটনাশক ও সারের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে পানির দূষণ, খাদ্য সঙ্কট, কবিরাজি ওষুধ তৈরিতে শকুনের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যবহার, বিমান-ট্রেনের সাথে সংঘর্ষ, ঘুড়ির সুতার সাথে জড়িয়ে পড়া, ইউরিক এসিডের প্রভাবে বিভিন্ন রোগ, বাসস্থানের অভাব প্রভৃতি কারণে শকুন বিলুপ্ত হচ্ছে। ভারত, পাকিস্তান, নেপালে বেশ আগেই ডাইক্লোফেনাক নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাংলাদেশেও সম্প্রতিক সময়ে ডাইক্লোফেনাক নিষিদ্ধ করা হলেও কেটোপ্রোফেনের ব্যবহার মারাত্মক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। পর্যাপ্ত তদারকি না থাকায় এসব ওষুধের উত্পাদন ও মাঠ পর্যায়ে এসবের ব্যবহার প্রায় আগের মতোই রয়ে গেছে। শকুন কমে যাওয়ার আরো একটি বড় কারণ প্রাণীটির বাসস্থানের অভাব। প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা প্রাচীন বৃহদাকার বৃক্ষরাজিতে বসতি গড়তো শকুন। শিমুল, ছাতিম, দেবদারুর মত প্রাচীন বৃহদাকার গাছগুলো এখন আর চোখে পড়ে না।

বাংলাদেশে বাংলা শকুন এখন বিরল প্রজাতির প্রাণীর অন্তর্ভুক্ত। বর্তমানে যে ক’টি শকুন আছে তার বেশির ভাগই রয়েছে সুন্দরবন এলাকায়।, বাংলাদেশে ৭ প্রজাতির শকুনের মধ্যে কোনমতে টিকে আছে বাংলা শকুন। সর্বশেষ হিসেব মতে দেশে শকুনের সংখ্যা ২৬৮। সরকার হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের রেমা-কালেঙ্গা ও সুন্দরবনকে সেভ জুন ঘোষণা করায় এবং ‘ডাইক্লোফেনাক’ ও ‘কিটোপ্রোফেন’ এর কিছুটা নিয়ন্ত্রণ হওয়ায় গত চার বছরে প্রায় ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আর.এস.এম. মনিরুল ইসলাম দেশে ৯৯ শতাংশ শকুন বিলুপ্তের কথা স্বীকার করে বলেন, চুনারুঘাটে রেমা কালেঙ্গায় প্রায় শতাধিক শকুন রয়েছে। এখানে বেশ কয়েকটি শকুনের বাসা এবং গত এক বছরে ১৬টি বাচ্চাও ফুটিয়েছে। সেখানে ফিডিং ষ্টেশন শকুনের খাবার হিসাবে যাচাই বাচাই করে মৃত গরু সরবরাহ করা হচ্ছে।

আজ রেমায় শুকুনের আভাসস্থলে আইইউসিএন এর পক্ষ থেকে গরু জবাই করে শকুনদের খাবার দেওয়া হয়েছে। মজার বিষয় হলো বছরে এ দিনটিতেই শকুনরা খাবার পায়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো সংবাদ