• Youtube
  • English Version
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০১:১০ অপরাহ্ন

করাঙ্গী নিউজ
স্বাগতম করাঙ্গী নিউজ নিউজপোর্টালে। ১৫ বছর ধরে সফলতার সাথে নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন করে আসছে করাঙ্গী নিউজ। দেশ বিদেশের সব খবর পেতে সাথে থাকুন আমাদের। বিজ্ঞাপন দেয়ার জন‌্য যোগাযোগ করুন ০১৮৫৫৫০৭২৩৪ নাম্বারে।

আল্লামা তাফাজ্জুল হক হবিগঞ্জী একটি নাম, একটি ইতিহাস

  • সংবাদ প্রকাশের সময়: সোমবার, ৬ জানুয়ারী, ২০২০

সৈয়দ আনোয়ার আবদুল্লাহ: আল্লামা তাফাজ্জুল হক হবিগঞ্জী রহ আজ ৫জানুয়ারী রবিবার বিকালে তিনি পরম প্রিয় মাহবুবে হাকীকীর ডাকে সারা দিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন। ইন্না-লিল্লাহ ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

আল্লামা হবিগঞ্জী কেবল একজন ব্যক্তি ছিলেন না, তিনি ছিলেন একটি ইতিহাস। আমাদের মাথার উপর এক বিশাল ছায়াবৃক্ষ হিসাবে ছিলেন। একদিকে কিংবদন্তির শায়খুল হাদীস, অপরদিকে রঈসুল মুফাসসির। একদিকে ইসলামি আন্দোলনের নকীব, অপরদিকে সুলুক ও মা’রিফতের শায়েখ। দাওয়াতের ময়দানে এক মুখলেস দাঈ ইলাল্লাহ।

শায়খুল হাদীস ও শায়খুত তাফসির, হাফেজ আল্লামা তাফাজ্জুল হক হবিগঞ্জী রহ চলে যাওয়া মানে ইলমের আকাশ থেকে একটি উজ্জল নক্ষত্র খসে পর। হবিগঞ্জের মুহাদ্দীস সাহেব নামে যিনি মশহুর আপমর জনসাধারনের কাছে। সেই শৈশব থেকে তাঁকে যেমন দেখে আসছি ৩৫বছর বছর পরে এসে সেই কর্মবীর মনীষাকে আজও তেমনি দেখতাম।

হাফিজুল হাদীসে আল্লামা আব্দুল্লাহ দরখাস্তি রহ. শায়খুত তাফসির আল্লামা ইদ্রিস কান্দালভী র. হুজ্জাতুল ইসলাম আল্লামা রসূল খান র. ইমামুল মুহাদ্দিসীন আল্লামা ইউসুফ বিন্নুরী, শায়খুল মাশাইখ আল্লামা ফখরুদ্দীন মুরাদাবাদী রহ. দের হাতে গড়া আস্থাভাজন এই শাগরেদ সমকালীন সময়ে তাদের ইলম, ইরফান, খেদমত ও চেতনার প্রতিনিধিত্ব করছেন দৃঢ়ত্র সাথে।

আমাদের আকাবির আসলাফের জীবন্ত নমুনা ছিলেন তিনি। তিনি ক্লান্তিহীন ক্বালা ক্বালা হাদ্দাসানা… বলে হাদীসের মসনদে তাকরির দিতেন ঘন্টার পর ঘন্টা। দেশ-বিদেশে প্রতিদিন কোরআনের তাফসির করে বেড়িয়েছেন বিরামহীন। এলেমের এক বিশাল মহিরুহ ছিলেন সমকালীন এই মনীষা।

তিনি ছিলেন সাহাবা চরিত্রের এক প্রজ্জল মনীষা। ভেতরে বাহিরে এলেম আমল আর সাহসের এক অনন্য দৃষ্টান্তে। যেমন দাপুটে হাদিস বিশারদ, তেমনি ছিলেন শক্তিমান তাফসিরবিদ। আবার একইভাবে রাজ পথের লড়াকুবীর। আপোষহীন এক সিপাহসালার। বৃদ্ধ বয়েসেও নেতৃত্ব দিতেন হুইল চেয়ারে বসে উত্তাল মিছিলের। “হবিগন্জ ইসলামী সংগ্রাম পরিষদ” হযরতের সংগ্রামী জীবনের সবচেয়ে সফল আপোষহীন এক মাইল ফলক হিসাবে ইতিহাসে উজ্জল হয়ে থাকবে।

দেশপ্রেম আর সংগ্রাম -দ্রোহের এক বিপ্লবিক আর্দশ তিনি উজ্জীবিত এক লড়াকু বীর ছিলেন। প্রতিবাদ প্রতিরোধের এক অনন্য নাম ছিলেন আমাদের “হবিগন্জের মুহাদ্দীস সাব হুজুর”। দেশের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামের প্রথম কাতারে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন সেই পাকিস্তান আমল থেকে। তার নানা জ্ঞানতাপস ও সংস্কারক আল্লামা আসাদ উল্লাহ রহ ছিলেন তার অনুপ্রেরনা। হবিগন্জ অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সহায়ক শক্তি তার মামা রায়ধরের চেয়ারম্যান সাহেব মাওলানা মুখলেছুর রহমান সাহেবর হাত ধরেই সমাজ সংস্কার আর দেশ গঠনের অমোঘ মন্ত্রে উজ্জেবিত হন। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বলিষ্ট ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধের সহ সর্বাধিনায়ক মেজর জেনারেল এমএ রবের জানাজার নামাজ পড়ান তাঁর শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী আল্লামা তাফাজ্জুল হক রহ.।

দেশ স্বাধীনতা ও মাতৃকার এই অনন্য বীর ছিলেন রাজপত উত্তাল করেন সন্তাস জঙ্গিবাদের বিরোদ্ধে। সামজ্যবাদ ও আগ্রাসনের প্রতিবাদে। নাস্তিক বিরোধী আন্দোলনে তিনি ছিলেন এক মর্দে মুজাহীদ। অন্যায় অবিচারের বিরোদ্ধে তার হুংকারে মঞ্চ কাঁপত। তাঁর দরজ গলার সূর আর সাহসী উচ্চারন শরীরের বিদ্যুতের শিহরণ খেলে যপত। আল্লামা তাফাজ্জুল হক দামাত বারাকাতুহুমকে দেখলে চোঁখের সামনে ভেসে উঠে আমাদের অগ্নিপুরুষদের সংগ্রামী ছবি। তিনি যেন কুতবে আলম শায়খুল ইসলাম মাদানীর প্রতিচ্ছবি। আশরাফ শায়খুল হাদীস জাকারিয়া রহ এলমের গভীরতা।

হবিগঞ্জের স্বনামধন্য দ্বীনী শিক্ষা প্রতিষ্টান জামেয়া আরাবিয়া উমেদনগর ট্টাইটেল মাদরাসার মুহতামিম ছিলেন জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত। একটি “রোলাল ডিস্টিকে” বাস করেও উম্মুল মাদারিস হাটহাজারীর জলসাতে তিনি প্রধান অতিথি হয়ে আমন্ত্রিত হতেন। ঢাকার খতমে বোখারির মাহফিল গুলোতে তিনি হাদীসের আলো ছড়াতেন। সারা দেশে এক মহান শায়খুল হাদীস হিসাবে এক নামে শ্রদ্ধায় মহিয়ান ছিলেন। বিরল ব্যক্তিত্বের অধিকারী এই মনীষা দেশের গন্ডি পেরিয়ে আরব বিশ্ব, ইউরোপ আমেরিকাতে মাসের পর মাস তার দাওয়াতি ও ইসলাহী মাহফিল করতেন।

বিশ্বব্যাপি যার কর্মযজ্ঞ তাকে নিয়ে আমি অধম কতটুকোই বা লিখতে পারি। ইলমে ওহীর এই মহান মকবুল রাহবারকে কালির অক্ষরে মূল্যায়িত করার মতো আমার যোগ্যতা নেই। আমার বাবাও যাকে নিজের পরম দরদী মুরব্বি মনে করেন। যার কথা বলে চোঁখের পানি ফেলেন। ঢাকাতে আব্বা অসুস্থ অবস্থায় বেশ কয়েকবার কথা হয়েছে দুজনের। আব্বাকেও শায়েখ হবিগন্জী এতো বেশি মহব্বত করেন যে ফজর পরে খুব ভোরে নিজের গাড়ি নিয়ে হঠাৎ চলে আসতেন আমাদের গৃহে। এমন ঘটনা রয়েছে অনেক।

আমাদের বাড়ির বুর্যুর্গদের সাথে হযরতের রুহানী তায়াল্লুক এতোটাই গভীর যে, তিনি দরসে, মাহফিলে, বয়ানে সব সময় উত্তরসুরের বড় মিয়াসাব, ছোট মিয়াসাব দাদা হযরতজীদের স্মৃতি চারণ করে থাকেন। তার কৈশোর তারুন্যেরর বড় একটি অংশ কেটেছে এই ওলী ভ্রাতৃদ্ধয়ের সান্নিধ্যে। তাদের প্রজ্জল আর্দশের মহান আলোকবর্তিকা শায়খুল হাদীস তাফাজ্জুল হক রহ.।

জন্ম ও বংশ: ১৩৫৯ হিজরী মোতাবেক ১৯৩৮ সালে হবিগঞ্জ শহরের অদূরে ‘কাটাখালী’ গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে আল্লামা তাফাজ্জুল হক হবিগঞ্জী জন্মলাভ করেন। তার পিতা শাইখ আব্দুন-নূর রহ. ছিলেন বিজ্ঞ আলেম ও সমাজ সংস্কারক। তার নানা আল্লামা আসাদুল্লাহ রহ. বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের প্রথম সারির একজন মুজাহিদ ছিলেন।

শিক্ষাজীবন : অন্যদের মত তারও পড়াশোনার হাতেখড়ি পিতা-মাতার কাছেই। পিতা শাইখ আব্দুন-নূর রহ. ছিলেন একজন বিজ্ঞ আলিম ও সফল শিক্ষক। এরপর তিনি হবিগঞ্জের অদূরে রায়ধর গ্রামের ঐতিহাসিক মাদরাসা ‘জামিয়া সা’দিয়্যায়’ ভর্তি হন। সেখানে তিনি তার মামা আল্লামা মুখলিসুর রহমান রহ.(মৃত ১৪২২হি.) এর নিকট আরবী ব্যাকরণ ও আরবিভাষা রপ্ত করেন।

প্রাথমিক স্তরের পড়াশোনা শেষ করে তিনি উপমহাদেশের বিখ্যাত দীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘জামিয়া আহলিয়্যা মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসা’ চট্টগ্রামে গমন করেন। সেখানে তিনি ফিক্হ, উসূলে ফিক্হ, তাফসীর, উসূলে তাফসীর, হাদীস ও উসূলে হাদীস, মানতেক-ফালসাফাসহ ইসলামের বিভিন্ন শাখার গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞান অর্জন করেন। অবশেষে হাটহাজারী মাদরাসা থেকে ১৯৬০-৬১ইং সনে ‘দাওরায়ে হাদীস’ সফলতার সাথে সম্পন্ন করেন।

উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে পাকিস্তান গমন : জ্ঞান আহরণের সুতীব্র আকাঙ্খায় কিশোর তাফাজ্জুল ছুটে এসেছেন বাংলাদেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। সবশেষ পাড়ি জমিয়েছেন তৎকালীন সূদুর পশ্চিম পাকিস্তানে। সেখানে ঐতিহাসিক ইসলামী বিদ্যাপিঠ ‘জামিয়া আশরাফিয়া লাহোর’-এ আরো গভীরভাবে হাদীস অধ্যয়নের জন্য দ্বিতীয়বার দাওরায়ে হাদীস ক্লাসে ভর্তি হন। সময়টা ছিল-৬১-৬২ ঈসায়ী।

লাহোরে থাকাকালীন তিনি ‘খানকায়ে রায়পুরের’ (সাহারানপুর) প্রসিদ্ধ বুযুর্গ ও আল্লাহর ওলী শাইখ আব্দুল ক্বাদের রায়পুরী রহ. (মৃত. ১৩৮২হি.) এর ইসলাহী মজলিসে উপস্থিত হতেন। তাঁর খানকায় এক সপ্তাহ অবস্থানও করেছেন। তাঁর জানাযায়ও উপস্থিত হয়েছিলেন। এরপর তিনি খানপুরে গমন করেন। সেখানে উপমহাদেশের বিখ্যাত তাফসীরবিদ ও হাদীস বিশারদ হাফিযুল হাদীস আব্দুল্লাহ দরখাস্তী (মৃত.১৪১৫হি.) রহ.এর নিকট তাফসীরের বিশেষ পাঠ গ্রহণ করেন।

এরপর ‘জামিয়াতুল উলূমিল ইসলামিয়া করাচী’ মাদরাসায় বিশ্ববিখ্যাত হাদীস বিশারদ আল্লামা ইউসূফ বিনূরী রহ. (মৃত.১৩৯৭হি.) এর নিকট গমন করেন। তার কাছে তিনি তিনটি বিষয় ও কিতাবের বিশেষ দরস গ্রহণ করেন।

যথা-ক. বিষয়: হাদীস শাস্ত্র। কিতাব: সহীহুল বুখারী। খ. বিষয়: শরীয়তের বিধানের বিভিন্ন রহস্য ও ভেদ। কিতাব: হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা। গ.বিষয়: তাফসীরুল কুরআনিল কারীম। এভাবে তিনি পূর্বোক্ত আল্লামা আব্দুল্লাহ দরখাস্তী রহ. ও আল্লামা বিনূরী রহ.এর কাছে দরস গ্রহণের মাধ্যমে তাফসীর শাস্ত্রে বিশেষ বুৎপত্তি লাভ করেন। এখানে তিনি কয়েক মাসের মত ছিলেন।

ভারত গমন : এরপর তিনি ভারতের বিখ্যাত মাদরাসা ‘দারুল উলূম দেওবন্দ’ গমন করেন। দেওবন্দ গমনের পথে অনাকাঙ্খিত ভাবে তিনি তাবলীগ জামাতের বড় মুরুব্বী ও দাঈ আল্লামা ইউসূফ ইবনে ইলইয়াস কান্ধলভী রহ. এর সঙ্গ লাভে ধন্য হন। এক সফরেই তাঁর সাথে হযরতের হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

হযরতের আবেদনে আল্লামা ইউসূফ কান্ধলভী রহ. হযরতকে সাহারানাপুরে শাইখুল হাদীস যাকারিয়া রহ.এর সোহবতে পৌঁছিয়ে দেন। তিনি শাইখুল হাদীস ছাহেবের সোহবতে দশদিনের মত ছিলেন। এখানে অবস্থানকালীন সময়ে তিনি শাইখের সহীহুল বুখারীর দরসেও উপস্থিত হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন।

এরপর আল্লামা ইউসূফ কান্ধলভী রহ.-ই হযরতকে দারুল উলূম দেওবন্দে নিয়ে যান। দেওবন্দে তিনি ফেদায়ে মিল্লাত আসআদ মাদানী রহ.এর মেহমান হয়ে ধন্য হন। এখানে তিনি ঐতিহাসিক ‘মাদানী মনযিলে’ মেহমান হিসাবে অবস্থান করেন।

আল্লাহর কুদরতের কী কারিশমা! মাত্র একটি সফরে তিনি পৃথিবী বিখ্যাত কয়েকজন মনীষীর সান্নিধ্য পেয়ে গেলেন। সবই তাক্বদিরের ফায়সালা। আল্লাহ পাক যাকে বড় করতে চান তাকে এভাবেই পর্দার আড়াল থেকে গড়ে তুলেন তিলে তিলে। একসময় তা ফুল হয়ে সুবাস ছড়ায় পৃথিবীর বুকে।

দারুল উলূম দেওবন্দে তখন পাকিস্তানী কোন ছাত্র ভর্তি হওয়ার নিয়ম ছিল না। এদিকে ভর্তির সময়ও শেষ। এই দুই কারণে তিনি ভর্তি না হয়ে তৎকালীন মুহতামিম (প্রিন্সিপাল) ক্বারী তৈয়ব ছাহেব রহ.এর অনুমতিতে ‘খুসূসী দরস’ (বিশেষ পাঠ) গ্রহণ করেন। জামে তিরমিযী পড়েন শাইখ ইবরাহীম বলিয়াভী রহ.এর নিকট। তাফসীরে বায়যাবী পড়েন আল্লামা ফখরুল হাসান মুরাদাবাদী রহ.এর নিকট। তখন ক্বারী তৈয়ব ছাহেব রহ.এর হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগার-দরসেও উপস্থিত হয়েছেন। এভাবে ‘খুসূসী দরস’ শেষ করে বার্ষিক পরীক্ষার আগেই ১৯৬৩ সালে দেশে ফিরে আসেন।

কর্মজীবন : কড়মজীবনের শুরুতে কুমিল্লার দারুল উলূম বরুড়া মাদরাসা : ‘পাকিস্তান ও ভারতে পড়ালেখা শেষ করে দেশে ফিরে প্রথমে কুমিল্লার দারুল উলূম বরুড়া মাদরাসায় শিক্ষকতা শুরু করেন। ৬৪-৬৬ ঈ. মোট তিন বছর এ মাদরাসায় হাদীস, তাফসীর ও ফুনূনাতের বিভিন্ন কিতাবের দরস দান করেন।

আশরাফুল উলূম বালিয়া মাদরাসা : এরপর ৬৬ ঈ. সনের শেষে ময়মনসিংহের আশরাফুল উলূম বালিয়া মাদরাসার শাইখুল হাদীস মাওলানা মোহাম্মদ আলী ছাহেব কিশোরগঞ্জের মাওলানা আতহার আলী ছাহেবের মাদরাসায় চলে যান। ৬৯ ঈ. সন পর্যন্ত মোট তিন বছর বালিয়া মাদরাসায় ছিলেন।

জামিয়া ইসলামিয়া ময়মনসিংহ : ১৯৬৯-৭১ ঈ. ১৬ ডিসেম্বরের পূর্ব পর্যন্ত ময়মনসিংহ জামেয়া ইসলামিয়ায় দরসে হাদীসের খেদমতের সুযোগ হয়েছে। এখানেও তিন বছর শিক্ষকতা করেন।

জামেয়া আরাবিয়া উমেদনগর, হবিগঞ্জ : ৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর এলাকাবাসী ও মুরুব্বীদের অনুরোধে হবিগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী জামেয়া আরাবিয়া উমেদনগর মাদরাসায় যোগদান করেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্তবএর মুহতামিম ও শায়খুল হাদীস ছিলেন।

বৈবাহিক জীবন : ময়মনসিংহের বিখ্যাত আলিম মাওলানা আরিফ রব্বানী রহ.(১৯৯৭ইং) এর কন্যাকে ১৯৬৭ ইং সনে বিবাহ করেন। হযরতের ৫ ছেলে ও ৪ মেয়ে। সবাই যোগ্য আলিম ও আলিমা হয়ে দ্বীনের বিভিন্ন খেদমত আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন।

বাইতুল্লাহর যিয়ারত : আল্লাহর রহমতে হযরতের বহুবার হজ্জ ও উমরা করার সুযোগ হয়েছে। সর্বপ্রথম ৭৫ সালের শেষ দিকে বাইতুল্লাহর যিয়ারতের জন্য রওয়ানা হন। হজ্ব হয়েছিল ৭৬ এর শুরুতে। অসংখ্যবার তিনি হজ্জ করেছেন।

আধ্যাত্মিক সাধনা ও খেলাফত লাভ : হযরত হবিগঞ্জী সাহেব জীবনের দীর্ঘ সময় বিভিন্ন মনীষীদের সান্নিধ্য থেকে আধ্যাত্মিক সাধনায় ব্রতী হন। সর্ব প্রথম তিনি মুফতী আযম শাইখ ফায়যুল্লাহ রহ.এর নিকট বায়আত হন। এরপর হযরতের ইন্তেকালের পর সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার বৃহত্তর রেঙ্গা এলাকার প্রখ্যাত বুযুর্গ, খলিফায়ে মাদানী আল্লামা বদরুল আলম শায়খে রেঙ্গা (মৃত.১৯৮৫হি.) রহ. এর নিকট বায়আত হন।

তিনি শাইখুল ইসলাম হুসাইন আহমদ মাদানী রহ. এর ছাত্র ও খলীফা ছিলেন। দীর্ঘদিন রিযায়ত-মুজাহাদা করেন। এরপর এক সময় শাইখ রেঙ্গা রহ. ইজাযত ও খেলাফত দান করেন। অধ্যাপনা ও অধ্যয়নের পর হযরতের সময় কাটে ইবাদত-বন্দেগীর মধ্যে দিয়ে। বিশেষত রমযান মাসে হযরতের রাত জাগা ও ইবাদত বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। রমযান মাসে দীর্ঘদিন যাবত তাহাজ্জুদের সময় নিজে কয়েক খতম কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করেন।

রাজনৈতিক জীবন : তিনি শুরু থেকেই ইসলামী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের তিনি ‘সিনিয়র সহ সভাপতি’ ছিলেন। আর হবিগঞ্জ জেলার প্রধানের দায়িত্বে নিযুক্ত হন।

রচনাবলী : ছাত্র জীবন থেকেই তার লেখালেখি শুরু হয়। তবে বেশ কিছু রচনা হারিয়ে যায়। এখন পর্যন্ত তাঁর লিখিত যেসব গ্রন্থ পাওয়া য়ায় সংক্ষেপে তা হল-

১. تحذير الإخوان عن صحبة الأمارد والصبيان (ছোট বাচ্চাদের সাথে মিলামিশা করা থেকে সতর্কিকরণ) পুস্তিাকার উপর মুফতী আযম ফায়যুল্লাহ রহ. ও শাইখ কুরবান আলী রহ.এর অভিমত লেখা আছে। মূল গ্রন্থটি উর্দূতে লেখা। আজ থেকে অন্তত ৫০ বছর আগের রচনা।

২. اقتناص الشوارد في صحبة الأمارد এটি প্রথম পুস্তিকার আরবী সংস্করণ। পুস্তিকাটি আমার সংগ্রহে আছে। এটিও অন্তত ৫০ বছর আগে একবার ছেপেছে। এরপর আর ছাপেনি।

৩. جواهر الأدب في لسان العرب এটি আরবী ভাষায় কাছাকাছি বিভিন্ন শব্দের আভিধানিক পার্থক্যের উপর লিখিত এক অনবদ্য গ্রন্থ। গ্রন্থটি প্রায় আড়াইশ পৃষ্ঠার। হযরতের ছোট জামাতা বন্ধুবর মাওলানা তাহমিদুল মাওলার টীকা ও সম্পাদনায় গ্রন্থটি ছেপেছে। প্রকাশক: মাকতাবাতুল আযহার, ঢাকা । প্রকাশকাল: ২০১৩ ইং., মার্চ।

৪. হয়রত লুকমান আ.এর সতর্কবাণী।

৫. হাফিযুল হাদীস আল্লামা আব্দুল্লাহ দরখাস্তী রহ.এর জীবনী।

৬. দরসে হুজ্জাতুল্লাহ। এটি আমাকে দেয়া হযরত হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা কিতাবের এক দূর্লভ দরসের সংকলন।

আল্লামা তাফাজ্জুল হক রহ. ছিলেন মুসলিম উম্মাহর মহান রাহবার। এদেশের চিন্তাশীল আলেমদের এক দরদী অভিভাবক। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশের ইলম ও ইসলামের আকাশে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে তা কখনো পূরণ হবার নয়। মুসলিম বিশ্ব হারাল এক মহান বুজুর্গ আলেমেদ্বীনকে।

হে দয়াময়, হযরতের কবরকে নূর দিয়ে ভরে দিন। জান্নাতের সুউচ্চ মাকাম দান করুন। আমীন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো সংবাদ