• Youtube
  • English Version
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০২:১৯ পূর্বাহ্ন

করাঙ্গী নিউজ
স্বাগতম করাঙ্গী নিউজ নিউজপোর্টালে। ১৫ বছর ধরে সফলতার সাথে নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন করে আসছে করাঙ্গী নিউজ। দেশ বিদেশের সব খবর পেতে সাথে থাকুন আমাদের। বিজ্ঞাপন দেয়ার জন‌্য যোগাযোগ করুন ০১৮৫৫৫০৭২৩৪ নাম্বারে।

হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে অজ্ঞাত রোগীর চিকিৎসা বিভ্রাট

  • সংবাদ প্রকাশের সময়: বুধবার, ৮ জানুয়ারী, ২০২০

শাহ ফখরুজ্জামান:
বুধবার সন্ধ্যা। হবিগঞ্জ শহরের আমীর চান কমপ্লেক্সে চলছিল রোটারী ক্লাব অব হবিগঞ্জ সেন্ট্রালের সাপ্তাহিক মিটিং। মিটিং শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পর একটি অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন আসে। অপর প্রান্তের ব্যাক্তি আমাকে বলে হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসাপাতালের দ্বিতীয় তলায় ট্রেন থেকে পড়ে গুরুতর আহত এক যুবকের অবস্থা অত্যন্ত করুণ। প্রচুর রক্তকরণ হচ্ছে। হাসপাতাল থেকে রোগীকে রেফার করা হলেও নিয়ে যাওয়ার কেউ নেই।

আমি যেহেতু হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সাথে জড়িত আছি, কিছু করা যাবে কি না? আমি তাৎক্ষণিকভাবে কি করা যায় দেখছি বলে ফোন কেটে দেই। পরে ফোন করি হাসপাতালের সমাজ সেবা কর্মকর্তা জাহানারা বেগমকে।

তিনি জানান, দুপুর আড়াইটার পর তার অফিসের কার্যক্রম বন্ধ থাকে। তবে আমি যদি কাগজপত্র ঠিক করে ব্যবস্থা করে দেই তাহলে পরে অর্থের ব্যবস্থা করে দিবেন। আমি বিষয়টি সাথে সাথে যে ব্যাক্তি আমাকে ফোন করেছিল তাকে জানাই এবং কাগজপত্র তৈরি করতে বলি। আমি তাকে হাসপাতালে দ্রুত আসতেছি বলেই লাইন কেটে দেই।
পরে আবার চিন্তা করি কাগজপত্রে চিকিৎসকের দস্তখত নেয়া আর তৈরি করা অনেক সময় সাপেক্ষ। পরে আমি আমার ক্লাবের মিটিং এ ওই দিন সভাপতিত্ব করা সাবেক প্রেসিডেন্ট হারুনুর রশীদ চৌধুরীকে বিষয়টি অবগত করি। তিনি ক্লাবে আমার বক্তব্য উপস্থাপনের সুযোগ দিলে আমি বিষয়টি উপস্থাপন করি।

আমার ক্লাবের সদস্যরা অজ্ঞাত ওই রোগীকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজে প্রেরণের জন্য এ্যাম্বুলেন্স এর ব্যবস্থা করার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে নগদ অর্থ আমার হাতে তুলে দেন। আমি মিটিং শেষ না করেই দৌড়াই হাসপাতালে।

হাসপাতালে যাওয়ার পর দেখতে পাই সাংবাদিক এ কে কাউসার সেখানে উপস্থিত আছে। আরও সাংবাদিক ও পরিচিত মুখ পেয়ে যাই সেখানে। হাসপাতালে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি অজ্ঞাত ওই রোগী মাধবপুর উপজেলার মনতলা-হরষপুরের মধ্যখানে বুধবার সকাল ১০টার দিকে দুর্ঘটনায় পতিত হয়। আন্তঃনগর পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় লোকজন তাকে মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখান থেকে তাকে রেফার করা হয় হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে। দুপুর ১টার দিকে এক ব্যাক্তি ওই যুবককে হাসপাতালে রেখ যায়। যে লোকটি তাকে নিয়ে আসে তার নাম রেজিস্টারে লেখা হয় সোলায়মান। একটি মোবাইল নাম্বারও সেখানে লেখা হয়। পরে সেই নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়। ঝামেলা মনে করে হয়ত ভূল নাম আর নাম্বার দেয় ওই ব্যাক্তি।

হাসপাতালে গিয়ে দেখতে পাই রোগীর মাথায় গুরুতর জখম। সেলাই না করায় তখনও রক্ত ঝড়ছে। কর্তব্যরত নার্সদের সাথে আলাপ করে জানতে পারি চিকিৎসক মাথায় সেলাই না দেয়ায় স্টাফরা ভয়ে সেখানে সেলাই দেয়নি। হালকা একটি কম্বল ছাড়া নেই কোন শীতের কাপড়। এসময় আমি রোগীকে সিলেটে প্রেরণ করার ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বললে দেখা দেয় নতুন জটিলতা। কোন এ্যাম্বুলেন্স চালক রোগী নিতে রাজী হয় না।

এর কারন হিসাবে তারা জানায়, রোগীর সাথে কোন লোক না থাকলে ওসমানীতে ভর্তি করা যায় না। ফলে রোগীকে নিয়ে বিপদে পড়তে হয়। আবার রাস্তায় মৃত্যু হলে ঝামেলা আরও বেড়ে যায়।

আমি তখন হবিগঞ্জের কৃতি সন্তান ও সিলেটের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. দেবপদ রায়কে ফোন করে বিষয়টি জানাই। তিনি ভর্তিসহ সার্বিক ব্যবস্থা করবেন বলে আশ্বাস দেন। তখন আমাদের সকলের অনুরোধে সোয়েব নামে এক চালক মানবিক কারনে রাজি হয়। তার নাম্বার ম্যাসেজ করে প্রেরণ করি ডা. দেবপদ রায়কে।

এরপরও দেখা দেয় বিপত্তি। হাসপাতাল থেকে রিলিজ এর কাগজ দিতে বললে কর্তব্যরত নার্সরা রোগীর পক্ষে কাউকে দস্তখত দিতে বলে। হাসপাতালের কর্তব্যরত কয়েকজনকে দস্তখত দিয়ে অনুরোধ করলে কেউ রাজি হয়নি। পরে আমি, সাংবাদিক কাউসার, জীবন ও মশিউরসহ ৭/৮জনে দস্তখত দিয়ে রিলিজের কাগজ গ্রহণ করি। পরে সকলে মিলে তাকে ট্রলিতে করে নামানো হয়। এ সময় অজ্ঞাত যুবক কিছুটা নড়াছড়া করে। পরে এ্যাম্বুলেন্সে তুলে দেয়ার পর রাত সোয়া ৮টায় চালক সোয়েব একাকি অজ্ঞাত ওই যুবককে নিয়ে রওয়ানা হয় সিলেটের উদ্দেশ্যে।

এরই মাঝে ডা. দেবপদ রায় নিজেই ফোন করে রোগী রওয়ানা হয়েছে কিনা খবর নেন এবং কোন চিন্তার কারন নেই বলে জানান। তিনি বলেন, আমি ওসমানীর জরুরী বিভাগে চালক সোয়েব এর নাম বলে রেখেছি।

একজন অজ্ঞাত রোগীর চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে এত ভোগান্তি আসতে পারে তা আমার জানা ছিল না। যুবকটির যে অবস্থা তাতে করে সে সুস্থ হবে কি না তা অনিশ্চিত। তবে এই ক্ষুদ্র উদ্যোগ না নিলে রক্ত করন আর অবহেলায় বিনা চিকিৎসায়ই হয়ত মৃত্যু হত তার। তবে হাসপাতালে অনেক উদ্যমী যুবককে দেখেছি তারা রক্ত দিতে চায়। তাদেরও প্রত্যাশা রোগী যেন সুস্থ হয়। কিন্তু রোগীর জন্য বেশী কিছু করার সামর্থ নেই তাদের। আর যাদের দায়িত্ব এবং সামর্থ আছে তারা সযত্নে এড়িয়ে গেছেন অতিরিক্ত ঝামেলা মনে করে। জীবনে চলার পথে আমাদের যে কাউকে অজ্ঞাত হিসাবে কোন হাসপাতালে আশ্রয় হতে পারে। তখন আমাদেরও এই অবস্থা হতে পারে। এই মানবিক বিষয়টি রোটারীয়ানদের মনে নাড়া দেয়ায় একটি ভাল কাজের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার আনন্দ দিয়েছে আমাকে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো সংবাদ