• Youtube
  • English Version
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১২:১৫ অপরাহ্ন

করাঙ্গী নিউজ
স্বাগতম করাঙ্গী নিউজ নিউজপোর্টালে। ১৫ বছর ধরে সফলতার সাথে নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন করে আসছে করাঙ্গী নিউজ। দেশ বিদেশের সব খবর পেতে সাথে থাকুন আমাদের। বিজ্ঞাপন দেয়ার জন‌্য যোগাযোগ করুন ০১৮৫৫৫০৭২৩৪ নাম্বারে।

চুনারুঘাটের বধ্যভূমিগুলো আজও চিহ্নিত করা হয়নি

  • সংবাদ প্রকাশের সময়: শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯

আবুল কালাম আজাদ, চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ):
আজ ১৪ ডিসেম্বর। শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস। স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত সীমান্তবর্তী এ উপজেলার বিসর্জন অনেক। এখনও এখানে জীবিত আছেন ৫ শতাধিক বীর মুক্তিযোদ্ধা। তাদের মধ্যে একজন বীর উত্তম এখনও বেঁচে আছেন।

যুদ্ধে শহীদ ৩ বীর বিক্রম, বীর প্রতীক ও বীর উত্তমের কবর চিহ্নিত করা হলেও পাহাড়ী ও চা বাগানের অভ্যান্তরে অযত্নে আর অবহেলায় পড়ে আছে তাদের স্মুতিচিহ্ন।

অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতিস্থল বধ্যভূমিগুলো এখনও চিহ্নিত করা যায়নি। দখলে চলে যাচ্ছে যুদ্ধের নানা স্মৃতিবিজরিতস্থানগুলো। এনিয়ে জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের আক্ষেপ অনেক দিনের। বিজয় দিবস আর স্বাধীনতা দিবস ছাড়া তাদের আর কখনোই স্মরণ করা হয়না।

হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলায় স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ বীর বিক্রম, বীর প্রতিক, বীর উত্তমসহ অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যার স্থান ৭টি বধ্যভূমি রয়েছে। স্থানীয় ভাবে স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে বীর বিক্রম, বীর উত্তম ও বীর প্রতীকের কবরে ফুল দেওয়ার বিধান রয়েছে। এছাড়া উপজেলার ৭টি বধ্যভুমির খবর কেউ রাখে না। প্রতি বছর স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে এসব বধ্যভূমি চিহ্নিত করণ ও সংরক্ষনের দাবী উঠে। এরপর সবাই ভুলে যায় স্বাধীনতা যুদ্ধে জীবণদানকারী এসব মুক্তিযোদ্ধাদের কথা। ফলে স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরও দেশ ও জাতি জানতে পারেনি চুনারুঘাটের এসব বধ্যভূমির কথা।

উপজেলা সীমান্তবর্তী হওয়ার কারণে মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা জেলার অন্য যে কোন উপজেলার চেয়ে বেশি। বর্তমানেও উপজেলায় প্রায় ৫’শ ৫০জন মুক্তিযোদ্ধা জীবিত রয়েছেন। তবে এ পর্যন্ত কতজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ কিংবা মারা গেছেন তার হিসাব কারো কাছে নেই।

লালচান্দ চা বাগানে রয়েছে ১১ জন শহীদদের স্মরণে নির্মিত উপজেলার একমাত্র স্মৃতিস্তম্ভ। ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে এটা নির্মিত হয়। বাগান কর্তৃপক্ষ একবার এটাকে রং করে দিয়েছিল। একমাত্র স্মৃতিস্তম্ভ হওয়া সত্বেও এর প্রতি কারো কোন নজর নেই। গরু ছাগল চড়ে এর চার পাশে। চা বাগানের ভেতরে হওয়ার কারণে স্মৃতিস্তম্ভটিতে কেউ কোন দিন যান না। স্থানীয় চেয়ারম্যান ও বাগান কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব দেওয়া হয় বছরে দু’বার ফুল দেওয়ার জন্য। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারাও দলাদলির কারণে কোন দিন যান না এসব শহীদের কবর কিংবা স্মৃতিস্তম্ভে।

এদিকে উপজেলার ৭টি বধ্যভূমি আজো চিহ্নিত করা যাযনি। ঐ বধ্যভূমিতে নিহতদের স্মরণে নির্মিত হয়নি কোন স্মৃতিস্তম্ভ।

এগুলো হলো- উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের দিঘিরপাড়। এখানে পাক হায়েনারা অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতাকামীদের ধরে এনে হত্যা করেছে। যার পরিসংখ্যান কারো কাছে নেই।

উপজেলার আহমদাবাদ ইউনিয়নের আমুরোড গোছাপাড়া এলাকার পাল বাড়ি ও ধোপা বাড়িতে পাক সেনারা হত্যা করে ৮জন মুক্তিযোদ্ধাসহ ২২ জন গ্রামবাসীকে। তাদের মধ্যে আঃ রশিদ, রৌশন আলী, নিপিন পাল, হরেন্দ্র পাল, রাখাল পাল, অক্ষয় শুক্লবৈদ্য, যতিন্দ্র শুক্লবৈদ্য, বজ্রেন্দ্র পাল, টেনু শুক্লবৈদ্য ও সুরেন্দ্র আচার্য্য।

উপজেলার পৌর শহরের উত্তর বাজার এলাকায় মরা খোয়াই নদীর পাশে হত্যা করা হয় অসংখ্যা মুক্তিকামী মানুষকে। বড়াইল গ্রামের হিন্দু পরিবারের ৫ জনকে একসাথে হত্যা করা হয় এস্থানে। তারা হলেন বড়াইল গ্রামের যোগেন্দ্র চন্দ্র সরকার, মহেশ চন্দ্র সরকার, রমেশ চন্দ্র সরকার, নৃপেন চন্দ্র সরকার, ডাঃ অশোক মাধব রায়সহ অনেকেই। এ স্থানটি এখন প্রভাবশালীদের দখলে চলে যাচ্ছে।

উপজেলার দেউন্দি-শায়েস্তাগঞ্জ সড়কের সাদীপুর নামক স্থানে হত্যা করা হয় ১৯ গ্রামবাসীকে। তাদেরকে উপজেলার ফুলপুর গ্রাম ও লালচান্দ চা বাগান থেকে পাক সেনারা ধরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে। সাদীপুর বধ্যভূমিতে তারা আজো শায়িত। উপজেলার নালুয়া চা বাগানের ধরমনাথ এলাকায় ১৭ জন চা শ্রমিককে হত্যা করে কুয়ার মধ্যে পেলে রাখে পাক সেনারা। এখানে করা হয়েছে চা বাগান। এছাড়া উপজেলার টেকারঘাট গ্রামে হত্যা করা আরো অনেককে।

উপজেলার এ ৭টি বধ্যভূমি চিহ্নিত করা কিংবা সংরক্ষন করার উদ্যোগ আজো নেওয়া হয়নি। স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি আওয়ামী সরকারও এসব বধ্যভূমি চিহ্নিত করে রক্ষার দায়িত্ব পালন করেনি। দেশ ও জাতী জানতে পারেনি চুনারুঘাটের এ ৭টি বধ্যভূমির কথা।

এ ব্যাপারে চুনারুঘাট মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার আঃ গাফ্ফার বলেন, যুদ্ধে যারা প্রাণ হারিয়েছেন, যারা দেশের জন্য জীবণ দিয়েছেন তাদের কবর আজো চিহ্নিত হয়নি। এটা আমাদের সকলের ব্যর্থতা। তিনি বধ্যভূমিগুলো রক্ষার জন্য সরকারের কাছে দাবী জানান।

তিনি বীর সেনাদের কবরগুলো সংরক্ষনের দাবী জানিয়ে বলেন, আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে স্বাধীনতার ইতিহাস জানাতে এসব কবর ও বধ্যভূমি রক্ষা করা প্রয়োজন।

সাবেক কমান্ডার আঃ সামাদ বলেন, আমরা বার বার বধ্যভুমি চিহ্নিত করা এবং এগুলো সংরক্ষনের দাবী জানিয়ে আসছি। কিন্তু কেউ এ বিষয়ে এগিয়ে আসেনি। উপরোন্ত এসব বধ্যভুমি দখলের চেষ্ঠা করছে নানা মহল।

এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সত্যজিত রায় দাশ বলেন, আমরা এসব বধ্যভূমি চিহ্নিত ও সংরক্ষনের জন্য সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত ভাবে জানিয়েছি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো সংবাদ