• Youtube
  • English Version
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৫২ অপরাহ্ন

করাঙ্গী নিউজ
স্বাগতম করাঙ্গী নিউজ নিউজপোর্টালে। ১৫ বছর ধরে সফলতার সাথে নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন করে আসছে করাঙ্গী নিউজ। দেশ বিদেশের সব খবর পেতে সাথে থাকুন আমাদের। বিজ্ঞাপন দেয়ার জন‌্য যোগাযোগ করুন ০১৮৫৫৫০৭২৩৪ নাম্বারে।

অপারেশন চুনারুঘাটের শানখলা

  • সংবাদ প্রকাশের সময়: শুক্রবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০

এম এ মজিদ: যে কৃষি পণ্য তৈরী করতে কয়েক কোটি টাকা ব্যয় করার কথা সেই কৃষি পণ্য তৈরী করা হচ্ছে চুনারুঘাটের শানখলা গ্রামে। ফলাফল শূণ্য জেনেও শুধু টাকার স্বপ্নে বিভোর এক দোকানদার নকল এসব পণ্য তৈরী করে দেদারছে বিক্রি করছে কৃষকদের কাছে। এলাকায় ভদ্র ও নম্র হিসাবে পরিচিত শানখলা গ্রামের জামাল মিয়ার দোকান, বাড়ি ও গোডাউনে মিলেছে নকল কৃষি পণ্য তৈরীর সরঞ্জামাদী। বাড়ির আনাচে কানাচে ড্রামে ড্রামে পড়ে আছে নকল ক্যামিকেল, খালি বোতল। শানখলা বাজারের দোকানে মিলেছে প্রায় সকল কৃষি পণ্যই মেয়াদ উত্তীর্ণ, মেয়াদ উত্তীর্ণ ট্রেড লাইসেন্স। তথ্য ছিল দিনভর জামাল মিয়ার গোডাউন শানখলা মাসুদ মিয়া মডেল সুন্নিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা মার্কেটে নকল ডান এগ্রোর ডান ফুরানসহ বিভিন্ন কৃষি পণ্যে লেভেল লাগানো হয়েছে। অভিযানের শুরু থেকেই গোডাউন বন্ধ। কোনোভাবেই গোডাউন খুলা যাচ্ছিল না। বিষয়টি অভিযানে অংশ গ্রহণকারী সকলকেই ভাবিয়ে তুলে।

অভিযানের সূত্রপাতঃ প্রায় এক সপ্তাহ আগে ফিরোজপুর জেলার মদন উপজেলার একজন সংবাদকর্মীর ফোন আসে এই প্রতিবেদকের কাছে- হবিগঞ্জের অন্তত ৩টি স্থানে নকল কৃষি পণ্য তৈরী করা হচ্ছে। এসব কৃষি পণ্য আসল পণ্য হিসাবে বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। কৃষকরা তা ক্রয় করে প্রয়োগ করছেন জমিতে কিন্তু কোনো ফল পাচ্ছেন না। একদিকে কৃষির মারাত্বক ক্ষতি হচ্ছে অন্যদিকে পরিবেশও নষ্ট হচ্ছে। এরপরই ঢাকার এক আইনজীবী বন্ধুর ফোন আসে। তারা নকল পণ্যের বিরুদ্ধে কাজ করছেন। কিছু সহযোগিতা লাগবে। তারা তথ্য দিলেন হবিগঞ্জের বগলা বাজারের এক কীটনাশক ব্যবসায়ী নকল বিভিন্ন কৃষি পণ্য তৈরী করে বিক্রি করছেন। যেখানে ১০ গ্রামের এক প্যাকেট ঔষধের দাম ১৫০ টাকা অর্থাৎ এক কেজির দাম ১৫ হাজার টাকা, সেখানে নকল ১০ গ্রাম ওজনের এক প্যাকেট ঔষধ তৈরীতে খরচ হচ্ছে সর্বোচ্চ ৫ টাকা অর্থাৎ প্রতি কেজি তৈরীতে খরচ হচ্ছে সর্বোচ্চ প্রতি কেজি ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা।

প্রতি কেজিতে অসাধু ব্যবসায়ীর লাভ ১৪ হাজার ৫শ টাকা! হবিগঞ্জের বগলা বাজারের যে ব্যবসায়ীর নাম ঠিকানা দেয়া হল, খোজ খবর নিতে গিয়ে জানা গেল, ওই পরিবারটি হবিগঞ্জের পরিচিত মুখ, পরিবারের একজন সদস্য দেশ বিদেশ ভ্রমণকারী ব্যবসায়ী সংগঠনের বড় নেতা। ওই দোকান থেকে নকল পণ্য কেনা হল, বুঝে ফেলায় তারা এক সময় তা বিক্রি বন্ধ করে দেয়। নকল কারখানা আবিষ্কার করা গেল না। কারখানা আবিষ্কার করাটা একেবারেই সহজ নয়। শায়েস্তাগঞ্জের একজন ব্যবসায়ীর নামও উঠে আসে নকল কৃষি পণ্য তৈরীর তালিকায়। ওই ব্যবসায়ী শায়েস্তাগঞ্জ ও হবিগঞ্জ শহরে খুবই পরিচিত, ভদ্রবেশী ব্যবসায়ী। যাকে গত বছর নকল কৃষি পণ্য তৈরীর অভিযোগে পুলিশ আটকও করেছিল। হবিগঞ্জ ও শায়েস্তাগঞ্জের নকল পূণ্য তৈরী কারক ব্যবসায়ীরা পোড় খাওয়া সুচতুর হওয়ায় অল্প সময়ের মধ্যে নকল কারখানা আবিষ্কার করা যায়নি। বিষয়গুলো প্রকৃত কোম্পানীগুলোর গোয়েন্দা নজরদারীতে রয়েছে।

অপারেশন শানখলাঃ শানখলা বাজারে নকল কৃষি পণ্য তৈরীর বিষয়টি হবিগঞ্জের একটি গোয়েন্দা সংস্থাকে অবগত করা হল। তারা বিষয়টিতে পাত্তা দেয়নি। মনে হল এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা তাদের। ২ সেপ্টেম্বর বুধবার দুপুর ২টার দিকে বিষয়টি জানানো হল চুনারুঘাট থানার ওসি শেখ নাজমুল ইসলামকে। তিনি তাৎক্ষনিক অপারেশনে রাজী হলেন। নিজে ব্যস্ত থাকায় এসআই আজহারসহ তার টিমকে এ কাজে নিযুক্ত করলেন। তথ্য উপাত্ত জেনে নিশ্চিত হয়ে ওসি শেখ নাজমুল ইসলাম জানালেন- এভাবে হবে না, মোবাইল কোর্ট সাথে নিতে হবে। যোগাযোগ করলেন চুনারুঘাট উপজেলার এসিল্যান্ড ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মিলটন চন্দ্র গোপের সাথে। মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় রাজী হলেন তিনি। যেহেতু বিষয়গুলো কৃষির সাথে সম্পৃক্ত, একাজে সংযুক্ত করা হল চুনারুঘাটের কৃষি অফিসার মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন সরকারকে। বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে শায়েস্তাগঞ্জ নতুন ব্রিজ থেকে আমাদের গাড়িগুলো ছুটল শানখলার দিকে। প্রথমেই জামাল মিয়ার দোকান ব্লক রেইড, তিন চার মিনিটের মাথায় জামাল মিয়ার গোডাউন ও বাড়িতে অভিযান। জামাল মিয়ার ভাই জসিম উদ্দিনকে দোকানে আটক করা হল। অভিযান আচ করতে পেরে জামাল মিয়া আগেই পালিয়ে যায়। বাড়িতে পাওয়া গেল কীটনাশক ও শতশত খালি বোতল। দোকানে পাওয়া গেল মেয়াদ উত্তীর্ণ কীটনাশকসহ বিভিন্ন পণ্য। ছোট ভাই জসিম উদ্দিনকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার ঘোষনা দিলে স্থানীয় ইউপি মেম্বার আব্দুল হান্নানের মাধ্যমে মোবাইল কোর্টের সামনে আসে জামাল মিয়া। সন্ধা তখন সাড়ে ৭টা। তারপরও গোডাউন খুলতে রাজী হয়নি সে। অবশেষে তালা ভেঙ্গে গোডাউনে প্রবেশ করা হয়। সেখানে পাওয়া যায় সান এগ্রোর জেট ফুরান, বন্যা এগ্রোর বন্যা বোরাক্সসহ বিভিন্ন পণ্যের শতশত খালি মোড়ক, মোড়কগুলোতে ইলেক্ট্রিক আঠা লাগানোর মেশিন, কৃষি পণ্য তৈরী করার বস্তা বস্তা পাওডার, নিষিদ্ধ চিকন দানা সারের বস্তা, খালি বস্তা ইত্যাদি। যে নিষিদ্ধ সার উদ্ধার করা হয়েছে সেগুলো মাটির উর্বরতা কমিয়ে এক সময় মাটির কার্যকারীতা ধ্বংস করে দেয় বলে জানালেন কৃষি অফিসার জামাল উদ্দিন সরকার।

জিজ্ঞাসাবাদে জামাল স্বীকার করে তার অপরাধের কথা। স্থানীয় কৃষক সারাজ মিয়া জানালেন তিনি ২ বস্তা চিকন দানা সার নিয়েছেন জামাল মিয়ার দোকান থেকে, এবার তিনি সারের টাকা ফেরত চাইবেন। নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মিলটন চন্দ্র পাল গুদাম ঘরের সমস্ত মালামাল জব্দ করার নির্দেশ দেন। একই সাথে জামাল মিয়াকে ৩ মাসের জেল, অনাদায়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। রাত সাড়ে ৮টায় অভিযানের সমাপ্তি হয়। জানা যায় হবিগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় নকল কৃষি পণ্য তৈরী হচ্ছে। কোম্পানী গুলোর মোড়ক বানিয়ে তাতে নিম্ন মানের পাওডার ও ক্যামিকেল মিশিয়ে বাজারে দেদারছে বিক্রি হচ্ছে। এসব কৃষি পণ্য ব্যবহারে কার্যত কৃষকরা কোনো ফল পাচ্ছেন না। ক্ষতি হচ্ছে কৃষি, ক্ষতি হচ্ছে কৃষক, ক্ষতি হচ্ছে পুরো বাংলাদেশ। এমন একটি অপরাধমূলক কাজে কোনো ধরনের ভ্রুক্ষেপ নেই অসাধু ব্যবসায়ীদের।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো সংবাদ