শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০২ অপরাহ্ন
করাঙ্গীনিউজ: ‘আমার ছিল না মুক্ত মাতৃভূমি/শৃঙ্খলহীন স্বাধীন দেশ;/শত বর্ষের শত সাধনায়/পেয়েছি তোমায় বাংলাদেশ।’ ‘বিজয়ের গান’ কবিতায় কবি নির্মলেন্দু গুণ এভাবেই বাংলাদেশের জন্মের কথা বলেছেন, বিজয়ের কথা বলেছেন।
আজ মহান বিজয় দিবস। বাঙালির জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জনের দিন। আজ বাংলার আকাশে-বাতাসে ধ্বনিত হবে ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’। বিজয়ের গৌরবে গৌরবান্বিত বাঙালি এবারের বিজয় উৎসব পালন করবে আরও বিস্তৃত পরিসরে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর যারা তাদের মধ্যে ১০ হাজার ৭৮৯ রাজাকার, আলবদর ও আলশামসের নাম রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। আজ বিজয়ের দিনে শপথ নেয়া হবে এখনও যারা কাদের মোল্লাদের ‘শহীদ’ বলে তাদেরও মূলোৎপাটন করা হবে। বিজয়ের আনন্দ মিছিলে ভেসে যাবে সব স্বাধীনতাবিরোধীর কূটচাল।
মহান বিজয় দিবস ঊপলক্ষে পৃথক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রাক্কালে দেশ, গণতন্ত্র ও সরকারবিরোধী সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের এই উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য এ বিজয় দিবসে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে।’
দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও।
মহান বিজয় দিবসে বাংলার মানুষ আরও একবার ফিরে যাবে ১৯৭১ সালের সেই দিনে। আজকের দিনেই যে নয় মাসের জঠর-যন্ত্রণা শেষে জন্ম নেয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। প্রায় ৯২ হাজার পাকিস্তানি বাহিনী ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) আত্মসমর্পণের মাধ্যমে সূচিত হয়েছিল সেই কাক্সিক্ষত বিজয়। আজ ভোরে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের সূচনা ঘটবে। লাখো মানুষের গন্তব্যস্থল হবে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ। সেখানে শহীদদের প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা জানাবে সবাই। দিনভর বাংলার পথে-প্রান্তরে মানুষ বিজয়ের আনন্দ উপভোগ করবে। একইভাবে তারা স্মরণ করবে মহান মুক্তিযুদ্ধের সব শহীদকে। স্থানে স্থানে তৈরি করা হবে বিজয়ের মঞ্চ। সেখানে চলবে বিজয় দিবসের কবিতা, গান, আবৃত্তি।
জাতি আজ স্মরণ করবে স্বাধীনতা সংগ্রামের মহান নায়ক বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে আরও দৃঢ়প্রত্যয়ী হবে নতুন প্রজন্ম। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজারেও শ্রদ্ধা জানাবে লাখো মানুষ। কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করা হবে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী বন্ধুরাষ্ট্র ভারতকে, যারা সে সময় এক কোটি মানুষকে আশ্রয়, মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং আর সাহস জুগিয়েছিল।
আজ সরকারি ছুটির দিন। যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি উদযাপনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা ওড়ানো হয়েছে। ঘরে ঘরে উড়বে লাল-সবুজ পতাকা। সূর্যোদয়ের সময় সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের অমর স্মৃতির প্রতি জাতির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শ্রদ্ধা জানান জাতীয় নেতারাও। বিজয় দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে জাতীয় সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করেছে বিশেষ ক্রোড়পত্র। বাংলাদেশ বেতার, বিটিভি, বেসরকারি রেডিও এবং টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হচ্ছে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। ইতিমধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কদ্বীপ, প্রধান সরকারি ভবন, প্রতিষ্ঠানে আলোকসজ্জা করা হয়েছে।
দেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, বিজয় শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা, স্বাধীন বাংলা বেতার ও দেশবরেণ্য শিল্পীদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজন করা হয়েছে।
বিজয় দিবসের কর্মসূচি : মহান বিজয় দিবস উদযাপনে জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। আজ প্রত্যুষে ঢাকায় ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে উপস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।
বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি কূটনীতিক, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। সকাল সাড়ে ১০টায় তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে সম্মিলিত বাহিনীর বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমভিত্তিক যান্ত্রিক বহর প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রপতি এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করবেন। প্রধানমন্ত্রীও এই কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।
সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। রাজধানীসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোর প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপ জাতীয় পতাকায় সজ্জিত করা হবে। রাতে গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনায় করা হবে আলোকসজ্জা। হাসপাতাল, কারাগার ও এতিমখানাগুলোতে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। এছাড়া দিবসটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।