শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৩৭ অপরাহ্ন
বানিয়াচং (হবিগঞ্জ)প্রতিনিধি: হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে আওয়ামীলীগ নেতার নেতৃত্বে প্রভাবশালী একটি বালুখেকো চক্র বছরের পর বছর বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী জলাশয়ে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও বিক্রয় করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
অভিযোগ পেয়ে মাঝেমধ্যে মেশিন জব্দ করলেও ওই চক্রটির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা না নেয়ায় অবৈধ উপায়ে বালু উত্তোলন ও বিক্রয় অব্যাহত রেখেছে। এলাকাবাসী বালুখেকো চক্রকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থার দাবীতে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, উপজেলা
সদরের যাত্রাপাশা গ্রামের আব্দুল মালেক’র ছেলে উপজেলা আওয়ামীলীগের ত্রাণ ও দুর্যোগ
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক নজরুল ইসলামেরর নেতৃত্বে
প্রতিবছর বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী জলাশয়ে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও বিক্রয় করে আসছে।
সম্প্রতি হবিগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খান ঠাকুরাইন দিঘীর পশ্চিমপাড়ের রাস্তার জন্য ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেন। ওই রাস্তায় মাটি ভরাটের কথা বলে গত একমাস পূর্বে ঠাকুরাইন দিঘী নামক সরকারী জলাশয়ে ওই বালুখেকো চক্র ড্রেজার মেশিন বসিয়ে রাস্তায় মাটি ভরাট করে।
মাত্র এক সপ্তাহে রাস্তা ভরাট করা সম্ভব হলেও বালু উত্তোলন অব্যাহত রেখে বিভিন্ন লোকজনের পুকুর ভরাট করে ভিটা নির্মাণসহ বাড়ী-ঘরে বালু সরবরাহ করে। এছাড়া ট্রলিযোগে দুরদুরান্তে বালু সাপ্লাই করা হয়। এভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নিকটবর্তী কেউ কেউ তাদের বসতবাড়ীতে ভূমিধ্বসের আশংকার কথা প্রকাশ করে বালু উত্তোলন বন্ধের অনুরোধ করলে বালুখেকোচক্রের তাদেরকে ভয় দেখিয়ে বলেন, এমপি সাহেবের নির্দেশে বালু তোলা হচ্ছে। যে আপত্তি করবে তাকে মামলা দিয়ে জেলের ভাত খাওয়াবো। ইউএনও,
এসিল্যান্ড কারো কাছে গিয়ে লাভ হবেনা সাংবাদিকরাও নিউজ করবেনা। সবাইকে ম্যানেজ করেই বালু উঠানো হচ্ছে। এলাকাবাসী আরও জানান, বালুখেকো চক্রটি ঠাকুরাইন দিঘীর পাশাপাশি ছিলাপাঞ্জা এলাকায় আরেকটি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে সমানতালে বালু উত্তোলন করছে।
এলাকাবাসীর কাছ থেকে এসব তথ্য পেয়ে শুক্রবার (৩১ জানুয়ারী) উপজেলা নির্বাহী অফিসার মামুন খন্দকারকে অবগত করলে তিনি ৫/৬নং ইউনিয়ন ভূমি অফিসের
তহশীলদার মুজিবুর রহমানকে পাঠিয়ে ঠাকুরাইন দিঘীর ড্রেজার মেশিনটি জব্দ করিয়েনিয়ে আসেন। এসময় ভূমিখেকোচক্র মেশিন জব্দের কাজে তহশীলদারকে বিভিন্নভাবে বাধা দেয়। কিন্তু সাংবাদিক ও জনতার সহযোগিতায় তহশীলদার মেশিন জব্দ করে নিয়ে আসতে সক্ষম হন।
ঠাকুরাইন দিঘীর মেশিনটি জব্দের পর ছিলাপাঞ্জা এলাকার ড্রেজার মেশিনটি জব্দ করার কথা তহশীলদার সাংবাদিক ও উপস্থিত জনসাধারণের সম্মূখে প্রকাশ করলেও পরবর্তীতে না করায় জনসাধারণের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
এব্যাপারে রাতে এ রিপোর্ট লেখাকালীন তহশীলদার মুজিবুর রহমানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ছিলাপাঞ্জা এলাকার মেশিনটি দিয়ে বেসরকারী জায়গা থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। কিন্তু যেহেতু ড্রেজার মেশিন দিয়ে সরকারী এবং
বেসরকারী কোন জায়গা থেকে বালু উত্তোলনের ব্যাপারে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে সেহেতু বালু উত্তোলন অব্যাহত রাখলে ওই মেশিনও জব্দ করে নিয়ে আসার নির্দেশ ইউএনও এবং এসিল্যান্ড স্যার আমাকে দিয়েছেন।
এ রিপোর্ট লেখার পূর্বেও বালু উত্তোলন অব্যাহত আছে বলে সরেজমিন দেখে আসার কথা জানালে তিনি শনিবার (০১ ফেব্রুয়ারী) সকালে গিয়ে ড্রেজার মেশিনটি জব্দ করে নিয়ে আসবেন বলে জানান।